শূন্যস্থান

পদার্থের খালি বা ফাঁকা স্থান

শূন্যস্থান (ইংরেজি: Vacuum) হল পদার্থের খালি বা ফাঁকা স্থান। বায়মন্ডলীয় চাপের তুলনায় অনেক কম বায়বীয় চাপের এলাকাই হল শূন্যস্থান।পদার্থবিদরা প্রায়ই শূন্যস্থানে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলকে আদর্শ বিবেচনা করেন এবং পরীক্ষাগারের অপরিপূর্ণ শূন্যস্থানকে বোঝাতে “আংশিক শূন্যস্থান” শব্দটি ব্যবহার করেন। অপরদিকে প্রকৌশল ও ফলিত পদার্থবিদ্যায় বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তুলনায় কম চাপের যে কোন স্থানকেই শূন্যস্থান বলে।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিজ্ঞানশিক্ষায় শূন্যস্থান পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত বায়ুশূন্যকারক নিষ্কাশনী যন্ত্র বা "পাম্প" ও ঘণ্টা বয়াম।

আদর্শ শূন্যস্থানের কতটা কাছাকাছি আছে তার উপর আংশিক শূন্যস্থানের মান নির্ভর করে। অন্যদিকে নিম্ন গ্যাস চাপকে উচ্চগুণের শূন্যস্থান বলে। যেমন, একটি সাধারণ শূন্যস্থান পরিষ্কারক ২০% বায়ুচাপ কমিয়ে যথেষ্ট শোষণ তৈরি করতে পারে। এর থেকেও উচ্চগুণের শূন্যস্থান সম্ভব। রসায়ন, পদার্থবিদ্যাপ্রকৌশলের অতি উচ্চ শূন্যস্থানের কক্ষ ১০০ nPa বায়ুমন্ডলীয় চাপের নিচে কাজ করতে পারে এবং প্রতি ঘনসেন্টিমিটারে ১০০ কণার পর্যায়ে পৌছতে পারে। মহাশূন্য হল উচ্চগুণের শূন্যস্থান যেখানে গড়ে প্রতি ঘনমিটারে অল্প কিছু হাইড্রজেন অণু থাকে । আধুনিক ধারণা অনুযায়ী কোয়ান্টাম অস্থিরতা, তমোশক্তি, গামা রশ্মি, মহাজগতিক রশ্মি , নিউট্রিনোর গমনাগমন এবং কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার অন্যান্য ব্যাপারের কারণে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের স্থান থেকে সব পদার্থ বের করে নিলেও তা শূন্য হবে না। ঊনবিংশ শতকের তড়িৎচুম্বকত্ব তত্ত্ব অনুযায়ী শূন্যস্থান বলতে ইথার নামক অজানা পদার্থে পূর্ণ মাধ্যমকে বোঝাত। আধুনিক কণাপদার্থবিদ্যায় শূন্যাবস্থা বলতে পদার্থের নিম্ন অবস্থাকে বোঝায়।

প্রাচীন গ্রীসে শূন্যস্থান দার্শনিক বিতর্কের একটি জনপ্রিয় বিষয় ছিল, কিন্তু ১৭ শতকে এসেই বিষয়টির ওপরে তাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। এভাঞ্জেলিস্টা টরিসিলি ১৬৪৩ সালে সর্বপ্রথম পরীক্ষাগারে শূন্যস্থান তৈরি করেন। তার বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বিষয়ক তত্ত্বের পর অন্যান্য ব্যবহারিক কৌশল বের হয়। তিনি একটি লম্বা গ্লাসনল পারদ দ্বারা পূর্ন করে নলের খোলা প্রান্ত পারদের বাটিতে ডুবিয়ে টরিসিলিয়ান শূন্যস্থান তৈরি করেন।

একটি বিশাল বায়ুশূন্য কক্ষ

২০ শতকে ভাস্বর বাতি এবং বায়ুশূন্য নলের পরিচিতির পর শূন্যস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প উপাদানের পরিণত হয় এবং বায়ুশূন্য প্রযুক্তির একটি বিশাল দুয়ার উন্মোচিত হয়। মানবমহাকাশযাত্রার বর্তমান উন্নয়ন , মানবস্বাস্থ্য এবং সাধারণ জীবন ধারণে বায়ুশূন্য স্থানের প্রভাব সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেছে।

ব্যাকরণ সম্পাদনা

শূন্যস্থান শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ vacuus(একটি ফাঁকা স্থান, অকার্যকর),vacuus এর বিশেষ্য এর ক্লীব ব্যবহার, যার অর্থ "খালি",যা vacare (খালি করা)  এর কাছাকাছি। 

ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা সম্পাদনা

সর্বপ্রথম পরীক্ষাগারে টেকসই শূন্যস্থান তৈরি করে, টরিসিলির পারদ ব্যারোমিটার।

ঐতিহাসিকভাবেই, শূন্যস্থানের অস্তিত্ব নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকেরা শূন্যস্থানের অস্তিত্ব,পরমানুবাদ প্রসঙ্গে শূন্যস্থান এবং অনুকে পদার্থের ব্যাখ্যামূলক গাঠনিক উপাদান এইসব বিষয়গুলোকে সত্য বলে মেনে নেয়া, নিয়ে বিতর্ক করতেন । প্লেটো অনুসারে, একটি বৈশিষ্ট্যহীন ফাঁকা স্থানের গুরুত্বপূর্ণ সংশয়বাদের বিমূর্ত ধারণাঃ একে ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা যায় না ,নিজেই এর প্রকৃত আকার অতিক্রম করে অতিরিক্ত ব্যাখ্যামূলক ক্ষমতা প্রদান করতে পারে না, সংজ্ঞানুসারে,এটা সব সময়ে আক্ষরিক অর্থেই কিছুই ছিল না,যার অস্তিত্ব আছে কিনা উপযুক্তভাবেই বলা যাবে না। এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন শূন্যস্থান প্রাকৃতিক ভাবে সম্ভব নয়,কারণ কোন স্থানের ঘনত্বের কারণে কিছু সরালে আশেপাশের বস্তু এসে অই স্থান পুরন করবে,ফলে শূন্য স্থানে পৌছানো যাবে না।

তার পদার্থবদ্যার চতুর্থ বইয়ে, অ্যারিস্টটল অকার্যকর বিরুদ্ধে অনেক যুক্তিতর্ক দিয়েছেন:যেমন বাধা ছাড়া কোন মাধ্যমে গতি অসীম হবে, কোথাও থামার জন্য নির্দিষ্ট কোন কারণই নেই। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে লুক্রেতিউস শূন্যস্থানের অস্তিত্ব নিয়ে তর্ক করেছিলেন। আলেকজাদ্রিয়ার নায়ক কৃত্রিম শূন্যস্থান তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করেন। এই বিষয়ে ১৩ ও ১৪ শতকে ইউরোপিয়ান পণ্ডিত রজার বেকন, পার্মার ব্লাসিয়াস এবং ওয়াল্টার বারলে বেশ ভালভাবেই নজর দেন। ১৪ শতকের পরে পণ্ডিতেরা এরিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে মহাজাগতিক ব্যাপারে বেশ কিছু ধারণা অর্জন করেন যা পরবর্তীতে ১৭ শতকের পণ্ডিতদের প্রাকৃতিক ও তাত্ত্বিক চিন্তাকে পৃথক করতে সাহায্য করেছে।

