ডেট্রয়েট
ডেট্রয়েট (ইংরেজি: Detroit) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের সর্ববৃহৎ শহর এবং ওয়েন কাউন্টির কাউন্টি সিট। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই শহর ডেট্রয়েট নদীর তীরবর্তী শহরগুলির মধ্যে প্রধান। উইন্ডসরের উত্তরে অবস্থিত ডেট্রয়েটই যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রধান শহর যা কানাডার দিকে দক্ষিণমুখী।[৫] ১৭০১ সালের ২৪শে জুলাই ফ্রান্সের অ্যানটনি দ্য ন্যাডিলিয়াক কর্তৃক ডেট্রয়েট নগর প্রতিষ্ঠিত হয়। “ডেট্রয়েট” শব্দটি ফ্রেঞ্চ détroit শব্দ হতে উদ্ভূট হয়েছে যার অর্থ “সংকীর্ণ জলধারা”, কারণ ভৌগলিকভাবে এই শহরটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমানা এলাকায় অবস্থিত গ্রেট লেক-এর সাথে ডেট্রয়েট নদীর যোগাযোগ স্থাপন করে। ঐতিহ্যগতভাবে ডেট্রয়েট পৃথিবীর “মোটরগাড়ির শহর” বা অটোমোটিভ সিটি হিসেবে পরিচিত।[৬] ডেট্রয়েট ভিত্তিক মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এমনকি সমগ্র বিশ্বে সর্ববৃহৎ।[৭][৮]
ডেট্রয়েট | |
---|---|
শহর | |
সিটি অফ ডেট্রয়েট | |
ডাকনাম: মোটরগাড়ি শহর, Motown, Renaissance City, The D, Hockeytown, The Automotive Capital of the World, Rock City, The 313 | |
নীতিবাক্য: Speramus Meliora; Resurget Cineribus (Latin: We Hope For Better Things; It Shall Rise From the Ashes) | |
Location in Wayne County, Michigan and the state of Michigan | |
Location in the contiguous United States | |
স্থানাঙ্ক: ৪২°১৯′৫৩″ উত্তর ৮৩°০২′৪৫″ পশ্চিম / ৪২.৩৩১৩৯° উত্তর ৮৩.০৪৫৮৩° পশ্চিম[১] | |
রাষ্ট্র | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
অঙ্গরাজ্য | মিশিগান |
কাউন্টি | ওয়েন কাউন্টি |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৭০১ |
গঠনকাল | ১৮০৬ |
সরকার | |
• ধরন | মেয়র-কাউন্সিল |
• মেয়র | ডেভ বিং (ডি) |
• জরুরী ম্যানেজার | Kevyn Orr |
• সিটি কাউন্সিল | Members
|
আয়তন[২] | |
• শহর | ১৪২.৮৭ বর্গমাইল (৩৭০.০৩ বর্গকিমি) |
• স্থলভাগ | ১৩৮.৭৫ বর্গমাইল (৩৫৯.৩৬ বর্গকিমি) |
• জলভাগ | ৪.১২ বর্গমাইল (১০.৬৭ বর্গকিমি) |
• পৌর এলাকা | ১,২৯৫ বর্গমাইল (৩,৩৫০ বর্গকিমি) |
• মহানগর | ৩,৯১৩ বর্গমাইল (১০,১৩০ বর্গকিমি) |
উচ্চতা[১] | ৬০০ ফুট (২০০ মিটার) |
জনসংখ্যা (২০১২)[৩][৪] | |
• শহর | ৭,০১,৪৭৫ |
• ক্রম | US: ১৮তম |
• জনঘনত্ব | ৫,১৪২/বর্গমাইল (১,৯৮৫/বর্গকিমি) |
• পৌর এলাকা | ৩৭,৩৪,০৯০ (US: ১১তম) |
• মহানগর | ৪২,৯২,০৬০ (US: ১৪তম) |
• CSA | ৫৩,১১,৪৪৯ (US: ১২তম) |
বিশেষণ | ডেট্র্যেটার |
সময় অঞ্চল | ইএসটি (ইউটিসি−৫) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | ইডিটি (ইউটিসি−৪) |
এলাকা কোড | ৩১৩ |
FIPS code | ২৬-২২০০০ |
GNIS feature ID | ১৬১৭৯৫৯[১] |
প্রধান বিমানবন্দর | Detroit Metropolitan Wayne County Airport (DTW) |
ওয়েবসাইট | DetroitMI.gov |
২০০৮ সালের জরিপ অনুসারে ডেট্রয়েটের জনসংখ্যা ৯১২,০৬২ এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম জনবহুল শহর।[৩] ১৯৫০ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম শহর ছিল, তবে পরবর্তিকালে শহরের অধিকাংশ অধিবাসী উপশহর ও পার্শ্ববর্তী শহরে চলে যায়।
ডেট্রয়েট বলতে অনেক সময় মেট্রো ডেট্রয়েটকেও বোঝানো হয়। মেট্রো ডেট্রয়েট হল ডেট্রয়েটের একটি বৃহৎ অঞ্চল যার জনসংখ্যা প্রায় ৪,৪২৫,১১০ এবং ডেট্রয়েট মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা ৫,৩৫৪,২২৫ যা একে যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম বৃহৎ মেট্রোপলিটন এলাকায় পরিণত করেছে। ডেট্রয়েট-উইন্ডসর এলাকা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী একটি বাণিজ্যিক অঞ্চল যার জনসংখ্যা প্রায় ৫,৭০০,০০০।[৯]
ইতিহাস সম্পাদনা
ডেট্রয়েট শহরের নামটি ডেট্রয়েট নদী (ফ্রেঞ্চ:le détroit du Lac Érie, যার অর্থ লেক এরির প্রণালীর ক্ষীণ জলধারা)থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই নদীটি হিউরন এবং এরি লেককে সংযুক্ত করেছে।
