পানির গুণমান
পানির গুণগত মান বলতে পানির রাসায়নিক, বাহ্যিক, জৈবিক, এবং বিকিরণ সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়।[১] এটি পানির অবস্থা পরিমাপের মাপকাঠি যা এক বা একাধিক জৈব প্রজাতির প্রয়োজনীয়তা বা মানুষের প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে।[২] এটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রায়শই ব্যবহৃত হওয়া একগুচ্ছ আদর্শ যা পানি পরিশোধনের মাধ্যমে অর্জিত হয়। পানির গুনগত মান পরীক্ষার সচরাচর ব্যবহৃত হয় এমন কিছু আদর্শের মধ্যে অন্যতম হল বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য, মানুষের নিরাপত্তা এবং খাবার পানির পান যোগ্যতা অন্যতম।
আদর্শ সম্পাদনা
পানি কী কাজে ব্যবহৃত হবে তার উপর ভিত্তি করে কিছু সংস্থা, এর রাজনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত / বৈজ্ঞানিক দিকগুলো বিবেচনা করে আদর্শগুলি তৈরি করে।[৩] প্রাকৃতিক জলাশয়ের ক্ষেত্রে, তারা পানি ব্যবহারের পূর্বে জলাশয়ের কী অবস্থা ছিল তা নিরুপণ করে রাখে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সাথে জলাশয়ের অবস্থারও পরিবর্তন হতে পারে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সবসময় চেষ্টা করেন পরিবেশের ফাংশনগুলো কীভাবে কাজ তা বুঝতে, যা তাদের দূষণের উৎস এবং সেখানে কি ধরনের দূষণকারী থাকতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবী এবং নীতিনির্ধারকগণ আইনপ্রণয়নের জন্য কাজ করেন যেন পানির প্রকৃত ব্যবহারের জন্য যে গুনগত মান দরকার তা নিশ্চিত করা হয়।
পৃথিবীপৃষ্ঠের বেশিরভাগ পানি পানযোগ্যও নয় আবার বিষাক্তও নয়। এটি সত্য বলে প্রমাণিত হয় যখন সমুদ্রের পানিকে (যা পান করতে খুব লবণাক্ত) পানযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয় না। পানির গুনগত মান বোঝার আর একটি উপায় হল এটি একটি অতিসাধারণ তরল বেশিরভাগ সময় যা দেখেই বোঝা যায় যে এটি দূষিত কিনা। প্রকৃতপক্ষে, পানির গুনগত মান একটি জটিল বিষয়, কারণ পানি পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের সাথে সংযুক্ত একটি জটিল মাধ্যম। শিল্প ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড (যেমন, পণ্য উৎপাদন, খননকাজ, নির্মাণকাজ, পরিবহন) পানি দূষণের একটি প্রধান কারণ, এছাড়াও আরও রয়েছে কৃষিপ্রধান এলাকা থেকে আসা পানি, শহরাঞ্চল থেকে আসা পানি, পয়নিষ্কাশন পাইপ থেকে আসা পরিশোধিত বা অপরিশোধিত পানি।
বিভাগসমূহ সম্পাদনা
পানির গুণগতমান কেমন থাকতে হবে তা নির্ভর করে ওই পানি আমরা কি কাজে ব্যবহার করব। পানির গুণগতমান নিয়ে কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হয় যে পরিশোধিত পানি কি মানুষের খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হবে, নাকি বাগান করা বা অন্য কোন কাজে ব্যবহৃত হবে।
মানুষের ব্যবহারের জন্য সম্পাদনা
দূষণকারী পদার্থ বা প্রাণী যা অপরিশোধিত পানিতে থাকতে পারে, তাদের মধ্যে রয়েছে, অণুজীব, যেমন ভাইরাস, Pপ্রোটোজোয়া এবং ব্যাকটেরিয়া; লবণ এবং ধাতু হিসাবে অজৈব দূষণকারী পদার্থ; জৈব রাসায়নিক দূষণকারী শিল্প প্রক্রিয়া এবং পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার; কীটনাশক এবং ওষুধপত্র; এবং তেজস্ক্রিয় দূষণকারী পদার্থ। পানির গুণগতমান সাধারণত নির্ভর করে ওই অঞ্চলের স্থানীয় ভূতত্ত্ব এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর, সেইসাথে মানুষের পানির ব্যবহার, যার মধ্যে রয়েছে পয়নিস্কাশন পাইপের দূষণ, শিল্পকারখানার দূষণ, তাপ কমানোর জন্য পানির ব্যবহার এবং পানির অতিরিক্ত ব্যবহার (যা ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে আরও নিচে নামিয়ে দিতে পারে)।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশগত সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ), মার্কিন পাবলিক ওয়াটার সিস্টেম দ্বারা সরবরাহকৃত কলের পানিতে সর্বাধিক কতটুকু দূষণকারী পদার্থ থাকতে পারবে তা ঠিক করে দিয়েছে। ইপিএ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নিরাপদ খাবার পানির আইনে দুটি আদর্শ নির্ধারণ করা হয়ঃ