প্লেটোর প্রায় ২ হাজার বছর পর, রেনে দেকার্ত শূন্যস্থান ও পরমাণুর মধ্যে অনিশ্চিত দ্বিবিভাজন ছাড়া জ্যামিতিক বিকল্প পরমাণুবাদের প্রস্তাব করেন। দেকার্ত সমসাময়িক অবস্থানের সঙ্গে একমত হলেও, তার কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থার সাফল্যের পর এবং আরো পরোক্ষভাবে তার অধিবিদ্যার স্থানিক-আধিভৌতিক উপাদান, শূন্যস্থানের আয়তনকে দার্শনিকভাবে আধুনিক ধারণা অনুযায়ী একটি সংখ্যায় ব্যক্ত পরিসর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিল। প্রাচীন সংজ্ঞানুসারে যদিও নির্দেশমূলক তথ্য এবং মাত্রার ধারণার দিক থেকে স্বতন্ত্র ছিল। কার্টেসিয়ান যান্ত্রিক দর্শনের মৌনসন্মতি সঙ্গে দূরত্বে ও ব্যাপ্তিতে কর্মের "অনার্জিত সত্য" বল ক্ষেত্রের দ্বারা এর সফল প্রতিফলন পেয়েছিল এবং কখনও আরো পরিশীলিত জ্যামিতিক গঠন, ২০ শতকে কোয়ান্টাম কার্যকলাপের "একটি ফুটন্ত গরম জলভর্তি গাঁজ" না আসা পর্যন্ত খালি স্থানের কালব্যতিক্রম প্রশস্ততা অলিক প্ল্যারোমা দ্বারা শুন্যস্থান পূর্ন হয়েছিল।

 মধ্যযুগে পানি ঘড়ির ব্যাখ্যা একটি জনপ্রিয় বিষয় ছিল। যদিও নীতিগতভাবে একটি সরল ওয়াইন ত্বক একটি আংশিক ভ্যাকুয়াম প্রদর্শন করতে যথেষ্ট । রোমান পম্পেই নীতিগতভাবে শোষণ পাম্পকে অনেক উন্নত শোষণ পাম্পে উন্নীত করেন।

মধ্যযুগে মধ্যপূর্ব বিশ্বে পদার্থবিদ এবং ইসলামিক পণ্ডিত আল-ফারাবি ( ৮৭২ – ৯৫০) শূন্যস্থানের অস্তিত্ব নিয়ে কিছু ছোট পরীক্ষা পরিচালনা করেন শূন্যস্থানের অস্তিত্ব বিষয়ে, যেখানে পানিতে হাতেধরা পিচকারির ডাঁটি পরীক্ষা করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন বায়ু বর্ধিত হয়ে খালি আয়তন পূর্ণ করতে পারে এবং সুপারিশ করেন আদর্শ শূন্যস্থানের ধারণা অনিশ্চিত। যদিও নাদের আল-বিয্রি অনুসারে ,পদার্থবিদ হাসান ইবনে আল-হাইসাম (৯৬৫–১০৩৯) এবং মুতাজিলা কালাম এরিস্টটল ও আল ফারাবির সাথে দ্বি-মত পোষণ করেন এবং তারা শূন্যস্থানের অস্তিত্বকে সমর্থন করেন। জ্যামিতি ব্যবহার করে  ইবন আল-হায়থাম গাণিতিকভাবে স্থানের ধারণা ধারকদেহের ভিতরের তলে ত্রিমাত্রিক শূন্যস্থানে প্রদর্শন করেন। আহমাদ দালাল অনুসারে আবু রায়হান আল বিরুনি বলেন যে “শূন্যস্থানের সম্ভাবনার কোন দর্শনযোগ্য প্রমাণ নেই”। পরবর্তিতে ১৫ শতকে শোষণ পাম্প ইউরোপে আসে। 

মধ্যযুগে চিন্তা করা হত দুটি সমতল পাতকে দ্রুত আলাদা করা হলে পাতদ্বয়ের মধ্যে শূন্যস্থান তৈরি হতে পারে। যদিও পাতদ্বয় সরানোর সাথে সাথে বায়ু এসে পরবে। ওয়াল্টার বারলে দাবি করে স্বর্গীয় শক্তি শূন্যস্থানের সৃষ্টিকে বাধা প্রদান করে। সচরাচর অনুষ্ঠিত দৃষ্টভঙ্গি যে প্রকৃতি একটি ভ্যাকুয়াম চরমভাবে ঘৃণা করে যাকে ভয়াবহ ভাসুই বলা হয়েছিল। ১২৭৭ এ প্যারিস কনডেমনেশন্স এর বিশপ এটিয়েন টেম্পিয়ার বলেন ইশ্বর চাইলে শূন্যস্থান তৈরি করতেন,সেখানে ঈশ্বরের ক্ষমতার কোন সীমাবদ্ধতা হতে পারে না। ১৪ শতকে জিন বার্ডেন বলেন যে দশটি ঘোড়ার একটি দল মুখ বন্ধ হাঁপর টেনে খুলতে পারে না। 

সতের শতকে আংশিক শূন্যস্থানের  সাংখ্যিক পরিমাপের প্রথম প্রচেষ্টা দেখা যায়। ১৬৪৩ এর টরিসিলির পারদ ব্যারোমিটার এবং ব্লেইজ প্যাসকেল এর পরীক্ষা আংশিক শূন্যস্থান প্রদর্শন করে। 

ক্যাথোড রশ্মি বা ইলেকট্রন আভা আবিষ্কার ও পড়াশুনার জন্য ব্যবহৃত ক্রুকের নল,যা গেইস্লার নলের বিবর্তিতরুপ।

১৬৫৪ তে অটো ভন গেরিক]] প্রথম বায়ুশূন্য পাম্প উদ্ভাবন করেন এবং তার বিখ্যাত ম্যাগডেবার্গ গোলার্ধের]] পরীক্ষা পরিচালনা করেন এবং দেখান দুটি গোলার্ধের মধ্যকার বায়ু আংশিক বের করে নিলে ১০ টি ঘোড়ার দলও গোলার্ধ দুটিকে পৃথক করতে পারে না। রবার্ট বয়েল গেরিকের নকশা উন্নীত করেন এবং রবার্ট হুক এর সাহায্যে শূন্যস্থান পাম্পের পরবর্তি উন্নতি সাধন করেন। আগস্ট টইপ্লারের টইপ্লার পাম্প এবং ১৮৫৫ এ হেনরিখ গেইস্লারের পারদবিচ্যুতি পাম্প ১০ প্যাসকেলের আংশিক শূন্যস্থান অর্জনে সাহায্য করে। কিছু সংখ্যক তড়িৎ কণা এই শূন্য পর্যায়ে দেখা যায় যা পরবর্তি গবেষণার আগ্রহ তৈরি করে।

প্রাকৃতিকভাবে আংশিক বায়ুশূন্য এর সবচেয়ে তনু উদাহরণ হচ্ছে মহাশূন্য, আসমান মূলত অঙ্গীভূতভাবে ইথার নামক একটি অনমনীয় অবিনশ্বর উপাদান দ্বারা পরিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। স্টয়িক পদার্থবিজ্ঞানের প্যানিউমা অনুসারে ,নামের উৎসের জন্য ইথারকে তনু বায়ু হিসাবে গণ্য করা হয়। আলো  সর্বব্যাপী পার্থিব এই তত্ত্বের শুরুর দিকে এবং স্বর্গীয় মধ্যম, যার মাধ্যমে আলো যায়। এই তত্ত্ব নিউটনের প্রভাশালী তাপ ও প্রতিসরণের ব্যাখ্যা প্রদান করে।। ১৯ শতকে পৃথিবীর কক্ষপথের যথাযথ দাগ শনাক্ত করতে আলোকবাহী ইথার পরীক্ষা করা হয়। যখন পৃথিবী আন্তঃনাক্ষত্রিকের তুলনায় মোটামুটি ঘন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এর অনুমাত্র দাগ শনাক্ত করা যায় না। ১৯১২ এ জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেনরি পিকারিং বলেন “ যখন নক্ষত্রমণ্ডল ইথার মাধ্যমকে গ্রহণ করছে ,এটা গ্যাসের চরিত্রগত এবং মুক্ত গ্যাসীয় অণু সেখানে বিদ্যমান”।