১৭০১ সালে ফরাসি পরিব্রাজক আন্টোনিও ক্যাডিলায়েক এবং তাঁর সহযোগী একশাধিক জন ফরাসি-কানাডিয়ান ঐ স্থানে ফোর্ট পনচার্টেইন দ্য ডেট্রয়েট নামে একটি বসতি স্থাপন করেন। এই বসতি ফ্রান্সের ষোড়শ রাজা লুইসের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রান্স তখন এই অঞ্চলে মানুষের বসবাসের জন্য বিনামূল্যে জমি প্রদান করে, ১৭৬৫ সালে এখানে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৮০০ তে যা ঐ সময়ে মন্ট্রিল এবং নিউ অরলিন্সের মাঝে সবচেয়ে শহরে পরিণত হয়।[১০]
১৭৬০ সালে ফরাসি ও রেড ইন্ডিয়ানদের যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং তাঁরা শহরের নাম ছোট করে রাখে শুধু ডেট্রয়েট। ১৮০৫ সালে অগ্নিপাতের ফলে শহরটির অধিকাংশ এলাকা ধ্বংশ হয়ে যায়। কেবল নদী তীরবর্তী একটি গুদাম ঘর এবং কাঠের ঘর-বাড়ির চিমনিগুলো এই আগুন থেকে রক্ষা পায়।[১১]
১৮০৫ থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত ডেট্রয়েট মিশিগান অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ছিল। ক্রমেই শহরটি আয়তনে বৃদ্ধি পায়, সেই সাথে এর রাস্তাগুলোও প্রশস্ত করা হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধে ব্রিটিশ অবরোধের কারণে শহরটি ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ১৮১৩ সালেই আবার তা ফিরে পায়। এটি পুরোপুরি একটি শহর হিসেবে গঠিত হয়।[১২]
১৮০০ শতকের শেষের দিকে এবং ১৯০০ শতকের প্রথমদিকে ডেট্রয়েটে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতিও সাধিত হয়। ঐসময়ে ডেটড়য়েটকে বলা হত “প্যারিস অফ দ্য ওয়েস্ট” বা আমেরিকার পশ্চিমাংশের প্যারিস। টমাস আলভা এডিসন শহরে বিদ্যুতায়ন করেন।[১২] ভৌগলিকভাবে ডেট্রয়েটের অবস্থান ছিল গ্রেট লেকের তীরবর্তী অঞ্চলে, ফলে এটি আঞ্চলিক পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৮৩০ থেকে পরবর্তী সময়ে ডেট্রয়েটের অগ্রগতি অব্যাহত থাকে। এসময় শহরে জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে ওঠে। ১৮৯৬ সালে হেনরি ফোর্ড ডেট্রয়েটের মার্ক এভিনিউ-এ একটি ভাড়া করা কারখানায় মোটরগড়ি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯০৪ সালে হেনরি ফোর্ড ফোর্ড মোটর কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ফোর্ডের মোটরগাড়ি নির্মাণ এবং ডেট্রয়েটের মোটরগাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অগ্রপথিকগণ যেমন-উইলিয়াম সি. ডুরেন্ট, প্যাকার্ড, ওয়াল্টার ক্রিসলারদের প্রচেষ্টা ডেট্রয়েটকে বিশ্বের মোটরগাড়ির রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।[১২]
১৯৫০ এর দশকে মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প সঙ্ঘতকরণের ফলে ডেট্রয়েটের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০ সালে রেনেইসেন্স সেন্টার নির্মিত হয় যা বর্তমানে জেনারেল মোটর কোম্পানির সদর দপ্তর। এই সুউচ্চ ভবন ডেট্রয়েটের স্থাপত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
১৯৮০ সালে ডেট্রয়েটে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনের আয়োজন করা হয়, যা রোনাল্ড রেগানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একজন সার্থক প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে। এরপর প্রায় তিন দশক ধরে অপরাধ, মাদকাশক্তি এবং অপর্যাপ্ত পুলিশের কারণে ডেট্রয়েটের এলমুর্স্টের মত অনেক এলাকাই ধ্বংশ হয়ে যায়।[১৩] ১৯৮০এর দশকে পরিত্যাক্ত স্থাপনাগুলো বিধ্বস্ত করা হয় যাতে এগুলো মাদকাশক্তদের আশ্রয়স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে। এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল একটি উন্নত শহর হিসেবে ডেট্রয়েটকে গড়ে তোলা।[১৪]