- প্রাথমিক আদর্শগুলো মানুষের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে মধ্যে ফেলতে পারে এমন উপাদানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- সেকেন্ডারি আদর্শগুলো পানির নান্দনিক গুণাবলী যা এর স্বাদ, গন্ধ ও বাহ্যিক দিকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) রেগুলেশনগুলি বোতলজাত পানিতে দূষণকারী পদার্থের জন্য সীমা স্থাপন করে দিয়েছে যা তাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করে। বোতলজাত পানি সহ খাবার পানিতে, যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছু দূষণকারী অন্তত ছোট পরিমাণ ধারণ করতে পারে যা প্রত্যাশিত। এই দূষণকারীদের উপস্থিতি নির্দেশ করে না যে এইপানি পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।
সারা বিশ্বের এলাকায়, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় এবং অন্যান্য স্থানে পানি সরবরাহের সময় পানি উৎসে (ভূপৃষ্ঠস্থ বা ভূগর্ভস্থ) দূষণকারী পদার্থ বা প্রাণীগুলিকে অপসারণ করার জন্য উন্নত পানি পরিশোধন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কারণ সেখানে পানিগুলো সাধারণত নদী, জলাশয়, একুইফার বা অন্য কোন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয় যা পরিশোধন না করে এর গুণগতমান নিশিত করা সম্ভব না।
বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার সম্পাদনা
দ্রবীভূত খনিজ পদার্থগুলীর মাত্রা শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়ির ব্যবহৃত পানির উপযুক্ততাকে প্রভাবিত করতে পারে। এদের অধিকাংশই সম্ভবত ক্যালসিয়াম (Ca2+) এবং ম্যাগনেসিয়াম (Mg2+) এর আয়ন যা সাবান ব্যবহারের সময় তৈরি হয় এবং হিটার এবং বয়লার থেকে সালফেট ও কার্বনেট তৈরি হতে পারে।[৪] এই আয়নগুলি সরানো হলে পানি আরও কোমল হয়।[৫] যদিও এই প্রক্রিয়ায় পানিতে আরও সোডিয়াম ক্যাটায়ন যুক্ত হয়। মানুষের পানি পানের ক্ষেত্রে সফট ওয়াটারের থেকে হার্ড ওয়াটার পান করা অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য হতে পারে, কারণ অতিরিক্ত সোডিয়াম স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়, অপরদিকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়। [৬] কোমল পানীয় পুষ্টিহীনতার কারণ হতে পারে এবং পরিষ্কার প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য এবং অন্যান্য বর্জ্যও পানির উৎসকে দূষিত করতে পারে।[৭]
পরিবেশগতভাবে পানির গুণগতমান সম্পাদনা
পরিবেশগতভাবে পানির গুণগত মান, একে সর্বপরিব্যাপ্তিতে পানির গুণগতমানও বলে, যা হ্রদ, নদী এবং সাগর সম্পর্কিত। আশেপাশের পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র, এবং মানুষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহারের কারণে ভূপৃষ্ঠের পানির পানির গুণগতমানের উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি এবং উচ্চ জনসংখ্যা বিশিষ্ট এলাকায় অণুজীব সমূহ খাওয়া হয়না এমন কাজ যেমন জমিতে পানি দেয়া, সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, রাফটিং, নৌকা চালনা করা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে পানি ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই অবস্থা বন্যপ্রাণীকেও প্রভাবিত করতে পারে, যারা এই পানি খাওয়ার জন্য ব্যবহার করে বা বসবাসের জন্য। পানির গুণগতমান রক্ষার আধুনিক আইন সাধারণত মৎস্য এবং বিনোদনমূলক ব্যবহারের সুরক্ষা দিয়ে থাকে এবং এটি বর্তমানে পানির সর্বনিম্ন আদর্শ মান ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন।