১৯৩০ এ পল দিরাক ,ডিরাগ সাগর নামে একটি ঋনাত্মক শক্তির একটি অসীম কণা সমুদ্রের মত  শূন্যস্থানের একটি মডেল প্রস্তাব করেন। এই তত্ত্ব তাকে পূর্বের তৈরি করা ডিরাক সমীকরণের ধারণাকে পরিমার্জন করতে সাহায্য করেছিল। সফলভাবে পজিট্রনের অস্তিত্বের ধারণা দেন যা দুই বছর পর নিশ্চিত হয়েছিল। ১৯২৭ এ হাইসেনবার্গের অনিশ্চিত নীতি দিয়ে ধারণা করা হয় শক্তি ও সময় পরিমাপযোগ্য । ২০ শতকে শূন্যস্থান থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে কৃত্রিম কনার উদ্ভব নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চিরায়ত ক্ষেত্র তত্ত্বগুলো  সম্পাদনা

শূন্যস্থান, স্থান ও সময়ের একটি এলাকা  যেখানে সব উপাদানের পীড়ন-শক্তি টেন্সর হল শূন্য। এর মানে হল এটি শক্তি ও ভ্রামকশূন্য একটি এলাকা এবং একে কণা ও অন্যান্য পদার্থিক বিষয় থেকে মুক্ত হতে হবে যা শক্তি ও ভ্রামক তৈরি করতে পারে।

মহাকর্ষ সম্পাদনা

সাধারণ আপেক্ষিকতায় বিলীয়মান পীড়ন-শক্তি টেন্সর বলতে বোঝায় আইন্সটাইন ক্ষেত্র সমীকরণ দ্বারা সকল উপাদানের রিক্কি টেন্সর এর বিলীন। শূন্যস্থান বলতে স্থান-সময় এর  বক্রতা সমতল হতেই হবে বোঝায় না । মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রও জোয়ার বল এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গের রূপে শূন্যস্থানে বক্রতা তৈরি করতে পারে (কারিগরি ভাবে এই ঘটনা হল ওয়েল টেন্সর এর উপাদান)। কৃষ্ণ বিবর (শূন্য তড়িৎ আধান যুক্ত) হল শক্তিশালী বক্রতা দেখানো শূন্যস্থানের একটি মার্জিত উদাহরণ। 

তড়িৎচুম্বকত্ব সম্পাদনা

চিরায়ত তড়িচ্চুম্বকত্বে মুক্ত বা ফাঁকা স্থান অথবা শুধু মুক্ত স্থান বা নিখুঁত বায়ুশূন্য স্থান হল তড়িৎ চুম্বকীয় প্রভাবের জন্য আদর্শ নির্দেশক মাধ্যম।কিছু লেখক বলেন নির্দেশক মাধ্যম যেমন চিরায়ত শূন্যস্থান, একটি পরিভাষা যা এই ধারনাকে কোয়ান্টাম তড়িৎ-গতিবিজ্ঞানের শূন্যস্থান বা QCD শূন্যস্থান থেকে পৃথক করে যেখানে বায়ুশুন্যস্থানের অস্থিরতা অস্থায়ী অলীক কণা ঘনত্ব তৈরি করে এবং একটি আপেক্ষিক সম্ভাব্যতা এবং আপেক্ষিক ব্যাপ্তিযোগ্যতা অভিন্নরুপে একই নয়।

চিরায়ত তড়িৎচুম্বকত্ব তত্ত্বে ,ফাঁকা স্থানের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকে,

  • তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরিন আলোর বেগে গমন করে , যার মান SI এককে প্রতি সেকেন্ডে ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার।
  • উপরিপাতন নীতি সর্বদাই সত্য। যেমন পৃথক ভাবে দুটি চার্জের জন্য ক্রিয়াশীল বিভবের যোগফল হবে,চার্জদ্বয়ের মধ্যে সৃষ্ট বিভবের সমান। আবার চার্জের চারপাশের যেকোন বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্রের মান হবে আলাদাভাবে চার্জের জন্য সৃষ্ট তড়িৎ ক্ষেত্রের ভেক্টর যোগের সমান। 
  • সম্ভাব্যতা ও ব্যাপ্তিযোগ্যতা হল যথাক্রমে তড়িৎ ধ্রুবক ε ও চৌম্বক ধ্রুবক μ0।
  • স্বভাবগত প্রতিরোধ হল শূন্যস্থানের প্রতিরোধের সমান (Z0 ≈ 376.73 Ω)

চিরায়ত তড়িৎচুম্বকত্বের শূন্যস্থানকে [১]constitutive সম্পর্কের দুটি তড়িৎচুম্বকীয় মাধ্যম দ্বারা দেখান যেতে পারে,

উপরের সমীকরণ দুটি তড়িৎ সরণ এর সাথে তড়িৎ ক্ষেত্রচৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে চৌম্বক প্রতিরোধের সম্পর্ক স্থাপন করেছে,যেখানে  r= কার্তেসিয় অবস্থান ও  t = সময়

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সম্পাদনা

শূন্যস্থান অস্থিরতা

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বে শূন্যস্থান বলতে সর্বনিম্ন সম্ভাব্য শক্তির(হিলবার্ট স্থানের ভুমি অবস্থা) একটি অবস্থাকে বোঝায়(যা তত্ত্বের সমীকরণের ফলাফল)।কোয়ান্টাম তড়িৎ-গতিবিজ্ঞানে শূন্যস্থানকে কিউইডি শূন্যস্থান এবং  quantum chromodynamics এ শূন্যস্থানকে কিউসিডি শূন্যস্থান বলে নির্দেশ করা হয়। কিউইডি শূন্যস্থান হল পদার্থ কণিকা ও ফোটনবিহীন অবস্থা। পরীক্ষণীয় ভাবে এ অবস্থা অসম্ভব।যদি কোনভাবে সকল পদার্থকনিকা একটি আয়তন থেকে বের করে নেয়া হয়ও কৃষ্ণবস্তু-বিকিরণ বন্ধ করা যাবে না।তবু এটাই বাস্তবযোগ্য শূন্যস্থানের একটি আদর্শ মডেল এবং অনেকগুলো পরীক্ষণীয় পর্যবেক্ষণ পরবর্তিতে বর্ণনা করা হল।

কিউইডি শূন্যস্থান হল মজার ও জটিল ধর্মের। কিউইডি শূন্যস্থানে তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের গড়মান শূন্য কিন্তু তাদের পার্থক্য শূন্য নয়।এর ফলে কিউইডি শূন্যস্থান ধারণ করে শূন্যস্থানের অস্থিরতা (অলীক কনা যা অস্তিত্বের ভিতরে ও বাহিরে থাকে) এবং শূন্যস্থান শক্তি নামের অসীম শক্তি।কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বের অপরিহার্য ও সর্বব্যাপি অংশ হল শূন্যস্থানের অস্থিরতা। কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে শূন্যস্থানের অস্থিরতার প্রভাব নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তাত্ত্বিকভাবে কিউসিডি তে একাধিক শূন্যস্থান অবস্থা সহবস্থান করে।মহাজাগতিক স্ফীতির শুরু ও শেষ বিভিন্ন শূন্যস্থান অবস্থার মধ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে শুরু হয়। আপেক্ষিক অবস্থানে শক্তির প্রতি স্থির বিন্দু এক একটি শূন্যস্থানের উত্থান দেয়। ধারা তত্ত্বে অনেক সংখ্যার শূন্যস্থান বিবেচনা করা হয় যাকে আড়াআড়ি ধারা তত্ত্ব বলে। 

মহাশূন্য সম্পাদনা

মহাশূন্য আদর্শ শূন্যস্থান নয়।

মহাশূন্য হল খুবই নিম্ন ঘনত্ব ও চাপের এবং আদর্শ শূন্যস্থানের কাছাকাছি অবস্থা।কিন্তু কোন শূন্যস্থানই বাস্তবিক ভাবে আদর্শ নয়,নভোমন্ডল ও নয় যেখানে প্রতি ঘনমিটারে কিছু সংখ্যক হাইড্রজেন পরমাণু থাকে।