১৯৯০ এর দশকে ডেট্রয়েটের পুনরুভ্যুদয় ঘটে, বিশেষ করে শহরের প্রাণকেন্দ্র বা মধ্যবর্তী অঞ্চলে অনেক সুউচ্চ ভবন গড়ে উঠে। যেমন এসময় কমেরিকা টাওয়ার (বর্তমানে ওয়ান ডেট্রয়েট সেন্টার নামে পরিচিত) নির্মিত হয়। এটি মিশিগানের দ্বিতীয় সুউচ্চ ভবন। এছাড়া এসময় জুয়া খেলার তিনটি ক্যাসিনোও গড়ে ওঠে। এগুলো হলঃ এমজএম গ্র্যান্ড ডেট্রয়েট, মোটরসিটি ক্যাসিনো এবং গ্রিকটাউন ক্যাসিনো। তবে এগুলো ২০০৭-০৮ সালে পর্যটকদের রিসোর্টে পরিণত হয়। ডেট্রয়েট টাইগার এবং ডেট্রয়েট লায়ন্স নামে দুইটি স্টেডিয়াম যথাক্রমে ২০০০ ও ২০০২ সালে নির্মিত হয়। ডেট্রয়েটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অল স্টার গেম, সুপার বল, ২০০৬ ওয়ার্ল্ড সিরিজ, রেসলার ম্যানিয়া।
শহরের অধিকাংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অন্টারিওর উইন্ডসরের মত নদীর তীরকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। ২০০৭ সালের প্রথমার্ধে ডেট্রয়েট ইন্টারন্যাশনাল রিভারফ্রন্ট এর প্রথম অংশ নির্মিত হয়। এই নতুন নগর উন্নয়নের প্রধান লক্ষ্য হল শহরের অর্থনীতিকে পর্যটনের মাধ্যমে সমুন্নত করা।[১৫] এই নদীর ধারে অনেক দামী ও বিলাসবহুল সুউচ্চ ভবন গড়ে উঠছে। ডেট্রয়েটের সীমান্তে লেখা রয়েছেঃ “ডেট্রয়েটে স্বাগতম, ১৭০১ সালে প্রতিষ্ঠিত রেনেইসেন্স শহর।”[১৬][১৭]
ভূগোল সম্পাদনা
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা
মার্কিন আদমশুমারি দপ্তরের জরিপ অনুসারে ডেট্রয়েট শহরের মোট আয়তন ১৪৩.০ বর্গ মাইল (৩৭০ কিলোমিটার), এর মধ্যে ১৩৮.৮ বর্গ মাইল (৩৫৯ বর্গ কি.মি) হল বূমি এবং ৪.২ বর্গ মাইল (১১ বর্গ কি.মি) হল জল। মেট্রোপলিটন ডেট্রয়েট এবং দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগান অঞ্চলের প্রধান শহর ডেট্রয়েট।
ইউনিভার্সিটি ডিসট্রিক্ট এলাকা ডেট্রয়েটের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উভুতে অবস্থিত এলাকা, এটি শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং উচ্চতা ৬৭০ ফুট (২০০ মিটার)। ডেট্রয়েট নদীর তীরবর্তী এলাকা সবচেয়ে নিম্ন এলাকা (৫৭৯ ফুট বা ১৭৬ মিটার)। ডেট্রয়েট রিভার ইন্টারন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজি উত্তর আমেরিকার একমাত্র আন্তর্জাতিক বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এলাকা, এটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে জলাভূমি, উপকূলীয় অঞ্চল, বিল, বালুচর রয়েছে। এর পাশ দিয়ে ডেট্রয়েট নদী এবং ওয়াস্টার্ন লেক এরি বয়ে গেছে।
তিনটি সড়ক ব্যবস্থা ডেট্রয়েট শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে: ফ্রেঞ্চ টেমপ্লেট, ওয়াশিংটন দি.সি. থেকে আগত রেডিয়াল এভিনিউ এবং নর্থ-সাউথ রোড। ডেট্রয়েটই যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সীমান্তবর্তী একমাত্র প্রধান শহর যেখানে কানাডায় যেতে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতে হয়।
ডেট্রয়েটে চারটি সীমান্ত পারাপার রয়েছে: অ্যাম্বাসেডর ব্রিজ এবং ডেট্রয়েট-উইন্ডসর টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। মিশিগান সেন্ট্রাল রেলওয়ে টানেল দিয়ে রেল চলাচল হয়। চতুর্থ সীমান্ত পারাপার ডেট্রয়েট-উইন্ডসর ট্রাক ফেরি, এটি উইন্ডসর লবণ খনি এবং জুগ আইল্যান্ডের নিকটেই অবস্থিত। জুগ আইল্যান্ডের নিকটে ডেট্রয়েটের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত শেষ হয়, এখানে ১,৫০০ একরের (৬১০ হেক্টর) একটি লবণ খনি আছে যা ভূমির ১,১০০ ফুট (৩৪০ মিটার) নিচে অবস্থিত। এখানে ডেট্রয়েট লবণ কোম্পানি খনির প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) সড়ক রয়েছে।[১৮][১৯]
জলবায়ু সম্পাদনা
ডেট্রয়েট এবং দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগান অঞ্চলের জলবায়ু মহাদেশীয় জলবায়ুর অনুরূপ যা গ্রেট লেক দ্বারা প্রভাবিত। এখানে শীতকালে ঠান্ডা এবং স্বাভাবিক তুষারপাত হয়।[২০] এসময় কখনও কখনও রাতে তাপমাত্রা ১০°F (−১২ °C) এরও নিচে নেমে যায়। গ্রীষ্মকালে সাধারণত গরম আবহাওয়া বিরাজ করে। এসময় কখনও কখনও তাপমাত্রা ১০০ °F (৩৮ °C) অতিক্রম করে। এ অঞ্চলে মাসিক গড় বৃষ্টিপাত বা তুষারপাতের পরিমাণ দুই থেকে চার ইঞ্চি। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে সাধারণত তুষারপাত হয় এবং এর পরিমাণ মাসিক ১১ থেকে ২০ ইঞ্চি (২৮ থেকে ৫১ সেন্টিমিটার)।[২১] সর্বোচ্চ ধারণকৃত তাপমাত্রা ১১৫.০ °F (৪৬.১ °C) যা ১৯৩৪ সালের ২৪ জুলাই এ ধারণ করা হয়, অপরপক্ষে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা −২৪ °F (−৩৭ °C) যা ১৮৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর ধারণ করা হয়।[২২]