জনসাধারণের মধ্যে কিছু আকাঙ্ক্ষা আছে যে এই আইনগুলো পানির উৎসগুলোকে বর্তমান অবস্থা থেকে শিল্পযুগের পূর্বের অবস্থার দিকে ফিরিয়ে দিতে পারে। বর্তমান পরিবেশ আইনে জলাশয়ের পানির নির্দিষ্ট বাবহারের উপর তাগিত দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কিছু দেশ পানিকে নির্দিষ্ট পরিমানে দূষিত করার অনুমতি দিচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা কোন নির্দিষ্ট ব্যবহারের জন্য ক্ষতিকারক হচ্ছে। তবে ভূগর্ভস্থ পরিবর্তনগুলি (যেমন, জমির উন্নয়ন, নগরায়ণ, বনভূমি কেটে ফেলা) মিঠাপানির উৎসকে, তার পূর্ববর্তী অবস্থার দিকে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে। এক্ষেত্রে, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্রের বিকাশের লক্ষ্য অর্জনের উপর মনোযোগ দিচ্ছে , যা বিপন্ন প্রজাতির সুরক্ষা এবং মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করতে পারে।
নমুনা এবং পরিমাপ সম্পাদনা
একটি বিষয় হিসাবে পানির গুণগতমানের জটিল বিষয়গুলো এর সূচকগুলোর কিছু পরিমাপের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। পানির মানের সবচেয়ে সঠিক পরিমাপ অন-সাইটে তৈরি করা হয়, কারণ সেখানে পানি তার আশেপাশের পরিবেশের সাথে সমতুল্য অবস্থায় থাকে। পরিমাপগুলো সাধারণত অন-সাইটে করা হয় এবং পানির উৎসের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রেখে যে সব সূচকগুলো পরিমাপ করা হয় তার মধ্যে তাপমাত্রা, পি.এইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পরিবাহিতা, অক্সিজেন হ্রাসের সম্ভাব্যতা (ওআরপি ), অস্বচ্ছতা এবং সেচ্ছি ডিস্ক গভীরতা পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত।
নমুনা সংগ্রহ সম্পাদনা
পানির নমুনা তৈরির সময় দুই ধরনের সমস্যা হতে পারেঃ
- প্রথম সমস্যা হল সেই পরিমাণ পানির নমুনা তৈরি করা যা ওই পানির উৎসকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। আনেক ক্ষেত্রে পানির উৎস সময় এবং স্থানের সাথে পরিবর্তন হয়। আমরা যে পানির গুণগত মান পরিমাপ করতে চাই তা ঋতু পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে বা দিনে ও রাতে বা মানুষের কোন কর্মকাণ্ডের কারণে বা কোন জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর কারণেও পানি পরিবর্তিত হতে পারে।[৮] আমরা যে পানির গুণগত মান পরীক্ষা করব তার পরিসীমার দূরত্বের সাথে সাথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মাটির গুনগত মান পরিবর্তনের কারণে পরিমাপে পরিবর্তন আসতে পারে। যে কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও অবস্থানে স্যামপলারটি আমাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে কি না তা যাচাই করতে হবে অথবা যদি সময় ও অবস্থানের সাথে পরিমাপের গড় মানের দ্বারা সূচকের প্রয়োজনীয় মান বের করা যায় অথবা একটি নির্দিষ্ট বাপ্তিতে সময়, অবস্থান বা ঘটনা নিবেচনা করে সূচকের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান পৃথকভাবে পরিমাপের প্রয়োজন হয়।[৯]:৩৯–৪০ নমুনা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আলাদা অবস্থান ও সময়ে নমুনা সংগ্রহ করে সেখানেই সঠিক ওজন করে নিয়ে তার গড় করলে তা যথাযথ হয়। যেখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মানগুলো পাওয়া যায়, সেখানে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করে সম্ভাব্য কতগুলো নমুনা সংগ্রহ করতে হবে তার মান বের করা জরুরী।[১০]
