রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগ

হৃৎপিণ্ড ও রক্তবাহী নালীসমূহের রোগের দল
(হৃদরোগ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হৃদ রোগ, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তবাহক (ধমনী, শিরাকৈশিক জালিকা) সম্পর্কিত রোগ নিয়ে আলোচনা করে। [১]

রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগ
বিশেষত্বহৃদবিজ্ঞান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

প্রধানত হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বৃক্কপ্রান্তিক ধমনী সম্পর্কিত, রোগকে হৃদ রোগ বলে।[২] হৃদরোগের অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে উচ্চ রক্তচাপঅ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রধান। পাশাপাশি, বয়সের সাথে সাথে হৃৎপিণ্ডের গঠনগত ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী, যা স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরও হতে পারে।[৩]

১৯৭০ সালের পর উন্নত দেশে মৃত্যুহার কমে গেলেও বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর জন্য হৃদরোগ দায়ী। [৪][৫] একই সাথে, মধ্য ও স্বল্প আয়ের দেশগুলিতে হৃদরোগের সংখ্যা ও এর কারণে মৃত্যু দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। [৬] যদিও হৃদরোগ প্রাপ্ত ববয়স্কদের হয়, কিন্তু হৃদরোগের পূর্বাবস্থা অ্যাথেরোসক্লোরোসিস অনেক আগে থেকেই শুরু হয়।[৭] সেজন্যই পুষ্টিকর খাদ্য, শারীরিক পরিশ্রম, তামাক জাতীয় খাদ্য পরিহারের মাধ্যমে হৃদরোগ প্রতিরোধের উপর জোর দেওয়া হয়।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

অনেক রকম হৃদ রোগ আছে। যেমনঃ

  • করোনারি হৃদ রোগ
  • কার্ডিও-মায়োপ্যাথি
  • উচ্চ রক্তচাপ জনিত হৃদ রোগ
  • হার্ট ফেইলর
  • কোর পালমোনাল (Core pulmonale)-হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যাওয়া, শ্বাস -প্রশ্বাস ব্যহত
  • কার্ডিয়াক ডিসরিদ্মিয়াস (Cardiac Disrhythmias)
  • ভালভুলার হৃদ রোগ
  • সেরেব্রোভাস্কুলার রোগ-মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তবাহিকার অসুখ, যেমন স্ট্রোক
  • প্রান্তিক ধমনীর রোগ
  • জন্মগত হৃদ রোগ
  • রিউম্যাটিক হৃদ রোগ-বাতজ্বরের কারণে হৃদপেশি ও ভাল্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

ঝুকির কারণ সম্পাদনা

হৃদ রোগের জন্য অনেক কিছুই দায়ী : বয়স, লিঙ্গ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম এবং বায়ু দূষণ । এক এক এলাকার জন্যে এক এক কারণ দায়ী হলেও সামগ্রিকভাবে এরা সকলেই হৃদ রোগের কারণ। তবে জীবন যাপনের ধরন পরিবর্তন, সামাজিক পরিবর্তন, ঔষধ সেবন এবং ঊচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড ও বহুমূত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে হৃদ রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

বয়স সম্পাদনা

একজন বয়স্ক নারীর ক্যালসিয়ামযুক্ত হৃৎপিণ্ড

হৃদরোগের পিছনে বয়স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।[৬] দেখা গিয়েছে, ৬৫ বছরের বেশি ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশ হৃদরোগে মারা গিয়েছেন।[৮] একই সময়ে, ৫৫ বছরের পরে স্ট্রোক করার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।.[৯]

বয়স বৃদ্ধির সাথে হৃদরোগ কেন বেড়ে যায়, তার একাধিক ব্যাখ্যা প্রস্তাব করা হয়েছে। তার একটি সিরাম কোলেস্টেরল এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।[১০] অধিকাংশ জনগোষ্ঠীতে বয়স বৃদ্ধির সাথে সিরাম কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়ে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ৫০ বছর এবং নারীদের ৬০ থেকে ৬৫ বছরের আগে নয়। [১০]

বয়স রক্তবাহিকার গাত্রে গাঠনিক পরিবর্তন আনে, যার ফলে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, পরিণামে করোনারি ধমনী রোগ হয়।[১১]

লিঙ্গ সম্পাদনা

প্রজননে সক্ষম নারীর তুলনায় পুরুষদের হৃদরোগ হবার ঝুঁকি বেশি।[৬][১২] প্রজননের সময়সীমা পার হয়ে গেলে, নারীদের হৃদরোগ হবার সম্ভাবনা পুরুষদের মতই।[১২] .[৬] যদি কোন নারীর বহুমূত্র থাকে, তার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বহুমূত্রে আক্রান্ত পুরুষের চেয়ে বেশি।[১৩]