Detroit-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
উৎস: NCDC[২৩] |
স্থাপত্যশৈলী সম্পাদনা
ডেট্রয়েটে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যশৈলী লক্ষ্য করা যায়। রিভারফ্রন্টের সামনে এবং এর নিকটবর্তী সুউচ্চ বিল্ডিংগুলো পোস্ট-মডার্ন বা অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। জেনারেল মোটরসের সদর দপ্তর রেনেইসেন্স সেন্টার এবং কমেরিকা টাওয়ার বা ওয়ান ডেট্রয়েট সেন্টার ভবন দুইটি একত্রে স্বাতন্ত্রমন্ডিত এবং সহজেই শণাক্তযোগ্য স্কাইলাইন গঠন করে। এছাড়া গার্ডিয়ান বিল্ডিং, পেনোবস্কট বিল্ডিং, ফিশার বিল্ডিং, ক্যাডিলাক প্লেস, ফক্স থিয়েটার, ডেট্রয়েট অপেরা হাউস, ডেট্রয়েট ইনস্টিটিউট অফ আর্টস্ ডেট্রয়েটের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা।[২৪][২৫]
শহরের প্রাণকেন্দ্র এবং রিভারফ্রন্ট অঞ্চলে সুউচ্চ এবং অত্যাধুনিক স্থাপত্য লক্ষ্য করা গেলেও অধিকাংশ এলাকায় অনুচ্চ এবং একক পরিবার বসবাস উপযোগী দালান রয়েছে। অবশ্য শহরের বেশ কিছু স্থানে আবাসিক সুউচ্চ দালানও দেখা যায় যেমন- রিভারফ্রন্টের পূর্বে, পালমার পার্ক, উডল্যান্ড এলাকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে নির্মিত স্থাপত্যগুলোতে ঐসময়ের স্থাপত্যশৈলী লক্ষ্য করা যায়, এসব স্থাপত্যে কাঠ, বড় ইটের ব্যবহার অধিক। ব্রাশ পার্ক, উডব্রিজ, ইন্ডিয়ান ভিলেজ, বস্টন এডিসন এলাকায় এধরনের স্থাপত্য রয়েছে। ডেট্রয়েটের স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক দালান এবং অন্যান্য স্থাপত্যকর্ম ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ হিস্টোরিক্যাল প্লেস কর্তৃক সংরক্ষিত। এছাড়া ডেট্রয়েটে বিভিন্ন প্রাচীন এবং বিশ শতকের স্থাপত্য বিদ্যমান।[২৫] এখানে কিছু উচ্চ স্থাপত্যশৈলীর গির্জা রয়েছে যেমন- সেন্ট জোসেফ ক্যাথলিক চার্চ।[২৪] এসব স্থাপত্য সংরক্ষণ এবং রক্ষনাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে।[২৬]
ডেট্রয়েট ইন্টারন্যাশনাল রিভারফ্রন্ট শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য। বিভিন্ন উদ্যান বা পার্ক, সুউচ্চ বাণ্যিজিক বা আবাসিক ভবন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদির সমন্বয়ে এই রিভারফ্রন্ট গঠিত। ট্রাই কন্টিনেন্টাল পার্ক এর পাশে অবস্থিত। এটি মিশিগানের প্রথম নগড় উদ্যান। রিভারফ্রন্টের ধার দিয়ে সুদীর্ঘ ফুটপাত অবস্থিত।[২৭]
অর্থনীতি সম্পাদনা
ডেট্রয়েট এবং এর প্রতিবেশী অঞ্চলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শিল্পাঞ্চল। বিশেষ করে বিশ্বের তিনটি বড় গাড়ি নির্মাতা, জেনারেল মোটরস, ফোর্ড এবং ক্রিসলার এর প্রধান সদর দপ্তর এবং উৎপাদন কেন্দ্র এই অঞ্চলে অবস্থিত। ডেট্রয়েট বিশ্ব-বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে এবং উইন্ডসরে পৃথিবীর বেশ কিছু বড় আন্তর্জাতিক ফার্ম রয়েছে। প্রায় ৮০,৫০০ মানুষ ডেট্রয়েটের বাণিজ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত যা শহরটির সমগ্র কর্মসংস্থানের ২১%।[২৮]
এই অঞ্চলের প্রায় চার হাজার কারখানা রয়েছে।[২৯] স্থানীয় মোটর-শিল্প প্রধানত মেট্রো ডেট্রয়েট অঞ্চলে অবস্থিত।নতুন গাড়ি উৎপাদন, বিক্রয় এবং মোটর-শিল্প সংশ্লিষ্ট চাকরি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের দশ ভাগের এক ভাগ।[৩০] এছাড়া এই এলাকা প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট কাজের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৪ সালের বর্ডার ট্রান্সপোর্টেশন পার্টনারশিপের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, উইন্ডসর-ডেট্রয়েট অঞ্চলের ১৫০,০০০ কর্মসংস্থান এবং ১৩ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক উৎপাদন প্রধানত ডেট্রয়েটের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পারাপারের উপর নির্ভর করে।[৩১]