- দ্বিতীয় সমস্যাটি হল, যেহেতু নমুনাটি পানির উৎস থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়, সেহেতু সেটি নতুন পরিবেশে নমুনা কন্টেইনারের সাথে রাসায়নিক সামঞ্জস্যতা স্থাপন করা শুরু করে । স্যামপ্লার (নমুনার ধারক) অবশই এমন পদার্থ দিয়ে তৈরি হতে হবে যা নমুনার সাথে বিক্রিয়া করবে না এবং সেটি অবশই ভালভাবে পরিষ্কার করে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। পানি নমুনা ওই নমুনার পাত্রে দ্রবীভূত কোন রাসায়নিক পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে তার রাসায়নিক পরিবর্তন সাধন করতে পারে, প্রয়োজনীয় সূচকের মানে পরিবর্তন আনতে পারে।[৯]:৪ একইভাবে উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করার সময় পাম্প,পাইপ বা অন্য কোন যন্ত্র ব্যবহারের ফলে সেখানেও রাসায়নিক পরিবর্তন আসতে পারে। ভূপৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে যাওয়া যায় বায়ুচাপ তত কমতে থাকে, এই কারণে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক নীচ থেকে নমুনা সংগ্রহ করার সময় দ্রবীভূত গ্যাস নমুনা পাত্রের নমুনার উপরিভাগের ফাকা অংশে জমা হতে পারে। এই গ্যাস নমুনার মধ্যেও দ্রবীভূত হতে পারে। অপরদিকে, নমুনা পাত্রের তাপমাত্রার পরিবর্তনও নমুনার রাসায়নিক সাম্যাবস্থার পরিবর্তন আনতে পারে। পানির মধ্যে ভেসে থাকা অতিক্ষুদ্র কণাগুলো পরবর্তীতে পাত্রের নিচে জমা হতে পারে। পানির নমুনা মধ্যে অতিক্ষুদ্র প্রাণীসমূহ জৈবিকভাবে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, এবং জৈব যৌগ সংশ্লেষ করে নমুনার ঘনত্বে পরিবর্তন আনতে পারে। কার্বন ডাই অক্সাইড সংবহন পরিবর্তন নমুনার পিএইচ পরিবর্তন করতে পারে এবং নমুনার রাসায়নিকের দ্রাব্যতা পরিবর্তন করতে পারে। এই সমস্যাগুলি খুব কম ঘনত্বের রাসায়নিকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে রাসায়নিকের পরিমাপের সময় তা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়।[৮]
নমুনা সংরক্ষণের বিষয়টি আংশিকভাবে দ্বিতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারে। একটি সাধারণ প্রক্রিয়া হল নমুনা সংগ্রহের পর তা ঠাণ্ডা স্থানে রাখা যা তার রাসায়নিক বিক্রিয়া ও আবস্থার পরিবর্তনকে স্থিমিত করে দেয় এবং যত তারাতারি সম্ভব নমুনার সূচকগুলো পরীক্ষা করে নেয়া, কিন্তু এইগুলি কেবল তাদের পরিবর্তন প্রতিরোধ করার পরিবর্তে শুধু পরিবর্তনের বিক্রিয়ার মাত্রা কমিয়ে দেয়।[৯]:৪৩–৪৫ নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মধ্যে বিলম্বের সময় নমুনা পাত্রে নমুনার পরিবর্তন নির্ণয়ের জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি স্যাম্পলিং ইভেন্টের আগাম দুটি কৃত্রিম নমুনার প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখা হয়। একটি নমুনা পাত্রে পানি পুরণ করে রাখা হয়, যা আগের পরীক্ষা রাসায়নিক বিক্রিয়া মুক্ত বলে প্রমাণিত। অপরটি ফাঁকা থাকে, যা পানির নমুনা সংগ্রহের সময় বাতাসের সংস্পর্শে থাকে, তারপর নমুনা পাত্র দুটি পরিবহন করে পরীক্ষাগারে নেয়া হয় এটা পরীক্ষার জন্য যে সংগ্রহের সময় নমুনাতে কোন দৃশ্যমান রাসায়নিক পরিবর্তন এসেছে কিনা। দ্বিতীয় কৃত্রিম নমুনাটি ইচ্ছামতো সংগ্রহ করা হয়, তবে সংগ্রহের সময় কিছু অতিরিক্ত রাসায়নিকের মিশিয়ে তা অকেজো করে রাখা হয়। তারপর ফাঁকা ও অকেজো নমুনা দুটি নিয়ে পরীক্ষাগারে নিয়ে আসা হয় এবং সংগ্রহ ও পরীক্ষার সময় একই উপায়ে ও একই সময়ে সংগ্রহ করা নমুনাগুলির মধ্যে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা তা নিরূপণ করা হয়।[১১]
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য জরুরি অবস্থার সময় পরীক্ষা করা সম্পাদনা