তারা, গ্রহ এবং চাঁদ মহাকর্ষীয় আকর্ষনের মাধ্যমে তাদের সীমাহীন বায়ুমন্ডলকে ধরে রাখে।যেহেতু বায়ুমন্ডলের কোন সীমানা নেই, বস্তুর দুরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমন্ডলীয় গ্যাসের ঘনত্ব হ্রাস পায়।  ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) উচ্চতায় কার্মান রেখায় (যা সাধারণত মহাশুন্যের সাথে সীমানা নির্ধারন করে) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলীয় চাপ পতনের হার ৩.২×১০−২ প্যাসকেল।এই রেখার নিচে , সূর্যের থেকে বিকিরন চাপ এবং সৌর বায়ুর শক্তিশালী চাপ এর তুলনায়   আইসোট্রপিক গ্যাস চাপ খুবই ক্ষুদ্র। এই সীমায় থার্মোস্ফিয়ার চাপ,তাপ ও গঠনের উচ্চ নতি যুক্ত থাকে এবং তা মহাশূন্য আবহাওয়ার কারণে অনেকটা পরিবর্তিত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ধরনের পরিবেশ বর্ণনার জন্য সংখ্যাঘনত্ব ব্যবহারের সুপারিশ করেন।

কারমান রেখার কিছু শত কিমি উপরের ঘনত্বেও স্যাটেলাইট ঘুরতে পারে। অধিকাংশ কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর এই নিম্ন কক্ষপথে ঘুরে এবং কিছু দিন পর পর তাদের ইঞ্জিন চালু করে কক্ষপথ ধরে রাখার জন্য। আন্তগ্র্রহ ভ্রমণের জন্য একটি প্রস্তাবিত পরিচালনা ব্যবস্থায় তাত্ত্বিকভাবে সৌর পালের উপর বিকিরণ চাপ অতিক্রম করে, এখানে কম ঘুরে।এই বলে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত জন্য গ্রহ তাদের নির্দিষ্ট আবক্রে খুব বিশালাকৃতির,যদিও তাদের বায়ুমন্ডল সৌর বায়ু দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

সকল দর্শনযোগ্য জগৎ অসংখ্য ফোটন,মহাজাগতিক বিকিরন এবংখুব সম্ভবত একটি সঙ্গতিপূর্ণভাবেই বড় সংখ্যক নিউট্রিণো দ্বারা পুর্ণ।বিকিরনের বর্তমান তাপমাত্রা হল ৩ কেলভিন বা -২৭০ সেলসিয়াস বা -৪৫৪ ফারেনহাইট।

পরিমাপ সম্পাদনা

কোন ব্যবস্থায় পদার্থের পরিমাণ ,শূন্যস্থানের গুণ দ্বারা নির্দেশ করা হয়। যেমন উচ্চগুণের শূন্যস্থানে খুবই কম সংখ্যক পদার্থ থাকে। শূন্যস্থান মূলত পরিমাপ করা হয় এর পরম চাপের মাধ্যমে। কিন্তু তাপমাত্রা ও রাসায়নিক গঠনের জন্য পরবর্তি স্থিতিমাপের প্রয়োজন পরে।অবশিষ্ট গ্যাসের গড়মুক্ত পথ হল এমন একটি স্থিতিমাপ। পরপর দুটি ধাক্কার মধ্যে একটী অণু যে গড় দুরত্ব অতিক্রম করে তাকে গড় মুক্ত পথ বলে।গ্যাসের ঘনত্বের সাথে সাথে গড়মুক্ত পথ হ্রাস পায় এবং যখন গড়মুক্ত পথ কক্ষের,পাম্প,মহাকাশযান, বা অন্য যে কোন উপস্থিত বস্তুর থেকেও বড় হয়, প্রবাহী বলবিদ্যার কন্টিনোম ধারণা আর প্রযোজ্য হয় না। শূন্যস্থানের এই অবস্থা কে বলে উচ্চ শূন্যস্থান, এবং প্রবাহীর প্রবাহের শিক্ষা কে প্রচলিত ব্যবস্থায় গ্যাসকণা গতিবিদ্যা বলে। বায়ুমন্ডলীয় চাপে বাতাসের গড়মুক্ত পথ খুবই ছোট ৭০ ন্যানোমিটার কিন্তু ১০০মিলিপ্যাসকেলে কক্ষতাপমাত্রায় বাতাসের গড়মুক্ত পথ হল সর্বসাকুল্যে ১০০মিলিমিটার যা বায়ুশূন্য টিউবে থাকে।গড়মুক্ত পথ পাখার আকারের থেকে বড় হলে ক্রকের রেডিওমিটার চালু হয়।

ক্রুকের রেডিওমিটার

অর্জন বা পরিমাপের জন্য প্রযুক্তি অনুসারে শূন্যস্থানের গুণাবলি পরিসরে বিভক্ত হয়।এই পরিসরের সার্বজনীন সংজ্ঞা নেই কিন্তু এর প্রচলিত ব্যবহার নিচে দেয়া হল।মহাশূন্যে আমাদের কক্ষপথের ভ্রমণ এবং ছায়াপথ সংক্রান্ত বিশাল স্থানের জন্য বিভিন্ন উচ্চতায় চাপ বিভিন্ন হয়।

বিভিন্ন গুণের শূন্যস্থানের চাপের পরিসর সম্পাদনা

শূন্যস্থানের গুণটরপাএটিএম
বায়ুমণ্ডলীয় চাপ7601.013×1051
নিম্ন শূন্যস্থান760 to 251×105 to 3×1039.87×10−1 to 3×10−2
মধ্যম শূন্যস্থান25 to 1×10−33×103 to 1×10−13×10−2 to 9.87×10−7
উচ্চ শূন্যস্থান1×10−3 to 1×10−91×10−1 to 1×10−79.87×10−7 to 9.87×10−13
অতি উচ্চ শূন্যস্থান1×10−9 to 1×10−121×10−7 to 1×10−109.87×10−13 to 9.87×10−16
চরম উচ্চ শূন্যস্থান< 1×10−12< 1×10−10< 9.87×10−16
মহাশূন্য1×10−6 to < 1×10−171×10−4 to < 3×10−159.87×10−10 to < 2.96×10−20
আদর্শ শূন্যস্থান000
  • বায়ুমণ্ডলীয় চাপঃ পরিবর্তনশীল কিন্তু 101,325 kPa (760 টর) এ এর মান নির্ধারিত
  • নিম্ন শূন্যস্থানঃএছাড়াও রুক্ষ ভ্যাকুয়াম বা মোটা ভ্যাকুয়াম বলা হয়,যা অনুন্নত সরঞ্জাম যেমন একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এবং একটি তরল কলাম চাপমান যন্ত্র এ অর্জন বা পরিমাপ করা যায়
  • মধ্যম শূন্যস্থানঃ একক পাম্পে অর্জন করা যায়,কিন্তু একটি তরল বা যান্ত্রিক চাপমান যন্ত্র দিয়ে পরিমাপ করার জন্য অত্যন্ত কম চাপ। এটা ম্যাকলিয়ড গেজ, তাপ গেজ বা একটি ক্ষমতাসম্পন্ন গেজ এ পরিমাপ করা যায়।
  • উচ্চ শূন্যস্থানঃ যেখানে কক্ষ বা পরীক্ষনীয় বস্তুর আকারের তুলনায় অবশিষ্ট গ্যাসের গড় মুক্ত পথ বেশি হয়।এর জন্য কয়েক ধাপের পাম্পিং এবং আয়ন গেজ পরিমাপের এর দরকার হয়। কিছু গ্রন্থে উচ্চ ভ্যাকুয়াম ও খুব উচ্চ ভ্যাকুয়াম মধ্যে পার্থক্য পাওয়া যায়।
  • খুব উচ্চ শূন্যস্থানঃ কক্ষ পুরিয়ে এবং অন্যান্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্যাসের অস্তিত্ব দূর করা দরকার হয়।খুব উচ্চ শূন্যস্থান ব্রিটিশ ও জার্মান মানে 10−6 Pa (10−8 টর) চাপের নিচে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
  • গভীর স্থানঃ সাধারণত কোনো কৃত্রিম ভ্যাকুয়ামের চেয়ে অনেক বেশি খালি। শূন্যস্থানের কোন অংশ এবং মহাশূন্যের উপাদানের উপর নির্ভর করে, এর সংজ্ঞা উপরের উচ্চ শূন্যস্থানের সাথে নাও মিলতে পারে। সৌর জগতের আকার আন্তগ্রহ স্থানের গড় মুক্ত পথের তুলনায় ছোট কিন্তু ছোট গ্রহ ও চাঁদের তুলনায় বড়। ফলে সৌর বায়ু ক্রমাগত প্রবাহ সৌর জগতের স্কেলে দেখা যায়,কিন্তু পৃথিবী ও চাঁদের জন্য কণা বিষ্ফোরনের কথাও মাথায় রাখতে হবে।
  • আদর্শ শুন্যস্থানঃ কণা বিহীন আদর্শ অবস্থা। এটা গবেষণাগারে অর্জন করা যায় না,যদিও ছোট আকারের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত মুহুর্তের জন্য তাদের মধ্যে কোন পদার্থের কণা নাও থাকতে পারে। সব কণা বের করার পরও সেখানে ফোটন এবং গ্রাভিটন থাকতে পারে,এমনকি কালো শক্তি,অলিক কণা এবং অন্যান্য কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দিকগুলি।
  • শক্তনরম শূন্যস্থান হল বিভিন্ন উৎসের সীমান রেখা যেমন ১ টর বা ০.১ টর। সাধারণ নির্ধারন হচ্ছে , শক্ত শূন্যস্থান নরমের থেকে উচ্চ শূন্যস্থান।

