সীতা

হিন্দু দেবতা রামের স্ত্রী

সীতা (দেবনাগরী: सीता শুনুন, অর্থ "হলরেখা") হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের কেন্দ্রীয় বা প্রধান নারী চরিত্র যিনি জনকপুরে (বর্তমানে মিথিলা, নেপাল) জন্মগ্রহণ করেন।[১১][১২] হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি ছিলেন হিন্দু অবতার শ্রীরামের (বিষ্ণুর সপ্তম অবতার) পত্নী, সঙ্গী এবং ধনসম্পদের দেবী, শক্তিরূপা লক্ষ্মীর অবতার। হিন্দুসমাজে তাকে আদর্শ স্ত্রী তথা আদর্শ নারীর উদাহরণ হিসেবে মনে করা হয়।[১৩] সীতা মূলত তার উৎসর্গীকরণ, আত্মবিসর্জন, সাহসিকতা এবং বিশুদ্ধতার জন্যে পরিচিত হয়। সীতা নবমীতে সীতা দেবীর জন্ম-উৎসব পালন করা হয়।

সীতা
মাতা দেবী,[১]
সৌন্দর্য এবং ভক্তির দেবী[২][৩]
নির্বাসনের সময় সীতার লিথোগ্রাফ
অন্যান্য নামসিয়া, জনকী, মৈথিলী, বৈদেহী, ভূমিজা
দেবনাগরীसीता
সংস্কৃত লিপ্যন্তরSītā
অন্তর্ভুক্তিলক্ষ্মীর অবতার, দেবী, বৈষ্ণববাদ
আবাস
গ্রন্থসমূহরামায়ণ এবং এর অন্যান্য সংস্করণ, সীতা উপনিষদ
উৎসবসীতা নবমী, জনকী জয়ন্তী, বিভা পঞ্চমী, দীপাবলী, বিজয়া দশমী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
মাতাপিতাজনক (দত্তক পিতা)
সুনয়না (দত্তক মাতা)
ভূমি (আধ্যাত্মিক মাতা)
সহোদরঊর্মিলা (বোন)
মাণ্ডবী (কাকাতো ভাই)
শ্রুতকীর্তি (কাকাতো ভাই)
সঙ্গীরাম
সন্তানলব (পুত্র)
কুশ (পুত্র)
রাজবংশবিদেহ (জন্মগতভাবে)
রঘুবংশ-সূর্যবংশ (বৈবাহিকসূত্রে)
সীতা তার ছেলে লবের সাথে
রাজসিংহাসনে উপবিষ্ট শ্রীরাম ও সীতা, ১৯৪০ এর দশকের পোস্টার।

‘অদ্ভুত রামায়ণ’ থেকে জানা যায়, সীতা নাকি রাবণ ও মন্দোদরীর কন্যা। তার জন্মের আগে গণকরা জনিয়েছিলেন, তিনি নাকি রাবণের ধ্বংসের কারণ হবেন। তাই রাবণ তাঁকে পরিত্যাগ করেন। ‘আনন্দ রামায়ণ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজা পদ্মাক্ষের কন্যা পদ্মাই নাকি পরবর্তী জন্মে সীতা হন। রাবণ পদ্মার শ্লীলতাহানি করতে চাইলে তিনি আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন। পরজন্মে তিনিই সীতা হিসেবে অবতীর্ণা হন এবং রাবণের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ান। আর একটি প্রচলিত ধারণা এই— সীতা পূর্বজন্মে ছিলেন বেদবতী নামে এক পুণ্যবতী নারী। রাবণ তার শ্লীলতাহানি করতে চাইলে তিনি রাবণকে অভিশাপ দেন যে, তিনি পরবর্তী জন্মে রাবণকে হত্যা করবেন।

নামকরণ সম্পাদনা

রামায়ণে সীতা বহু নামে উল্লিখিতা হয়েছেন। তবে তিনি মূলত সীতা নামেই পরিচিতা। জনকের কন্যা বলে সীতাকে জানকী বলা হয়। মিথিলা রাজ্যের কন্যা হওয়ায় তিনি মৈথিলি নামেও পরিচিতা। এছাড়া তিনি রাম-এর স্ত্রী হওয়ায় তাঁকে রমাও বলা হয়ে থাকে। মাতা সীতা দ্বাপর যুগে মাতা রুক্মিণী রূপে অবতীর্ণ হন।