ভূমিকম্প ও সুনামির মতো ঘটনার পরে সাহায্য সংস্থাগুলির কাছ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় যে, তারা মৌলিক অবকাঠামো পুনরুদ্ধার এবং মৌলিক উপাদানগুলি যা বেঁচে থাকার জন্য এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করে।[১২] এই সময়ে পরিষ্কার খাবার পানি এবং পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এসময় মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়, কারণ সঠিক স্যানিটেশন ছাড়া ও একটি প্রায় অকার্যকর অবস্থার মধ্যে অনেক মানুষকে এক সাথে বসবাস করতে হয়।[১৩]
একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে, পানির গুণগত মান সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হয়ে পরে, এই কারণে পানির মান ঠিক রাখার জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি প্রয়োগের উপায় সম্পর্কে উদ্যোগ নেয়া হয়। জরুরি অবস্থাতে প্রধানত পানির যে সূচকগুলো খেয়াল করা হয় তা হল, মানুষের মলে থাকে এমন অতিক্ষুদ্র প্রাণী, মুক্ত ক্লোরিন, পি.এইচ, অসচ্ছতা, দ্রবীভূত কণার পরিমাণ (টিডিএস)। এই ধরনের পরীক্ষার জন্য সহায়তা এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ও বাজারে সহজে পাওয়া যায় এমন কিছু পরীক্ষা যন্ত্র বা ঔষধ সরবরাহ করে থাকে।[১৪][১৫]
বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর, পানির গুণগত মানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরে ভুমিকম্প ও সুনামির পর পানির টিউবওয়েল এর পানিতে লবনাক্ততা পরীক্ষা করতে গিয়ে কলম্বো-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট (আইডব্লিউএমআই) জলবায়ু সংক্রান্ত প্রভাবগুলি পর্যবেক্ষণ করে এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যায় যে, সুনামির পর প্রায় দেড় বছর লেগেছে সুনামি-পূর্ব অবস্থায় ফিরতে।[১৬] আইডব্লিউএমআই নলকূপের পানি লবনাক্ততা থেকে মুক্ত করার জন্য কিছু প্রোটোকল তৈরি করে যা পরবর্তীতে জরুরি নির্দেশিকাগুলির অংশ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়।[১৭]
রাসায়নিক বিশ্লেষণ সম্পাদনা
[[File:GCMS open.jpg|thumb|right|একটি [[Gas chromatography–mass spectrometry|গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফ-
ম্যাস স্পেকট্রমিটার কীটনাশকসমূহ and অন্যান্য জৈব দূষণকারী পরিমাপ]]
রাসায়নিক বিশ্লেষণের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল তাদের আকারের সাথে সম্পর্কিত রাসায়নিক উপাদানগুলি পরিমাপ করা। উদাহরণস্বরূপ, অক্সিজেনের মৌলিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পানির নমুনার প্রতি মিলিগ্রাম/ লিটারে (এমজি / এল) ৮৯০, ০০০ মিলিগ্রাম অক্সিজেনের একটি ঘনত্ব নির্দেশ করে, কারণ পানি অক্সিজেনের তৈরি। এই পদ্ধতিতে দ্রবণীয় অক্সিজেন পরিমাপ করার সময় অবশ্যই ডায়োটমিক অক্সিজেন এবং অক্সিজেনের মধ্যে অন্য মিলিত উপাদানের পার্থক্য নির্দেশ করা। মৌলিক বিশ্লেষণের তুলনামূলক সরলতা কখনও কখনও ভারী ধাতু হিসাবে চিহ্নিত উপাদানগুলির জন্য এবং পানির গুনগত মানের মানদণ্ডের একটি বৃহৎ পরিমাণ নমুনা তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করে দিয়েছে। ভারী ধাতুগুলির জন্য ভাসমান বস্তু হিসেবে মাটির কণার উপস্থিতি পানির নমুনা বিশ্লেষণের সময় বিবেচনা করা উচিত। এই মাটির কণাগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমানে ধাতু থাকতে পারে। যদিও এই কণাগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয় না, কিন্তু এরা পানি খাওয়ার সময় মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। নমুনা পাত্রে দ্রবীভূত ধাতুগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য পানির নমুনাতে অ্যাসিড যোগ করা যা মাটি কণা থেকে আরও ধাতু দ্রবীভূত করতে পারে। তবে অ্যাসিড মেশানোর আগে পানি নমুনা থেকে মাটির কণা পরিস্রাবণ করা হয়, এই ফিল্টারের মধ্যে দ্রবীভূত ধাতুগুলি ক্ষতিকর হতে পারে।[১৮] জৈব অণুগুলির পার্থক্য করা আরও জটিল ও চ্যালেঞ্জিং।