আপেক্ষিক বনাম পরম পরিমাপ সম্পাদনা

শূন্যস্থান চাপের এককে পরিমাপ করা হয়,সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এর বিয়োগের সাথে সম্পর্কিত। স্থানীয় অবস্থার সাথে সাথে আপেক্ষিক শূন্যস্থানের পরিমাণ ভিন্ন হয়। পৃথিবীর থেকে বৃহস্পতি গ্রহে ভুমি স্তরের বায়ুচাপ ,আপেক্ষিক শূন্যস্থান পরিমাপের অনেক বেশি। চাঁদের তলে প্রায় বায়ুমন্ডল নেই বললেই চলে,ঐ অবস্থায় পরিমাপযোগ্য শূন্যস্থান তৈরি করা আসলেই কঠিন।

একইভাবে এর থেকে অধিক চাপের মান সমুদ্রের গভীরে পাওয়া যাবে। একটি সাবমেরিন ১০ বায়ুমন্ডলীয় চাপের গভীরতায়(৯৮ মিটার,৯.৮ মিটার সমুদ্রের পানির স্তম্ভের ওজন ১ atm এর সমান ) ১ বায়ুমন্ডলীয় অভ্যন্তরীন চাপ বজায় রাখে, কার্যকরভাবে একটি বায়ুশূন্য চেম্বারের বাইরের পানির চাপে মচকে যাওয়া থেকে বাঁচায় ,যদিও ভেতরের ১ atm কে শূন্যস্থান বলা যাবে না। 

তারপরেও পাঠক ধারণা করতে পারেন যে পৃথিবীর সমুদ্র সমতলে শূন্যস্থানের আপেক্ষিক পরিমাপ করা হয়েছে। যা পরিবেষ্টনকারী বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ১ atmosphere। 

পারদক্ষরনকারী কাঁচের ম্যাকলিয়ড গেজ

১ atm এর কাছাকাছি পরিমাপগুলো সম্পাদনা

 চাপের SI একক হল প্যাসকেল (সংকেত Pa) কিন্তু শূন্যস্থানকে প্রায়ই টর একক দ্বারা মাপা হয় যা ইতালীয় পদার্থবিদ টরিসিলির নামানুসারে এসেছে।ম্যানোমিটারে পারদের এক মিলিমিটার সরণই হল এক টর। ১টর = পরম শূন্য চাপের উপরে ১৩৩.৩২২ প্যাসকেল।শূন্যস্থান প্রায়ই ব্যারোমেট্রিক পাল্লায় পরিমাপ করা হয় অথবা বায়ুমণ্ডলীয় চাপের শতকরা হিসেবে। নিম্ন শূন্যস্থানকে প্রায়ই পারদউচ্চতা বা আদর্শ বায়মন্ডলীয় চাপের নিচের প্যাসকেলে পরিমাপ করা হয়।  “বায়ুমণ্ডলীয় নিচে” মানে হল আদর্শ চাপ ও বর্তমান বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সমান। অন্যকথায় অধিকাংশ নিম্ন শূন্যস্থান গেজ যে পাঠ দেয়, যেমন ৫০.৭৯ টর। অনেক কম দামি  নিম্ন শূন্যস্থান গেজের যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে এবং ০ টরের একটি বায়ুশূন্যতা দেখাতে পারে কিন্তু এর জন্য ২ ধাপের ঘূর্ণমান পাখা বা অন্যান্য মাঝারি ধরনের বায়ুশূন্য পাম্প দরকার হবে ১ টরের  আরো অনেক বাইরে (তুলনায় কম) যেতে।

পরিমাপক যন্ত্রগুলো সম্পাদনা

শূন্যস্থানের পরিসর অনুযায়ী,শূন্যস্থানের চাপ পরিমাপ করতে বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

ম্যানোমিটার

Hydrostatic গেজ (যেমন পারদ কলামের চাপমান যন্ত্র )নলের মধ্যে তরলের একটি উল্লম্ব কলাম দ্বারা গঠিত যার প্রান্ত বিভিন্ন চাপে উন্মুক্ত হয়। কলাম ওঠা বা কমে যাবে। চাপের সাথে দুই প্রান্তের পার্থক্যের সাথে সমান ভাবে এই কলামের ঊঠা নামা নির্ভর করে। একটি বদ্ধ প্রান্ত ইউ-আকৃতির নলের একপ্রান্ত পরীক্ষণীয় অঞ্চলে সংযুক্ত থাকে। যে কোন তরলই ব্যবহার করা যাবে,তবে পারদের উচ্চ ঘনত্ব এবং কম বাষ্পচাপের জন্য পারদ ব্যবহার করা হয়। সরল hydrostatic গেজ ১ টর (১০০ PA) থেকে বায়ুমণ্ডলীয় উপরে চাপ পরিমাপ করতে পারে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকরণ হল ম্যাকলিয়ড গেজ  যা একটি জানা আয়তনের শূন্যস্থানকে বিচ্ছিন্ন করে,তরল কলামের উচ্চতা তারতম্যের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য একে সংকোচিত করে।  ম্যাকলিয়ড গেজ থেকে নির্ধারণ করা যায় 10−6 টর (0.1 mPa) পর্যন্ত, যা বর্তমান প্রযুক্তির সঙ্গে সম্ভব  চাপের সর্বনিম্ন সরাসরি পরিমাপ। অন্যান্য বায়ুশূন্য গেজে নিম্ন চাপ নির্ধারণ করা যায় কিন্তু শুধুমাত্র পরোক্ষভাবে অন্যান্য চাপ নিয়ন্ত্রিত বৈশিষ্ট্য দিয়ে। একটি সরাসরি পরিমাপ মাধ্যমে অতি সাধারণভাবে একটি ম্যাকলিয়ড গেজ থেকে এই পরোক্ষ পরিমাপ ক্রমাঙ্কন করা আবশ্যক।