ডেট্রয়েট অঞ্চল মোটর-শিল্পের অর্থনৈতিক চক্রের সাথে অভ্যস্ত। এই শিল্পে ক্রমাগত রোবট প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রবর্তনের ফলে সংশ্লিষ্ট শিল্পে-বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি নির্মাণ শিল্প এবং রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি এদের মধ্যে অন্যতম।[৩২][৩৩][৩৪] এই অঞ্চলের কর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল্গুলো থেকে কিছুটা বেশি।[৩৫] এছাড়া এই অঞ্চলের অধিবাসীদের আয়ের ২.৫০% আয়কর হিসেবে দিতে হয়।[৩৬] ২০১০ এর জানুয়ারীতে ডেট্রয়েট অঞ্চলের বেকারত্ব হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৫.৩% তে দাঁড়িয়েছে।[৩৭] ২০০৯ থেকে এই অঞ্চলের কর্মসংস্থানের হার ১.৭% এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।[৩৮]
অন্যান্য দেশের প্রতিদ্বন্দী গাড়ি-নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিকাশের কারণে ডেট্রয়েটের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০০০ সাল ও পরবর্তি সময়ের জ্বালানী-সংকট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব বৃদ্ধি হার এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ বৃদ্ধি এই চাপকে আরও তীব্র করেছে। ২০০৯ এর জানুয়ারীতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গাড়ি-নির্মাণ শিল্পের পুনরুদ্ধারের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে ডেট্রয়েটে গাড়ি-নির্মাতাদের আরও অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, যেমন- শিল্প পুনর্গঠন।
২০১০ সালে জেনারেল মোটরস শেয়ার বাজারে প্রাথমিক গণ-প্রস্তাব ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি কোষ সংবলিত গাড়ি নির্মাণে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছে। এদিকে ক্রিসলার তাদের গবেষণা ও উন্নয়নের অধিকাংশই বায়োডিজেল-এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রয়াসে ব্যয় করছে। ২০০৯ এর অগাস্টে মিশিগান ও ডেট্রয়েটের গাড়ি-নির্মাণ শিল্প লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য প্রায় ১.৩৬ বিলিয়ন ডলার মার্কিন জ্বালানি অধিদপ্তর থেকে অনুদান হিসেবে পেয়েছে।
ডেট্রয়েটের অনেক প্রতিষ্ঠান উদীয়মান প্রযুক্তি যেমন-বায়োপ্রযুক্তি, ন্যানোপ্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি এবং হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষ খাতে বিনিয়োগ করেছে। ডেট্রয়েট মেট্রোর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রে বড় কোম্পানিগুলোকে স্থানান্তরের জন্য তারবিহীন ইন্টারনেটে, কর অনুদান, বিনোদন, একটি আন্তর্জাতিক নদীতীর এবং সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানি এখানে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করেছে। এদের মধ্যে কম্পিউওয়্যার বিশ্ব সদর-দপ্তর, ওনস্টার, রেনেইসেন্স সেন্টারে এইচপি-এর আঞ্চলিক অফিস, ওয়ান কেনেডি স্কয়ারে আর্ন্সট এন্ড ইয়ং-এর অফিস উল্লেখযোগ্য।
জনপরিসংখ্যান সম্পাদনা
ঐতিহাসিক জনপরিসংখ্যান | ||||
---|---|---|---|---|
আদমশুমারি | শহর[৩৯] | ডেট্রয়েট মেট্রো[৪০] | অঞ্চল[৪১] | |
১৮২০ | 1,422 | N/A | N/A | |
১৮৩০ | 2,222 | N/A | N/A | |
১৮৪০ | 9,102 | N/A | N/A | |
১৮৫০ | 21,019 | N/A | N/A | |
১৮৬০ | 45,619 | N/A | N/A | |
১৮৭০ | 79,577 | N/A | N/A | |
১৮৮০ | 116,340 | N/A | N/A | |
১৮৯০ | 205,877 | N/A | N/A | |
১৯০০ | 285,704 | 542,452 | 664,771 | |
১৯১০ | 465,766 | 725,064 | 867,250 | |
১৯২০ | 993,678 | 1,426,704 | 1,639,006 | |
১৯৩০ | 1,568,662 | 2,325,739 | 2,655,395 | |
১৯৪০ | 1,623,452 | 2,544,287 | 2,911,681 | |
১৯৫০ | 1,849,568 | 3,219,256 | 3,700,490 | |
১৯৬০ | 1,670,144 | 4,012,607 | 4,660,480 | |
১৯৭০ | 1,514,063 | 4,490,902 | 5,289,766 | |
১৯৮০ | 1,203,368 | 4,387,783 | 5,203,269 | |
১৯৯০ | 1,027,974 | 4,266,654 | 5,095,695 | |