এই পরিমাপের জটিল কাজগুলো করা ব্যয়বহুল হতে পারে। যেহেতু পানির মানের সরাসরি পরিমাপ ব্যয়বহুল হতে পারে, চলমান পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম সাধারণত সরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক প্রোগ্রাম এবং স্থানীয়ভাবে কিছু সম্পদ রয়েছে কিছু সাধারণ মূল্যায়নের জন্য। সাধারণ জনসাধারণের জন্য সরঞ্জামগুলির মধ্যে রয়েছে অন-সাইট পরীক্ষা কিট, যা সাধারণত বাড়িতে মাছের ট্যাঙ্কের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং জৈবিক মূল্যায়ন পদ্ধতি।
প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ সম্পাদনা
যদিও পানির গুণগত মান সাধারণত ল্যাবরেটরিগুলিতে নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়, তবে আজকাল, নাগরিকেরা পানি পান করার বিষয়ে সবসময় বাস্তবিক তথ্য দাবি করে। গত কয়েক বছরে, বিভিন্ন কোম্পানি পানির পিএইচ, ময়লা বা দ্রবীভূত অক্সিজেন স্তরের পরিমাপের জন্য বিশ্বব্যাপী রিয়েল-টাইম রিমোট নিরীক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন করছে।
খাবার পানির নির্দেশকসমূহ সম্পাদনা
পানির যে সব নির্দেশক পরিমাপ করা হয় তার পরিস্থিতিগত শ্রেণিবিভাগের একটি তালিকা নিম্নরূপঃ
- ক্ষারত্ব
- পানির রঙ
- পি.এইচ
- স্বাদ ও গন্ধ (জিওস্মিন, ২-মিথাইলিসবরনেওল (এমআইবি), ইত্যাদি)
- দ্রবীভূত ধাতু এবং লবণ (সোডিয়াম, ক্লোরাইড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম)
- অতিক্ষুদ্র প্রাণী যেমন ফিকেল কলিনফর্ম, ব্যাকটেরিয়া (এসছেরিছিয়া কোলি), ক্রিপ্টোসরপিডিয়াম এবং গায়ারিয়া লাম্বিয়া।
- দ্রবীভূত ধাতু ও উপধাতু (লেড, মার্কারি, আর্সেনিক, ইত্যাদি)
- দ্রবীভূত জৈব পদার্থ: রংযুক্ত দ্রবীভূত জৈব পদার্থ (সিডোওএম), দ্রবীভূত জৈব কার্বন (ডিওসি)
- রেডন
- ভারী ধাতু
- ফার্মাসিউটিক্যালস
- হরমোনি এনালগ
পরিবেশগত নির্দেশক সম্পাদনা
বাস্তবিক নির্দেশক সম্পাদনা
|
|
রাসায়নিক নির্দেশক সম্পাদনা
|
|
জৈবিক নির্দেশক সম্পাদনা
অনেক জায়গাতেই জৈবিক নিরীক্ষণের ম্যাট্রিক্স চালু করা হয়েছে এবং তা জায়গাতেই কীটপতঙ্গের প্রজাতি যেমন ইফেরোপতেরা, প্লেকোপতেরা এবং ত্রিচোপতেরা (সাধারণ নামগুলি যথাক্রমে, মেফ্লাই, স্টোনফ্লাই এবং ক্যাডিসফ্লাই) এর উপস্থিতি এবং পরিমাণ নিশ্চিত করার হয়। ইপিটি ইনডেক্স গুলো সাধারনত এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ভিন্ন হয়। কিন্তু একই অঞ্চলের মধ্যে যত বেশি এইসব প্রজাতি থাকবে পানির গুণগত মান তত ভাল হবে। যুক্তরাষ্ট্রে সংগঠনগুলি, যেমন ইপিএ একটি পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রাম চালু এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর সদস্যদের প্রজাতি শনাক্তকরণে নির্দেশিকা দিয়ে থাকে।[১৯][২০]
পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহী এমন ব্যক্তিরা যদি ল্যাব স্কেলে বিশ্লেষণ বা ব্যয় বহন করতে পারে না তবে তারা জৈবিক নির্দেশকগুলি ব্যবহার করে পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করতে পারে। একটি উদাহরণ হল আইওডাবলুটিইআর এর স্বেচ্ছাসেবক পানি পর্যবেক্ষণ কর্মসূচী, যার মধ্যে একটি বেনেটিক ম্যাক্রোইনভেরেট্রবেট সূচক যুক্ত রয়েছে।[২১]
