ইংরেজি নাম millipede মিলিপেড বা বাংলায় কেন্নো যাকে বলা হয় তারা আর্থোপোডা শ্রেণীর। এদের বৈশিষ্ট্য হল দুই জোড়া সন্ধিস্ত পা, যা প্রায় পুরো খন্ড খন্ড শরীরেই থাকে। এদের বৈজ্ঞানিক শ্রেণী হল ডিপ্লোপোডা। ডিপ্লোপোডা নামটি এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য থেকেই নেয়া হয়েছে। প্রতি দ্বী-পদ ভাগ তৈরি হয়েছে দুটো আলাদা আলাদা খন্ড যুক্ত হয়ে। বেশিরভাগ মিলিপেডেরই গোলাকার অথবা চ্যাপ্টা শরীর থাকে যা ২০টিরও বেশি ভাগে বিভক্ত থাকে। এদের কোন কোন প্রজাতি তাদের শরীরকে গোল করে মুড়ে নিতে পারে, যদি তারা বিপদের আভাস দেখে।যদিও মিলিপেড নামটি ল্যাটিন থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ "হাজার পা", তবুও প্রকৃতপক্ষে কোন প্রজাতিরই এত পা পাওয়া যায় নি। সবচেয়ে বেশি পায়ের অধিকারি প্রজাতিটির নাম হল Illacme plenipes, যার রয়েছে ৭৫০ খানা পা। প্রায় ১২০০০ হাজার প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে যা আবার ১৬টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। আর পরিবার বা গণ রয়েছে ১৪০টির মত। যার ফলে ডিপ্লোপোডা মাইরিয়াপডের সবচেয়ে বড় শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে।

Millipedes
সময়গত পরিসীমা: ৪২৮–০কোটি Late Silurian to Present
An assortment of millipedes (not to scale)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Subclasses
বৈচিত্র্য
16 orders, c. 12,000 species

বেশির ভাগ মিলিপেডেরই চলাচল মন্থর গতির। এরা পচা পাতা, মৃত গাছের অন্যান্য জৈব খায়। কিছু কিছু মিলিপেড ফাঙ্গাস বা গাছের রস খায়। খুব অল্প প্রজাতিই শিকারী হয়ে থাকে। এগুলো মানুষের কোন ক্ষতি করে না, যদিও এরা বসত বাড়ির বা বাগানের জন্য ক্ষতির হতে পারে। যেমন গ্রীন হাউজের মধ্যে সদ্য জন্মানো চারা বা অঙ্কুর হওয়া বীজের মারাত্মক ক্ষতি এরা করতে পারে। বেশির ভাগ মিলিপেড তাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল নিসৃত করে নিজের আত্মরক্ষা করে থাকে। ব্রিস্টল মিলিপেডেরা গুচ্ছ লোমসদৃস বস্তু দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে যা খসে পড়তে পারে। এই প্রজাতির বেশির ভাগ মিলিপেডই বংশবৃদ্ধির সময় পুরুষ পুংদন্ড (যা তাদের পা গুলোর পরিবর্তিত রূপ, এগুলোকে গনোপড বলে) দিয়ে স্ত্রী গর্ভে বীজ স্থানান্তর করে।

মিলিপেডরা হল সেইসব পুরনো স্থল ভাগের প্রাণী যারা বহু পূর্ব হতে পৃথিবীতে আছে। এদের প্রথম দেখা মেলে সিলুরিয়ান পিরিয়ডে। প্রিহিস্টোরিক সময়ের কিছু প্রজাতির আকার বেড়ে প্রায় ২ মি (৬ ফু ৭ ইঞ্চি) হয়। আধুনিক কিছু প্রজাতির আকার হয় সব্বোচ্চ ২৭ থেকে ৩৮ সেমি (১১ থেকে ১৫ ইঞ্চি)। মিলিপেডদের মধ্যে আফ্রিকান জায়ান্ট মিলিপেড (Archispirostreptus gigas) প্রজাতিটিই বেশি পুরনো।

মাইরিয়াপডের মধ্যে মিলিপেডদের ছোট পউরোপডদের কাছাকাছি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদিও আণবিক গবেষণা মতেএই সম্পর্ক স্বীকার করার পক্ষে মতপার্থক্য রয়েছে। মিলিপেডরা সেন্টিপডের সাথে মিলে কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। মিলিপেডদের নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে ডিপ্লোপডোলোজি বলা হয় এবং বিজ্ঞানিকে ডিপ্লোপডোলোজিস্ট বলা হয়।