২০০০ | 951,270 | 4,441,551 | 5,357,538 | |
২০০৯* | 910,920 | 4,403,437 | 5,327,764 | |
*Estimates [৩][৪] Metro: Metropolitan Statistical Area (MSA) Region: Combined Statistical Area (CSA) |
২০০৯ সালে ৯১০,৯২০ জনসংখ্যা নিয়ে ডেট্রয়েট যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম জনবহুল শহরে পরিণত হয়। ডেট্রয়েট বলতে মেট্রো ডেট্রয়েটকেও বোঝানো হয়। মেট্রো ডেট্রয়েট মিশিগানের ছয়টি কাউন্টির সমন্বয়ে গঠিত একটি এলাকা যার জনসংখ্যা ৪,৪০৩,৪৩৭। মেট্রো ডেট্রয়েট যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম বৃহৎ মেট্রোপলিটন এলাকা ২০০৯ এর আদমশুমারি অনুযায়ী মেট্রো ডেট্রয়েটের জনসংখ্যা ৫,৩২৭,৭৬৪। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে অবস্থিত ডেট্রয়েট-উইন্ডসর অঞ্চল দুই দেশের আমদানি-রপ্তানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৫,৭০০,০০০। এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের অন্যতম কারণ অভিবাসন।
২০০৭ সালে ডেট্রয়েটের মোট জনসংখ্যার ৩৩.৮% দারিদ্য সীমার নিচে করত যা যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। তবে এই দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর অধিকাংশেরই বসবাস ডেট্রয়েটের উপশহরগুলোতে। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ডেট্রয়েটের জনসংখ্যা প্রায় ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ উদীমান মোটর-নির্মাণ শিল্পে কর্মসংস্থান লাভের আশায় অধিক সংখ্যক ইউরোপিয়ান ও মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের আগমন। তবে ১৯৫০ সাল থেকে ডেট্রয়েটের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শহরের পার্শ্ববর্তী উপশহরগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে। ১৯৩০ সালে ১২০,০০০ এরও অধিক কৃষাঙ্গ মানুশ ডেট্রয়েটের অধিবাসী ছিল। ১৯১০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যবর্তি সময়েই এসকল কৃষাঙ্গের অধিনাগশ ডেট্রয়েটে স্থানান্তরিত হয়।
১৯৫০ সালে ডেট্রয়েটের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার হ্রাস পায়। তখন শহরের জনসংখ্যা ছিল ১,৮৪৯,৫৬৮। ২০০০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী ডেট্রয়েটের জনসংখ্যা ৯৫১,২৭০, পরিবারের সংখ্যা ২১৮,৩৪১ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ মাইলে ৬,৮৫৪.১ জন (২,৬৪৬.৭ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জন)। শহরের বাড়ির সংখ্যা ৩৭৫,০৯৬ এবং প্রতি মাইলে বাড়ি ২,৭০৩.০টি (প্রতি কিলোমিটারে ১,০৪৩.৬টি) জনসংখ্যার ৮১.৬% কৃষাঙ্গ, ১২.৩% শ্বেতাঙ্গ, ১.০% এশিয়ান, ০.৩% আমেরিকান, ০.০৩% প্যাসিফিক আইল্যান্ডের অধিবাসী এবং ২.৫% অন্যান্য অধিবাসী ২.৩% দুইটি বা ততোধিক জাতি এবং ৫.০% হিসপ্যানিক (প্রধানত পুয়েরতো রিকান বা মেক্সিকান)।
শিক্ষা সম্পাদনা
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদনা
ডেট্রয়েটে বেশ কিছু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গবেষণাকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় ডেট্রয়েটে অবস্থিত। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইউনিভার্সিটি অফ ডেট্রয়েট মার্সি, কলেজ ফর ক্রিয়েটিভ স্টাডিস, লিউইস কলেজ অফ বিজনেস, মেরিগ্রুভ কলেজ, ওয়েন কাউন্টি কমিউনিটি কলেজ। ২০০৯ এর জুনে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ অস্টিওপেথিক মেডিসিন ডেট্রয়েটে তাদের একটি ক্যাম্পাস চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত ডেট্রয়েট কলেজ অফ ল ১৮৯১ সালে ডেট্রয়েটে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে কলেজটি মিশিগানের ইস্ট ল্যান্সিং এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান ১৮১৭ সালে ডেট্রয়েটে প্রতিষ্ঠিত হয়, পরবর্তিতে ১৮৩৭ সালে এটি এ্যান আর্বরে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৯ সালে ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান-ডিয়ারবর্ন ডেট্রয়েটের পার্শ্ববর্তী ডিয়ারবর্নে স্থাপিত হয়।