বিভাল্ভ মোলস্যাক্স প্রধানত মিঠা পানি ও সামুদ্রিক পরিবেশ উভয়েরই জলজ স্বাস্থ্য নিরীক্ষণের জন্য জৈব নির্দেশক হিসেবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। তাদের পরিমাণ বা কাঠামো, শারীরবৃত্ত, আচরণ বা উপাদান বা যৌগের সংশ্লেষের মাত্রা বাস্তুতন্ত্রের দূষণ অবস্থা মাত্রাকে নির্দেশ করে। তারা খুবই উপকারী কারণ তারা নিরবচ্ছিন্ন থাকে ও তাদের যে পরিবেশে রাখা হয় তারা সেই পরিবেশের প্রনিধিত্ব করে। একটি সাধারণ প্রকল্প হচ্ছে মসল ওয়াচ প্রোগ্রাম,[২২] কিন্তু আজ বিশ্বব্যাপী তা ব্যবহার করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকান স্কোরিং সিস্টেম (এসএএসএএস) পদ্ধতিটি হল একটি জৈবিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা যা পানির গুণগত মানের বেনেটিক ম্যাক্রোইনভেরোট্র্যাব্রেটের উপস্থিতি উপর ভিত্তি করে তৈরি। এসএএএসএস জলজ জৈবায়ন সরঞ্জামটি গত ৩০ বছর ধরে সংশোধিত হয়ে আসছে এবং এখন এটি পঞ্চম সংস্করণ (এসএএএসএস৫) যা আন্তর্জাতিক মানের আইওএস / আইইসি ১৭০২৫ প্রোটোকল অনুযায়ী বিশেষভাবে সংশোধন করা হয়েছে।[২৩] দক্ষিণ আফ্রিকার পানি বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক নদীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি আদর্শ পদ্ধতি হিসেবে এসএএএসএস৫ পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়, যা জাতীয় নদী স্বাস্থ্য কর্মসূচী এবং জাতীয় নদীগুলির তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে সাহায্য করেছে।
আদর্শ এবং প্রতিবেদন সম্পাদনা
আন্তর্জাতিক সম্পাদনা
- ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পানির গুণগত মানের জন্য নির্দেশিকা প্রকাশ করে। [২৪]
- ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্রাকডাইজেশন (আইএসও), আইসিএস ১৩.০৬০ সেকশনে পানির গুণগত মানের একটি প্রবিধান প্রকাশ করেছে। যেখানে পানির নমুনা সংগ্রহ, খাবার পানি, শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত পানি, পয়নিস্কাশনতন্ত্র এবং পানির রাসায়নিক, বাহ্যিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে বলা আছে।[২৫] আইসিএস ৯১.১৪০.৬০ তে পানি সরবরাহতন্ত্রের আদর্শসমূহ সম্পর্কে বলা আছে। [২৬]
পরিবেশগত পানি এবং খাবার পানির জন্য জাতীয় বিশেষ উল্লেখ সম্পাদনা
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পাদনা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পানি নীতি মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত:
- ২১শে মে, ১৯৯১ তারিখে প্রকাশিত পৌর ও কিছু শিল্প বর্জ্য নির্গমন সম্পর্কিত শহর অঞ্চলের বর্জ্য পানি পরিশোধন (৯১ / ২৭১ / ইইসি) নির্দেশনা;
- ২১ মে ১৯৯৮ সালের খাবার পানি সম্পর্কিত খাবার পানি নির্দেশিকা (৯৮/৮৩ / ইসি);
- ২৩ অক্টোবর ২০০০ তারিখে প্রকাশিত জলসম্পদের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জলবায়ু নির্দেশিকা (2০০০/৬০ / ইসি);
ভারত সম্পাদনা
- ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইছিএমআর) এর খাবার পানির আদর্শসমূহ;
দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পাদনা
1996 সালের জলমানের নির্দেশিকাগুলিতে সম্ভাব্য ব্যবহারকারীর প্রকারগুলির (যেমন, অভ্যন্তরীণ, শিল্প) অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকার জল গুণমানের নির্দেশিকাগুলিকে গোষ্ঠীভুক্ত করা হয়।[২৭] পানির গুণগত মান দক্ষিণ আফ্রিকান ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (এসএএনএস) অনুযায়ী ২৪১ টি স্পেসিফিকেশন ভাগ করা হয়।[২৮]
যুক্তরাজ্য সম্পাদনা
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে দূষণের গ্রহণযোগ্য মাত্রাগুলি পানি সরবরাহের জন্য "ওয়াটার সাপ্লাই (ওয়াটার কোয়ালিটি) রেগুলেশনস 2000" তালিকাভুক্ত করা হয়।[২৯]