ব্যুৎপত্তি ও নাম

সম্পাদনা

ডিপ্লোপডা বৈজ্ঞানিক নামটি এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ διπλοῦς (diplous), "দ্বী" এবং ποδός (podos), "পদ" থেকে, যা নির্দেশ করে খন্ডাংশে দু জোড়া করে পা'কে। মিলিপেড নামটি দুটো ভিন্ন নাম সহযোগে গঠিত যা এসেছে লাতিন থেকে। mille অর্থ ("হাজার") এবং ped অর্থ ("পদ")। মিলিপেড নামটি বহুল ব্যবহৃত এবং বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু উত্তর আমেরিকান বৈজ্ঞানিকরা "milliped" (বাড়তি e ছাড়া) ব্যবহার করে।[১] অন্য আরেকটি স্বদেশীয় নাম হল "হাজার-পদ" বা "ডিপ্লোপড"।[২] মিলিপেড জীববিদ্যা এবং শ্রেণিবিন্যাসকে ডিপ্লোপডোলজি: ডিপ্লোপড গবেষণা বলা হয়।

কেন্নো

শ্রেণী বিভাগ

সম্পাদনা
বিভিন্ন প্রজাতির আনুপাতিক তুলনা[৩]

প্রায় ১২,০০০ মিলিপেড প্রজাতি বর্ণিত হয়েছে।  পৃথিবীতে প্রকৃতির প্রকৃত সংখ্যার অনুমান ১৫০০০[৪] থেকে শুরু করে ৮০,০০০[৫] পর্যন্ত। মিলিপেডের কয়েকটি প্রজাতি সারা পৃথিবীতেই বিস্তৃত;  তারা পার্থিব লোকোমোশন এবং আর্দ্র আবাসে যেমন করে তাদের উপর নির্ভর করে তাদের খুব ক্ষুদ্র ছত্রাক ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।  এই কারণগুলি জিনগত বিচ্ছিন্নতা এবং দ্রুত স্পেসিফিকেশনকে সমর্থন করেছে, সীমিত রেঞ্জগুলির সাথে অনেকগুলি বংশ তৈরি করে।[৬]

বিবর্তন

সম্পাদনা

মিলিপেড হল সেইসব প্রথম প্রাণিদের মধ্যে অন্যতম যারা সিলুরিয়ান পিরিয়ডে মাটিতে বসবাস করেছে।[৭] প্রথম দিকের গুলো সম্ভবত মস এবং প্রাচীন রসালো গাছ খেত। দুই ধরনের প্রধান মিলিপেড শ্রেণী ছিল যাদের সদস্যরা সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে, এরা হল: আর্কিপলিপোডা ("প্রাচীন, বহু পদী") এই শ্রেণীর প্রাণীরা সবচেয়ে পুরানো ভূমির প্রাণী এবং আর্থ্রোপ্লিউরিডি, এই শ্রেণীতে ছিল, জানামতে, বড় ভূমির অমেরুদন্ডি প্রাণী। প্রাচীন ভূমির প্রাণী, নিউমোডেসমাস নিউমানি, ছিল ১ সেমি (০.৪ ইঞ্চি) লম্বা। এটি ছিল আর্কিপলিপোডান, যারা ৪২৮ মিলিয়ন বছর পূর্বে বাস করত (আপার সিলুরিয়ান সময়ে) এবং এদের শ্বাস নেবার ছিদ্র ছিল শ্বাসযন্ত্রে।[৮][৯] বর্তমান রের্কড অনুসারে, আপার কার্বোনিফেরাস সময়ে (৩৪০ থেকে ২৮০ কোটি বছর আগে), আর্থ্রোপ্লিউরা ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিতে বসবাসকারী অমেরুদন্ডি প্রাণী, যার দৈর্ঘ্য ছিল ২ মি (৬ ফু ৭ ইঞ্চি).[১০] সেই সময়েও মিলিপেডদের কেমিক্যাল দিয়ে আত্মরক্ষার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিছু ডেভোনিয়ান ফসিল পাওয়া যায় যাতে দেখা যায় তাদের আত্মরক্ষার গন্ড ছিল যাকে ওজোপোর বলা হয়।[৯] ডেভোনিয়ান এবং কার্বোনিফেরাস পিরিয়ডে মিলিপেড, সেন্টিপড এবং অন্যান্য মাটির আর্থোপোডারা অনেক বড় হত আজকের প্রজাতিগুলোর তুলনায় যেহেতু তখন অক্সিজেন সমৃদ্ধ পরিবেশ ছিল। এতে করে কিছু কিছু আর্থোপোডারা এক মিটারের বেশি বড় হত। সময়ের সাথে সাথে অক্সিজেনের পরিমান কমে গেলে এদের আকারও ছোট হয়ে যায়।[১১]