বিদ্যালয় সম্পাদনা
ডেট্রয়েট পাবলিক স্কুল ডিসট্রিক্ট মিশিগানের সর্ববৃহৎ বিদ্যালয় অঞ্চল। এখানে প্রায় ৮৪,০০০ পাবলিক স্কুল শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া ডেট্রয়েটে ৫৪.০০০ চার্টার স্কুল শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৯৯০ এর মধ্যবর্তী ও শেষেরদিকে অব্যবস্থাপনার অভিযোগে স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডকে সরিয়ে নেয়া হয়। এর পরিবর্তে রিফর্ম বোর্ড স্থাপন করা হয়, যেখানে বোর্ড প্রধান শহরের মেয়র ও গভর্নর কর্তৃক নিযুক্ত হয়। ডেটড়য়েটে বিভিন্ন বেসরকারী বিদ্যালয়ও রয়েছে। এদের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাই বেশি। এগুলো আর্চডিওসিস অফ ডেট্রয়েট কর্তৃক পরিচালিত হয়। এধরনের অনেক বিদ্যালয় মূল শহরাঞ্চল থেকে সরে শহরের পার্শ্ববর্তী উপশহরে স্থানান্তরিত হয়েছে। ২৩টি রোমান ক্যাথলিক বিদ্যালয় আর্চডিওসিস অফ ডেট্রয়েট কর্তৃক নিবন্ধিত।
অবকাঠামো সম্পাদনা
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পাদনা
ডেট্রয়েট প্রায় বারটি বড় হাসপাতাল রয়েছে। এদের মধ্যে ডেট্রয়েট মেডিকেল সেন্টার, হেনরি ফোর্ড হেলথ সিস্টেম, সেন্ট জন হেলথ সিস্টেম, জন ডিঙ্গেল মেডিকেল সেন্টার উল্লেখযোগ্য। ডেট্রয়েট মেডিকেল সেন্টার রিসিভিং হসপিটাল এন্ড ইউনিভার্সিটি হেলথ সেন্টার, চিলড্রেন্স হসপিটাল অফ মিশিগান, হার্পার ইউনিভার্সিটি হসপিটাল, হুটজেল ওম্যানস হসপিটাল্রিহ্যাবিলিটেশন ইন্সটিটিউট অফ মিশিগান, সিনাই-গ্রেস হসপিটাল ও ক্যারমানোস ক্যান্সার হসপিটালের সমন্বয়ে গঠিত। ডেট্রয়েট মেডিকেল সেন্টারের ২,০০০ এরও বেশি লাইসেন্সকৃত বিছানা এবং ৩,০০০ অধিভুক্ত চিকিৎসক রয়েছে। এই হাসপাতাল ডেট্রয়েটে সর্ববৃহৎ বেসরকারী নিয়োগদাতা। ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের চিকিৎসকগন এখানে সেবা দিয়ে থাকেন। ২০১০ এর ১৯ মার্চ ভ্যাংগার্ড হেলথ সিস্টেম ডেট্রয়েট মেডিকেল সেন্টারে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা। এর আওতায় ৮৫৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে হাসপাতালের সম্প্রসারণ এবং সংস্কার রয়েছে, যা বর্তমানে আনুমোদনের আপেক্ষায় আছে। ২০১০ সালে হেনরি ফোর্ড সিস্টেম তাদের হাসপাতালের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আরও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি একটি বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। ডেট্রয়েটে এসকল হাসপাতাল ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের আছে, যেমন- উইলিয়াম বিমন্ট হসপিটাল, সেন্ট যোসেফ এন্ড ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান মেডিকেল সেন্টার। এগুলোর অধিকাংশ মূল শহরের অদূরে উপশহরে অবস্থিত।
পরিবহণ সম্পাদনা
কানাডা অদূরে এবং উন্নতমানের সমুদ্রবন্দর, সড়ক, রেল যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কারণে ডেট্রয়েট একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র। শহরটির তিনটি আন্দর্জাতিক সীমানা পারাপার রয়েছে। এগুলো হল অ্যাম্বাসেডর ব্রিজ, ডেট্রয়েট-উইন্ডসর টানেল এবং মিশিগান সেন্ট্রাল রেলওয়ে টানেল। মিশিগান সেন্ট্রাল রেলওয়ে টানেল ডেট্রয়েটকে উইন্ডসরের সাথে সংযুক্ত করেছে। অ্যাম্বাসেডর ব্রিজ উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ব্যস্ত সীমান্ত পারাপার, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আমদানি-রপ্তানির ২৭% সম্পন্ন হয়।
আকাশ-পথ সম্পাদনা
ডেট্রয়েট মেট্রোপলিটান ওয়েন কাউন্টি এয়ারপোর্ট, ডেট্রয়েটের প্রধান ও সর্ববৃহৎ বিমানবন্দর। এটি ডেলটা এয়ারলাইন্সের প্রধান কেন্দ্র এবং স্পিরিট এয়ারলাইন্সের দ্বিতীয় প্রধান কেন্দ্র। মিশিগানের ফ্লিন্টে অবস্থিত বিশপ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এই অঞ্চলের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এছাড়া কোলম্যান ইয়ং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ডেট্রয়েটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এই বিমানবন্দর থেকে একসময় সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স ছেড়ে যেত, তবে বর্তমানে এই বিমানবন্দরের কার্যক্রম শ্লথ হয়ে গিয়েছে এবং এটিতে কম বিমান ওঠানামা করে। ডেট্রয়েটের পশ্চিমে উইলো রান এয়ারপোর্ট রয়েছে, এখানে যাত্রীবাহী বিমানের কার্যক্রম কম, তবে মালবাহী বিমান ওঠানামার জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়।