অমেরিকা সম্পাদনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পানির জন্য পানির গুনগত মানের আদর্শগুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।[৩০] যেখানে বিভিন্ন জলাশয়ের পানির ব্যবহারের জন্য আলাদা করে বলা রয়েছে (যেমন, মাছের আবাসস্থল, খাবার পানি সরবরাহ, বিনোদনমূলক ব্যবহার)। ক্লিন ওয়াটার অ্যাক্ট (সিডব্লিউএ) –এর অধিনে রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের অধীনস্থ সংস্থাগুলোকে (রাজ্য, অঞ্চল এবং আদিবাসী সংস্থা) তাদের এলাকার পানির গুনগত মানের উপর দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিতে হয় । এই প্রতিবেদনগুলি ৩০৩ (ডি) এবং ৩০৫ (বি) প্রতিবেদন নামে পরিচিত; যা তাদের নিজ নিজ সিডব্লিউএ প্রভিসন নামে পরিচিত এবং ইপিএ তে জমা দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে অনুমোদন করা হয়।[৩১] ইপিএ তে প্রতিটি রাজ্য একটি "ইন্টিগ্রেটেড রিপোট" জমা দেয় যার মধ্যে রয়েছে ওই রাজ্যের পানি এবং রাজ্যের সমস্ত জলাশয়ের অবস্থা সম্পর্কে বলা থাকে।[৩২] কংগ্রেসের ন্যাশনাল ওয়াটার কোয়ালিটি ইনভেন্টরি রিপোর্ট পানির গুনগত মানের উপর একটি সাধারণ প্রতিবেদন, নদীর প্রবাহ ও নদী সংখ্যা এবং তাদের সমষ্টিগত অবস্থা সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য প্রদান করে।[৩৩] সিডব্লিউএ, রাজ্যের সমস্ত জলাশয়ের পানির ব্যবহারের জন্য আদর্শ ঠিক করে দিয়েছে যেন সেখানে পানির গুনগত মান রক্ষা করা হয়। যদি কোন এই মর্মে প্রমাণিত হয় যে একটি প্রবাহ, নদী বা হ্রদ তার একাধিক মনোনীত ব্যবহারের জন্য পানির গুণমানের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন সেটিকে অস্বস্তিকর বা দূষিত পানি উৎসের তালিকায় রাখা হয়। রাজ্যের প্রতি জলাশয়ের পানি নির্দিষ্ট ব্যবহারের জন্য ঠিক করা হয় , এই পানি ব্যবহারে দূষণকারী পদার্থের যে মোট সর্বোচ্চ দৈনিক লোড (টিএমদিএলএস) তৈরি হবে তার জন্য একটি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিকাশ আবশ্যক। পানির সঠিক ব্যবহারের জন্য এই টিএমদিএলএস এর পরিমাণ কমিয়ে আনা দরকার।[৩৪]
খাবার পানির আদর্শ গুলো, যা পাবলিক ওয়াটার সিস্টেমে প্রয়োগ করা হয়, সেগুলো নিরাপদ খাবার পানি আইনের অধীনে ইপিএ থেকে পাশ হয়ে আসে।
আরও দেখুন সম্পাদনা
|
|
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
- আন্তর্জাতিক সংস্থা
- Drinking water quality guidelines – World Health Organization
- Global Water Quality online database – United Nations Global Environment Monitoring System
- The National River Health Programme – South Africa
- ইউরোপ
- যুক্তরাষ্ট্র
- U.S. Centers for Disease Control and Prevention (CDC) – Drinking water quality and testing
- U.S. National Water Quality Monitoring Council (NWQMC) – Partnership of federal and state agencies
- U.S. Geological Survey – National Water Quality Assessment Program
- U.S. Environmental Protection Agency – Water Data and Tools
- U.S. Dept. of Agriculture – information on water quality and agriculture
- American Water Resources Association – professional association
- E. Coli and Indiana Lakes and Streams – Purdue University
- অন্যান্য সংস্থা
- [NutrientNet], an online nutrient trading tool developed by the World Resources Institute, designed to address nutrient-related water quality issues. See also the PA NutrientNet website designed for Pennsylvania's nutrient trading program.
- eWater Cooperative Research Centre (eWater Ltd) – Australian Government funded initiative supporting water management decision support tools
- MolluSCAN eye ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে – CNRS and the University of Bordeaux, France. Online biomonitoring of water quality by a 24/7 record of various bivalve molluscs' behavior and physiology worldwide (biological rhythms, growth rate, spawning, daily behavior)