মধ্য বয়সী মানুষদের মধ্যে করোনারি হৃদরোগ নারীদের তুলনায় পুরুষদের ২ থেকে ৫ গুণ বেশি।[১০] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক চালানো জরিপে দেখা যায়, হৃদরোগে মৃত্যুহার নির্ণয়ে লিঙ্গ নির্ধারণ প্রায় ৪০% পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। [১৪] আরেকটি জরিপ প্রায় একই কথা বলে যে,লিঙ্গ বৈষম্য হৃদরোগের ঝুঁকির প্রায় অর্ধেকের সাথে সম্পর্কিত।[১০]

একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, হৃদরোগে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ হরমোন পার্থক্য। [১০] নারীদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন প্রধান সেক্স হরমোন। গ্লুকোজ বিপাকের দ্বারা ইস্ট্রোজেন প্রতিরক্ষাকারী প্রভাব বিস্তার করে।[১০] প্রজনন সময়ের পরে ইস্ট্রোজেন উৎপাদন হার কমে যায় এবং HDL কমায় ও LDL, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। .[১০][১১]

বায়ু দূষণ সম্পাদনা

প্যাথোফিজিওলজি সম্পাদনা

জনসংখ্যা ভিত্তিক গবেষণায় দেখা যায়, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস শৈশব থেকেই শুরু হ্য়, যা হৃদরোগের পূর্ব লক্ষণ। জনসংখ্যা ভিত্তিক গবেষণায় দেখা যায়, হৃদ রোগের পূর্বসূরী অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস শৈশব থেকেই শুরু হয়।[১৫]

এটি বিবেচনায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের ফলে উদ্ভূত জটিলতায় প্রতি তিন জনে একজন মারা যায়। এটিকে প্রতিরোধ করার জন্য জনসাধারণের মাঝে শিক্ষা ও সচেতনতা গড়ে উঠানোর জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস হৃদরোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত।[১৬] এগুলি ক্রনিক কিডনি রোগের পূর্বলক্ষণও বটে। [১৭] প্রকৃতপক্ষে, ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদ রোগ সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ।[১৮][১৯][২০]

লক্ষণ সম্পাদনা

হৃদরোগের সবচেয়ে সচরাচর উপসর্গ হলো বুক ব্যথা বা অস্বস্তি। তবে এটি সবসময় একমাত্র উপসর্গ নয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলির উপররের দিকে অসহনীয় ব্যাথা অনুভব করা, মাথা হালকা লাগা, শরীরের ওপরের অংশে যেমন—পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যাথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।[২১]

রোগতত্ত্ব সম্পাদনা

২০০৪ সালে প্রতি ১,০০,০০০ জনে হৃদ রোগের জন্য অক্ষমতা সমন্বয়কৃত জীবন বছর[২২]
  কোন তথ্য নেই
  <৯০০
  ৯০০-১৬৫০
  ১৬৫০-২৩০০
  ২৩০০-৩০০০
  ৩০০০-৩৭০০
  ৩৭০০-৪৪০০
  ৪৪০০-৫১০০
  ৫১০০-৫৮০০
  ৫৮০০-৬৫০০
  ৬৫০০-৭২০০
  ৭২০০-৭৯০০
  >৭৯০০

হৃদ রোগ মৃত্যুর প্রধান কারণ। ২০০৮ সালে ৩০% বৈশ্বিক মৃত্যুর জন্য হৃদ রোগ দায়ী। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত দেশের ৮০% বৈশ্বিক মৃত্যুর জন্য হৃদ রোগ দায়ী। এক সমীক্ষায় দেখা যায়,২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর হৃদ রোগে ২৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

🔥 Top keywords: ঈদুল আযহাপ্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানকুরবানী২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপঈদ মোবারকঈদের নামাজরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরতুফান (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)ক্লিওপেট্রাবিশ্ব দিবস তালিকাআসসালামু আলাইকুমকোকা-কোলামিয়া খলিফাপিতৃ দিবসদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিবাংলাদেশএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)২০২৪ কোপা আমেরিকারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)এস এম শফিউদ্দিন আহমেদআবহাওয়াইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনউয়েফা ইউরো ২০২৪সরকারহেমন্ত মুখোপাধ্যায়চন্দ্রবোড়াকাজী নজরুল ইসলামবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপমুহাম্মাদসেন্ট মার্টিন দ্বীপবাংলা ভাষাইব্রাহিম (নবী)আষাঢ়স্য প্রথম দিবসওয়ালাইকুমুস-সালামওয়াকার-উজ-জামানশাকিব খানভারত