ভগিনী নগরী সম্পাদনা
ডেট্রয়েটের সাতটি ভগিনী নগরী রয়েছে, যা সিসটার সিটিস ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক নির্ধারিত[৪২]:
- টয়োটা, জাপান[৪৩]
- দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
- চেন্নাই, ভারত
- টিউরিন, ইতালী[৪৪]
- কিটুই, জাম্বিয়া
- মিন্সক, বেলারুস
- নাসাউ, বাহামাস
- চংকিং, চীন
এছাড়া পার্শ্ববর্তী উইন্ডসরের সাথে ডেট্রয়েটের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
আরও পড়ুন সম্পাদনা
আরও দেখুন সম্পাদনা
- Bak, Richard (২০০১)। Detroit Across 3 Centuries। Thompson Gale। আইএসবিএন 1585360015।
- Burton, Clarence M (১৮৯৬)। Cadillac's Village: A History of the Settlement, 1701–1710। Detroit Society for Genealogical Research। আইএসবিএন 0-943112-21-4।
- Burton, Clarence M (১৯১২)। Early Detroit: A sketch of some of the interesting affairs of the olden time। Burton Abstracts। ওসিএলসি ৯২৬৯৫৮।
- Chafets, Zev (১৯৯০)। Devil's Night: And Other True Tales of Detroit। Random House। আইএসবিএন 0-394-58525-9।
- Farley, Reynolds; ও অন্যান্য (২০০২)। Detroit Divided। Russell Sage Foundation Publications। আইএসবিএন 0-87154-281-1।
- Farmer, Silas (১৮৮৯)। History of Detroit and Wayne County and Early Michigan। Omnigraphics Inc; Reprint edition (October 1998)। আইএসবিএন 1-55888-991-4।
- Gavrilovich, Peter and Bill McGraw (২০০০)। The Detroit Almanac। Detroit Free Press। আইএসবিএন 0-937247-34-0।
- Hill, Eric J. and John Gallagher (২০০২)। AIA Detroit: The American Institute of Architects Guide to Detroit Architecture। Wayne State University Press। আইএসবিএন 0-8143-3120-3।
- Meyer, Katherine Mattingly and Martin C.P. McElroy with Introduction by W. Hawkins Ferry, Hon A.I.A. (১৯৮০)। Detroit Architecture A.I.A. Guide Revised Edition। Wayne State University Press। আইএসবিএন 0-8143-1651-4।
- Parkman, Francis (১৯৯৪)। The Conspiracy of Pontiac। University of Nebraska Press। আইএসবিএন 0-8032-8737-2।
- Poremba, David Lee (২০০৩)। Detroit: A Motor City History (Images of America)। Arcadia Publishing। আইএসবিএন 0-7385-2435-2।
- Powell, L. P (1901). "Detroit, the Queen City," Historic Towns of the Western States (New York).
- Sharoff, Robert (২০০৫)। American City: Detroit Architecture। Wayne State University Press। আইএসবিএন 0-8143-3270-6।
- Sobocinski, Melanie Grunow (২০০৫)। Detroit and Rome: building on the past। Regents of the University of Michigan। আইএসবিএন 0933691092।
- Sugrue, Thomas J (১৯৯৮)। The Origins of the Urban Crisis। Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-05888-1।
- Woodford, Arthur M. (২০০১)। This is Detroit 1701–2001। Wayne State University Press। আইএসবিএন 0-8143-2914-4।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
সরকার এবং ব্যবসায়ী সংস্থা
- ডেট্রয়েটের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- ডেট্রয়েট মেট্রো কনভেনশন এন্ড ভিসিটরস ব্যুরো
- ডেট্রয়েট আঞ্চলিক বণিক সংস্থা
ভ্রমণ সহায়িকা
- উইকিভ্রমণ থেকে ডেট্রয়েট ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।
ঐতিহাসিক গবেষণা এবং বর্তমান ঘটনাবলি
- Detroit Entertainment District
- ডেট্রয়েট ঐতিহাসিক জাদুঘর ও সমিতি
- ডেট্রয়েট রিভারফ্রন্ট কনজারভেন্সি
- এক্সপেরিয়েন্স ডেট্রয়েট
অন্যান্য সংযোগসমূহ