কেনেটমিটার হল জলবিজ্ঞান গেজের মতই , যা পাওয়ার প্ল্যান্ট এ বাষ্প টার্বাইন বাব্যবহার করা হয়।

যান্ত্রিক বা স্থিতিস্থাপক গেজ নির্ভর করে বর্ডন নল, ধাতব পাতলা পর্দার উপর যা নির্ধারিত এলাকার  চাপের সাথে আকার পরিবর্তন করে । ধারক ম্যানোমিটার এর পাতলা পর্দা ধারকের অংশ থেকে তৈরি হয় যা চাপের সাথে আকার পরিবর্তন হয়। এগুলো ১০ থেকে ১০−৪ টর এর উপরে কার্যকর হয়।

তাপ পরিবাহী গেজ চাপের সাথে তাপ পরিবহন হ্রাসের উপর নির্ভর করে। এই ধরনের গেজে একটি তার কুন্ডুলি তড়িৎ প্রবাহের মাধ্যমে উত্তপ্ত করা হয়। একটি তাপীয়জোড় বা রোধকীয় তাপমাত্রা নির্নায়ক (RTD) এর মাধ্যমে কুন্ডুলির তাপমাত্রা পরিমাপ করা যেতে পারে।যা আশে পাশের গ্যাসে তাপীয় পরিবহনের জন্য নির্গত তাপের উপর নির্ভর করে।  

পিরানি গেজ

এইরকমই আরেকটি গেজ হল পিড়ানি গেজ। এতে একক প্লাটিনামের কুন্ডুলি ও আরটিডি থাকে। ১০ টর থেকে  ১০−৩ টর এ এই গেজ কার্যকর হয়, তবে তারা পরিমাপকৃত গ্যাসের রাসায়নিক প্রস্তুতিতে সংবেদনশীল।

আয়ন গেজ অতি উচ্চ শূন্যস্থানে ব্যবহৃত হয়। যা গরম ক্যাথোডঠান্ডা ক্যাথোড এই দুই ধরনের হয়।

গরম ক্যাথোডে উত্তপ্ত কুন্ডুলী একটি ইলেকট্রন রশ্নি তৈরি করে ইলেকট্রন গেজের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ে গ্যাস কণা আয়নিত করে। যা ঋনাত্মক তরিতদ্বার গ্রহণ করে। এই প্রবাহ গ্যাসের আয়নের উপর নির্ভর করে যা গেজের চাপের উপর নির্ভর করে। এই গেজ ১০−৩ টর থেকে  ১০−১০ টর এর কাজ করে। ঠান্ডা ক্যাথোডও একইভাবে কাজ করে। তবে এজন্য উচ্চ ভোল্টেজ এর দরকার হয়। এই গেজ ১০−২ টর থেকে ১০−৯ টর এর মধ্যে কার্যকর হয়। উচ্চ শূন্যস্থানে গ্যাসের গঠন অনিশ্চিত বলে সঠিক পরিমাপের জন্য একটি ভর বর্নালী  আয়নিত গেজের সাথে ব্যবহার করতে হয়।

ব্যবহার  সম্পাদনা

ভাস্বর আলোক বাতি

বিভিন্ন কাজে ও যন্ত্রে বায়ুশূন্যস্থান ব্যবহার করে হচ্ছে।ভাস্বর আলোক বাতিতে কুন্ডুলীর রাসায়নিক ক্ষয় রোধে ব্যবহার করা হয়। বায়ুশুন্যস্তানের অসারতা ইলেকট্রন রশ্নি ঝালাই, ঠান্ডা ঝালাই,বায়ুশুন্য প্যাকিংবায়ুশূন্য ভাজায় ব্যবহার করা হয়। অতি উচ্চ বায়ুশূন্য স্থান আণবিক পরিষ্কার স্তর এর গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়।উচ্চ থেকে অতি উচ্চ বায়ুশূন্য স্থান বাতাসের বাধা দূর করে, দূষণমুক্ত উপাদান জমা বা দূর করতে কণা রশ্মিকে সাহায্য করে। আর এটা হল অর্ধপরিবাহীর নির্মাণ,আলোকীয় প্রলেপ এবং তল বিজ্ঞানে জরুরি  রাসায়নিক বাষ্পীয় তলানি,ভৌত বাস্পীয় তলানি এবং শুকনো নকশা কাটার মূলনীতি। পরিচলনের হ্রাস ফ্লাস্কের তাপীয় অন্তরকতার যোগান দেয়। গভীর শূন্যস্থান তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমায় এবং নিম্ন তাপের গ্যাস নিঃসরণ বাড়ায় যা ফ্রিজ ডাইং, গাম তৈরি , ডিস্টেলেশন, মেটালরজি, এবং ধাপ শুদ্ধিকরণে ব্যবহার করা হয়।বায়ুশুন্যতার তড়িৎ ধর্ম ব্যবহার করে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ এবং বায়ুশূন্য নল যেমন ক্যাথোড রশ্মি নল তৈরি করে। বাতাসের ঘর্ষন হ্রাস ফ্লাই হুইল এনার্জি স্টোরেজ এবং আল্ট্রাসেন্ট্রিফিউজ এর জন্য জরুরী।

চাপকল

বায়ুশূন্য চালিত যন্ত্র সম্পাদনা

বায়ুশূন্যতা সাধারণত শোষণ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পিস্টন ঘুড়াতে নিউকোমেন বাষ্প ইঞ্জিনে বায়ুশূন্যতা বযবহার করা হয়।১৯ শতাব্দীতে বার্নেলের বায়বীয় রেলপথের আকর্ষনে ব্যবহার করা হয়।যুক্তরাজ্যে আগে ট্রেনে বায়ুশূন্য ব্রেক ব্যবহার করা হত। কিন্তু ঐতিহাসিক রেলপথ এর পরিবর্তে বাতাসের ব্রেক ব্যবহার করে। গাড়ির বিভিন্ন অংশ চালাতে নানাবিদ বায়ুশূন্যতা ব্যবহার করা হয়। যেমন vacuum servo,ব্রেকের কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া গাড়ির কাচ পরিষ্কারে এবং অটোভ্যাক জ্বালানি পাম্পে বায়ুশূন্যতা ব্যবহার করা হয়। কিছু বিমান যন্ত্র( উচ্চতাজনিত নির্দেশক (এআই) এবং শীর্ষক নির্দেশক (এইচআই)) সাধারণত বায়ুশূন্য চালিত হয়, সব যন্ত্র হারানোর (বৈদ্যুতিকভাবে চালিত) বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে, গোড়ার দিক থেকেই বিমানে প্রায়ই বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ছিল না এবং যেহেতু একটি চলন্ত বিমান এ নির্দ্ধিধায় দুটি উল্লেখযোগ্য বায়ুশূন্য উপলব্ধ উৎস রয়েছে, ইঞ্জিন এবং একটি বহিস্থিত ভেঞ্চার।

বায়ুশূন্য আবেশে গলানো বায়ুশুন্যতায় তড়িৎচুম্বকীয় আবেশে ব্যবহার করা হয়। বাষ্পীয় টারবাইনের যথাযথ কাজের জন্য ঘনকারকে বায়ুশূন্যতা ধরে রাখতে হয়।একটি বাষ্পীয়জেট বিতারক বা তরল চাকতির বায়ুশূন্য পাম্প এই কাজে ব্যবহার করা হয়। ঘনকারকের এর ধরনের উপর এর বাষ্পীয় স্থানে,টারবাইনের বের হওয়ার মুখে ৫ থেকে ১৫ kPa পরিসরে বায়ুশূন্যতা ধরে রাখতে হয়।