কেন্নোরা কুণ্ডলী পাকিয়ে

সেন্টিপড থেকে পার্থক্য

সম্পাদনা

সাধারণ দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে দুটো কাছাকাছি মনে হলেও মিলিপেড এবং সেন্টিপডের পার্থক্য জনসাধারণের কাছে একটি সাধারন প্রশ্ন।[১২] মাইরিয়াপডের এই দুটি শ্রেণীর অনেক মিল রয়েছে, যেমন দুটোই লম্বাকৃতির, খন্ড খন্ড অংশে বিভক্ত, অনেক পা, এক জোড়া এন্টেনা এবং দুটোর শরীরেই পোষ্টএ্যাটেনাল অঙ্গ রয়েছে। কিন্তু তা সত্তেও তাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে, রয়েছে বিকাশ ও বিবর্তনের নিজস্ব ইতিহাস যেহেতু তারা দুটো প্রজাতিই সিলুরিয়ান সময় (৪৭৫ বা ৪৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে) থেকেই পৃথিবীতে বাস করছে।[১৩] তাদের শুধুমাত্র মাথার আকারই পার্থক্যের বড় উদাহরণ। মিলিপেডের রয়েছে ছোট মাথা, কনুই ভাঙ্গার মত এ্যান্টেনা যা দিয়ে তারা স্তর খুড়ে, এক জোড়া শক্ত চোয়াল এবং এক জোড়া চর্বনাস্তি যা ঠোটের সাথে গিয়ে মিশেছে। অন্যদিকে সেন্টিপডের রয়েছে লম্বা সুতার মত এ্যান্টেনা, ছোট এক জোড়া চোয়াল, দুই জোড়া চর্বনাস্থি এবং এক জোড়া বড় বিষাক্ত নখ।[১৪]

মিলিপেড ও সেন্টিপড পাশাপাশি
Millipede and centipede differences[১২]
বৈশিষ্ট্যমিলিপেডসেন্টিপড
পাবেশিরভাগ খণ্ডেই দুই জোড়া; শরীরের নিচের অংশ থেকে শুরুপ্রতি খণ্ডেই এক জোড়া; শরীরের পাশে থেকে শুরু, শেষের জোড়া পিছনের দিকে বর্ধিত
চলাচলসাধারণত গর্ত খোড়ার জন্য বা ছোট ফাটলে বসবাসের উপযোগী; আস্তে চলেসাধারণত দৌড়ানোর জন্য। ব্যতিক্রম হল মাটির সেন্টিপড, তারা খোড়ার কাজে ব্যবহার করে থাকে
খাদ্যপ্রাথমিকভাবে পাতা পচা খেকো, কিছু গাছ খেকো আবার কিছু মাংসাশি; কোন বিষ নেইপ্রাথমিকভাবে মাংসাশি, নখরযুক্ত যা বিষাক্ত
Spiraclesশরীরের নিচের অংশেপাশে বা উপরে
জননাঙ্গের অবস্থানতৃতীয় খণ্ডেশরীরের শেষ খণ্ডে
বংশবৃদ্ধির পদ্ধতিপুরুষ গনোপডের সাহায্যে স্ত্রী'র দেহে বীজ স্থানান্তর করেপুরুষ সাধারণত বীজ উৎপন্ন করে রাখে যা স্ত্রী তুলে নেয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:মিলিপেডটেমপ্লেট:আর্থোপড

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিশেষ:অনুসন্ধান২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরটুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের রেকর্ড তালিকাঅসীম সাহাক্লিওপেট্রারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)চন্দ্রবোড়াবাংলাদেশ২০২৪ কোপা আমেরিকামিয়া খলিফানির্জলা একাদশীএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)উয়েফা ইউরো ২০২৪কোকা-কোলাজর্জিয়াশাকিব খানআবহাওয়া৬৯ (যৌনাসন)ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনকাজী নজরুল ইসলামভূমি পরিমাপবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতকুরবানীস্বামী বিবেকানন্দবাংলা ভাষাএকাদশীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরওয়েস্ট ইন্ডিজদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিঈদুল আযহাউয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপমহাত্মা গান্ধীআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপমুহাম্মাদশেখ মুজিবুর রহমান