গ্যাস নিঃসরণ সম্পাদনা

বায়ুশূন্যতায় বাষ্পীভবনউর্দ্ধপাতনকে গ্যাসের নিঃসরণ বলে।সকল পদার্থেরই ছোট বাষ্পীয় চাপ আছে।এর নিচের চাপে গ্যাস নিঃসরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পরে। মানুষ নির্মিত ব্যবস্থায় যা ফুটোর মত কাজ করে এবং গ্রহণযোগ্য সীমায় বায়ুশূন্যতা দিতে পারে । কাছের ঠান্ডা তলে গ্যাস নিঃসরক বস্তু ঘন থাকতে পারে যা অস্পষ্ট আলোকীয় যন্ত্র বা অন্য উপাদানের সাথে ক্রিয়াকালে সমস্যা তৈরি করতে পারে। মহাকাশ মিশনে এটাই বড় চিন্তার বিষয়।কারণ অস্পষ্ট টেলিস্কোপ ও সৌরকোষ এই মহামুল্যবান মিশন নষ্ট করতে পারে। মানুষ নির্মিত ব্যবস্থায় কক্ষের উপাদানের পানি শোষণ হল সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্যাস নিঃসারক উপাদান।  শোষক উপাদান দূর করে এ সমস্যা সমাধান করা যায়। রোটারি ভেন পাম্প এর তেল এই গ্যাস নিঃসরিত পানি ঘন করতে পারে। যদি এর জমানো গ্যাস খরচ না হয় , তবে পাম্পের মোট গতি বহুলাংশে কমে যাবে।গ্যাস নিঃসরন কমাতে উচ্চ বায়ুশূন্য ব্যবস্থা  জৈব উপাদানমুক্ত হতে হবে। অতি উচ্চ বায়ুশূন্যতায় ব্যবস্থা পক্ব হতে হবে যাতে গ্যাস নিঃসরক উপাদানের বাষ্পচাপ বাড়ে এবং তাদের সিদ্ধ করা বন্ধ হয়। প্রকৃত কাজের বেলায় গ্যাস নিঃসরন কমাতে এবং ব্যবস্থা শীতল করতে গ্যাস নিঃসরক উপাদান সিদ্ধ করা বন্ধ এবং বের করতে হবে। অবশিষ্ট গ্যাস নিঃসরন থামাতে তরল নাইট্রজেন দিয়ে কিছু কিছু ব্যবস্থা কক্ষ তাপমাত্রার নিচে শীতল করা হয় এবং একসঙ্গে গ্যাস ও বাষ্পকে ঘন করা হয়। 

পাম্প করা এবং পারিপার্শ্বিক বায়ুচাপ সম্পাদনা

তরল কে সাধারণত টানা  যায় না তাই শোষণ থেকে বায়ুশূন্যতা তৈরি করা যায় না।এজন্য প্রথমে বায়ুশূন্যতা তৈরি করতে হবে যার ফলে শোষন হবে এবং তরলের মধ্যে উচ্চ চাপের মাধ্যমে ধাক্কা তৈরি করবে। কোন ধারকের মধ্যের আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে বায়ুশূন্যতা সহজেই তৈরি করা যায়।

সাধারণ পাম্প
টার্বো মলিকুলার পাম্পের প্রস্থচ্ছেদ

যেমন  মধ্যচ্ছেদা পর্দা বুকের গর্ত বৃদ্ধি করে ফলে কলিজা বাড়ে। এই বৃদ্ধি চাপ কমায় এবং আংশিক বায়ুশূন্যতা তৈরি করে যা বায়ু চাপের জন্য বাতাসে ভরে যায়। এজন্য এর দ্রুত বৃদ্ধি ও হ্রাস জরুরী। এই নীতিতে সাধারণ পানির পাম্প কাজ করে। পাম্পে আটকা গর্তের মধ্যে বায়ুশূন্যতা তৈরি করে। ফলে কুপ থেকে পানি পাম্পের গর্তে আসে। এরপর পাম্পের গর্ত আটকে একে বায়ুমন্ডলে উন্মুক্ত করা হয়।

উপরের উদাহরণটি হল বায়ুশূন্য পাম্পের সাধারণ পরিচিতি। এই নীতির ভিন্নতার উপর পাম্পের উন্নতি করা হয়েছে এবং অনেক পাম্প এই ভিত্তিগত ভিন্ন নীতির উপর নকশা করা হয়েছে। ভ্রামক স্থানান্তর পাম্পে এর থেকে বেশি শূন্যতা তৈরি করা হয়।ফাঁদের পাম্পে কঠিনের গ্যাস ধরে কোন প্রকার সরন ছাড়াই।  গুরুত্বপূর্ণ সীমার মধ্যে এদের কেউই সার্বজনীন নয়।সবগুলোই হাইড্রজেন,হিলিয়াম এবং নিয়ন পাম্পের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।

পাম্পের প্রকৃতি ছাড়াও অনেক কিছু এর উপর নির্ভরশীল একটি ব্যবস্থায়  সর্বনিম্ন চাপ  অর্জিত হতে পারে। ধাপ নামে,একাধিক পাম্প সিরিজের সংযুক্ত করা যেতে পারে। উচ্চ বায়ুশূন্যতার জন্য অনেকগুলো পাম্প শ্রেণীতে যুক্ত করা হয় যাকে পর্যায় বলে।সীলের ধরন, কক্ষের জ্যামিতি,উপাদান এবং পাম্প নামানোর কার্যক্রিয়ার ফল আছে।সমষ্টিগত ভাবেই একে বায়ুশূন্য কৌশল বলে।তেলের কারণে,কম্পনে,কিছু গ্যাসের পাম্পের জন্য,পাম্প নামানোর গতি, সাময়িক থামানো কার্যচক্র, উচ্চ ছিদ্রের সহনের উপর পাম্প ব্যবস্থার ভিন্নতা পাওয়া যায়।ধাতব চেম্বারের দেয়ালের ব্যাপ্তিযোগ্যতা বিবেচনা করা যেতে পারে এবং এবং ধাতব ফ্ল্যাঞ্জ শস্য অভিমুখ ,ফ্ল্যাঞ্জ মুখ সমান্তরাল হওয়া উচিত।

অতি উচ্চ বায়ুশুন্যতায় সূক্ষ্ম ফুটো এবং গ্যাস নিঃসারক উৎসকেও বিবেচনা করতে হবে।অ্যালুমিনিয়াম ও প্যালাডিয়াম এর পানি শোষণ হল গ্যাস নিঃসারকের অগ্রহণযোগ্য উৎস এবং টাইটেনিয়াম বা স্টিলের শোষকতাও চিন্তা করতে হবে। কিছু তেল ও গ্যাস চরম বায়ুশূন্যতা সিদ্ধ হয়। গবেষণাগারে অর্জনযোগ্য নিম্নচাপ হল ১০−১৩ টর ( ১৩ pPa).

মানুষ ও প্রাণীর উপর প্রভাব সম্পাদনা

ডার্বির জোসেফ রাইটের বাতাসের পাম্পে পাখি নিয়ে পরীক্ষা।

মানুষ ও পশুর ভ্যাকুয়াম উন্মুক্ত হলে কয়েক সেকেন্ড পরে চেতনা হারাবে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে হায়পক্সিয়া মারা যায়। কিন্তু উপসর্গ সাধারণভাবে মিডিয়া এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির মধ্যে যেমন চিত্রিত করা হয়েছে প্রায় অতটা স্পষ্ট নয়। চাপ হ্রাস তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় যার জন্য  রক্ত ও শরীরের অন্যান্য তরল ফুটে উঠবে। কিন্তু শিরাগুলোর নমনীয় চাপ নিশ্চিত করে যে, এই স্ফুটনাঙ্ক ৩৭ ° সে- এর অভ্যন্তরীণ শরীরের তাপমাত্রার উপরে থাকে। যদিও রক্ত ফুটতে হবে না, শারীরিক তরলের গ্যাস বুদবুদ গঠনে চাপ কমে,যা ইবুলিজম নামে পরিচিত, এখনও একটি উদ্বেগের বিষয়। গ্যাস দেহকে  তার স্বাভাবিক মাপের দুইগুন ফোলাতে পারে এবং ধীর গতির রক্ত সঞ্চালন করে, কিন্তু টিস্যু নমনীয় এবং যথেষ্ট ছিদ্রময় যা ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। ফ্লাইট স্যুট দ্বারা ফোলা এবং ইবুলিজম দমানো যেতে পারে। ক্রু উচ্চতাজনিত সুরক্ষা Suit নামে শাটল মহাকাশচারী একটি লাগানো নমনীয় পোশাক পরে যা যা ২ kPa (১৫ টর) এর কম চাপে ইবুলিজম বাধা দেয়। দ্রুত উত্তপ্ততা ত্বক ঠান্ডা করবে, , জমাট অবস্থা তৈরি করে, বিশেষ করে মুখের মধ্যে, কিন্তু এটা একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি নয়।

প্রাণী পরীক্ষানিরীক্ষা দেখায় যে দ্রুত এবং সম্পূর্ণ আরোগ্য স্বাভাবিক 90 সেকেণ্ডের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট উন্মুক্ততার জন্য, যখন দীর্ঘসময় পুরো দেহকে উন্মুক্ততা মারাত্মক এবং পুনঃশক্তিসঞ্চার কখনোই সফল ছিল না। আট শিম্পাঞ্জির উপর নাসা দ্বারা একটি গবেষণায় আড়াই মিনিটে বায়ুশূন্য উন্মুক্ততায় তাদের সবাই বেঁচে গিয়েছিল।মানব দুর্ঘটনার সীমিত উদাহরণ আছে, কিন্তু এটা পশুর বেলায় অনেক বেশি। নিঃশ্বাস নিতে অক্ষমতা না হলে  অনেক বেশি সময় এর জন্য চেহারা উন্মুক্ত হতে পারে। রবার্ট বয়েল প্রথম 1660 সালে দেখান যে, যে ভ্যাকুয়াম ছোট প্রাণীর জন্য প্রাণঘাতী হয়।

একটি গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে উদ্ভিদ প্রায় 30 মিনিট ধরে একটি কম চাপের (১.৫ kPa) পরিবেশে টিকতে পারবে।

১৯৪২ সাল চলাকালীন, জার্মান বিমানবাহিনীর জন্য মানব বিষয়ে পরীক্ষার একটি সিরিজ এ, ডাকাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দীদের উপর নাজি সরকার পরীক্ষা চালায়, তাদের কম আপে উন্মুক্ত করে ।

বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তুলনায় অনেক কম চাপে ঠাণ্ডা বা অক্সিজেন সমৃদ্ধ পরিবেশে জীবন টিকে থাকতে পারে, অক্সিজেনের ঘনত্ব যতদিন আদর্শ সমুদ্রতলের উচ্চতা বায়ুমণ্ডলের এর অনুরূপ না হয়। ৩ কিমি পর্যন্ত উচ্চতায় ঠাণ্ডা বায়ুর তাপমাত্রা খুঁজে পাওয়া যায় , সাধারণত কম চাপ এর জন্য । এই উচ্চতার উপরে, অক্সিজেন সমৃদ্ধি প্রয়োজন মানুষের মধ্যে উচ্চতায় অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে যার পূর্ববর্তী আবহাত্তয়ায় অভ্যস্তকরণ করা হয়নি এবং স্পেসসুইট ১৯ কিমি উপরে ইবুলিজম প্রতিরোধ জন্য আবশ্যকীয়। অধিকাংশ স্পেসসুইট মাত্র ২০ kPa (১৫০ টর) বিশুদ্ধ অক্সিজেন  ব্যবহার করে। এই চাপ যথেষ্ট উচ্চ ইবুলিজম প্রতিরোধ করতে। কিন্তু বিসংকোচন অসুস্থতা এবং গ্যাস ইবুলিজম এখনও ঘটতে পারে,বিসংকোচন হার ঠিক না করলে।

বায়ুশূন্যে নিজে থেকে উন্মুক্ততার থেকে  দ্রুত বিসংকোচন অনেক মারাত্মক। রোগী তার দম ধরে রাখতে পারে না,শ্বাসনালীর মধ্যে দিয়ে বায়ু গমন ধীর হয়,যা ফুসফুসের নাজুক alveoli মারাত্মক ফেটে যাওয়া  প্রতিরোধ করতে পারে না। দ্রুত বিসংকোচনে কানের পরদা এবং সাইনাস ফেটে যেতে পারে, নরম টিস্যুর ক্ষত ও রক্ত ক্ষরন হতে পারে, এবং অভিঘাতের এর কারণে অক্সিজেন খরচ ত্বরান্বিত হবে যা হায়পক্সিয়ার দিকে যাবে। দ্রুত বিসংকোচন দ্বারা সৃষ্ট আঘাতসমুহকে ব্বযারোট্লারুমা হয়।  ১৩ kPa (১০০ টর) এর চাপ কমা,  ধীরে ধীরে হলে কোন লক্ষণ প্রকাশ করে না, যদি এটা হঠাৎ ঘটে মারাত্মক হতে পারে।

কিছু এক্সট্রিমোফিল অণুজীব, যেমন টার্ডিগ্রেডস দিন বা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুশূন্যে বেঁচে থাকতে পারে। 

উদাহরণ সম্পাদনা

চাপ (Pa বা kPa)চাপ (টর)গড় মুক্ত পথএকক ঘন মিটারে কণা
আদর্শ বায়ুমন্ডল101.325 kPa76066 nm2.5×1019
প্রবল সামুধ্রিক ঝড়approx. 87 to 95 kPa650 to 710
বায়ুশূন্য পরিষ্কারকapproximately 80 kPa60070 nm1019
বাষ্পচালিত পাখা9 kPa
তরল চাকতির বায়ুশূন্য পাম্পapproximately 3.2 kPa241.75 μm1018
মঙ্গলের বায়ুমন্ডল1.155 kPa to 0.03 kPa (mean 0.6 kPa)8.66 to 0.23
জমাট শুকানো100 to 101 to 0.1100 μm to 1 mm1016 to 1015
ভাস্বর বাতি10 to 10.1 to 0.011 mm to 1 cm1015 to 1014
ফ্লাস্ক1 to 0.01 10−2 to 10−41 cm to 1 m1014 to 1012
পৃথিবীর বায়ুমন্ডল1 Pa to 1×10−710−2 to 10−91 cm to 100 km1014 to 107
বায়ুশুন্য নল1×10−5 to 1×10−810−7 to 10−101 to 1,000 km109 to 106
Cryopumped MBE কক্ষ1×10−7 to 1×10−910−9 to 10−11100 to 10,000 km107 to 105
চাঁদে চাপapproximately 1×10−910−1110,000 km4×105
মহাশূন্য  11
মহাশুন্য মাধ্যম  1
আন্ত গ্যলাক্সি 10−6

টীকা সম্পাদনা

🔥 Top keywords: কাজী নজরুল ইসলামপ্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরশেখ মুজিবুর রহমানইব্রাহিম রাইসিআনোয়ারুল আজীমবাংলাদেশ২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধছয় দফা আন্দোলনএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)আবহাওয়াভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪ক্লিওপেট্রাশিয়া ইসলামশায়খ আহমাদুল্লাহঘূর্ণিঝড়নজরুল জয়ন্তীপহেলা বৈশাখবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদবাংলাদেশের স্থল বন্দরসমূহের তালিকাঝিনাইদহ-৪বাংলা ভাষা আন্দোলনপদ্মা সেতুইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনভারতবন্দে আলী মিয়ামৌলিক পদার্থের তালিকাভূমি পরিমাপবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলবুদ্ধ পূর্ণিমাআলী খামেনেয়ীমিয়া খলিফাকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিমহাত্মা গান্ধীবাংলা ভাষাবিদ্রোহী (কবিতা)