জীবনী সম্পাদনা

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, বৈশাখ মাসের শুক্লানবমী তিথিটিকে সীতানবমী বলা হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিনেই সীতা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উত্তর ভারতে সীতা নবমী একটি অন্যতম প্রধান উৎসব। রামায়ণ অনুসারে, সীতা ভূদেবী পৃথিবীর কন্যা ও রাজর্ষি জনকের পালিতা কন্যা। রামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে গেলে সীতা তার সঙ্গী হন। সীতা মাতাকে হিন্দুদের দেবী মা লক্ষ্মীর অবতার বলা হয়ে থাকে। তাই তিনি রাবণ কর্তৃক হরণ হওয়ার আগেই বৈকুণ্ঠে চলে যান এবং ছায়া সীতা রেখে যান। পরে রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গেলে রাম ও রাবণের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। কিষ্কিন্ধ্যার বানরদের সহায়তায় রাম রাবণকে পরাজিত ও নিহত করে সীতাকে উদ্ধার করেন। শ্রীরামচন্দ্র রাবণের ছোট ভাই বিভীষণ কে লঙ্কার রাজা করেন। এবং নিজের রাজ্যে ফিরে আসেন। সীতা উদ্ধারের পর সীতার অগ্নিপরীক্ষা হয়। সেই সময় অগ্নিদেব ছায়াসীতা লুকিয়ে আসল সীতাকে প্রকট করেন বলে কথিত আছে।

শ্রীরাম অযোধ্যার রাজা হওয়ার পর মাতা সীতার নামে অযোধ্যায় লোকনিন্দা শুরু হয়। সেই লোক নিন্দা থেকে সীতাকে রক্ষা করতে রাজগুরুর আদেশে শ্রীরাম, লক্ষ্মণকে মাতা সীতাকে মহর্ষি বাল্মীকির তপোবনে রেখে আসার আদেশ দেন। কারণ, তখন সীতা মাতা গর্ভবতী ছিলেন। মহর্ষি বাল্মীকির তপোবনে সীতা, লব ও কুশ নামে দুই যমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

পরে রাম সীতাকে দ্বিতীয়বার অগ্নিপরীক্ষা দিতে বললে মর্মাহত সীতা জননী পৃথিবীর কোলে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ভূগর্ভ থেকে উত্থিত হয়ে ভূদেবী পৃথিবী সীতাকে নিয়ে পাতালে প্রবেশ করেন।

রামায়ণের বিভিন্ন পাঠান্তরে সীতা সম্পর্কিত নানা উপাখ্যানের সন্ধান মেলে।

রামায়ণে সীতা সম্পাদনা

সীতার পিতা ছিলেন রাজা জনক। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জমি চাষ করার সময় লাঙলের আঘাতে ভূমি বিদীর্ণ করে সীতার জন্ম হয়।

অযোধ্যার রাজকুমার রাম তার ভাই লক্ষ্মণ কে নিয়ে বিশ্বামিত্র মুনির সাথে উপস্থিত হন মিথিলায়। মিথিলার রাজসভায় শিব প্রদত্ত ধনুক ভেঙ্গে সীতাকে জয় করেন রাম

সীতাকে বিবাহের পর, রাম ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গমন করলে, চিত্রকূট পর্বতে অবস্থান করেন। সেখানে স্বর্ণমৃগ রূপী মারীচ ছল করে রামলক্ষ্মণকে দূরে নিয়ে যান, আর রাবণ সীতাকে হরণ করে।

রামলক্ষ্মণ বানরসেনা ও ভল্লুকসেনার সাহায্যে রাবনবধ ও সীতা উদ্ধার করলেও, প্রজার প্রশ্ন নিরসন করতে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলেন। সীতা অগ্নিপরীক্ষা দিলে স্বয়ং অগ্নিদেব সীতাকে রক্ষা করে। এরপর সীতাকে নিয়ে রাম ফেরেন অযোধ্যায়। সীতা কোশলদেশের সম্রাজ্ঞী হন। রামের ঔরসে সীতার গর্ভসঞ্চার হয়। কিন্তু প্রজাদের মধ্যে সীতাকে নিয়ে বক্রোক্তি শুনে রাম তাকে ত্যাগ করেন। সন্তানসম্ভবা সীতা আশ্রয় নেন বাল্মীকি মুনির আশ্রমে। ওখানেই সীতা কুশ ও লব নামে দুই পুত্রসন্তান প্রসব করেন। পরবর্তীতে লব ও কুশ রামের অশ্বমেধের ঘোড়া আটকে রাখেন। ফলে রামের সাথে যুদ্ধ হয় তাদের। কিন্তু রাম পরাস্ত হন। পরে বাল্মীকির সাহায্যে লব কুশ কোশল দেশে ফেরেন সীতাকে নিয়ে। রাম পুনরায় সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বললে অভিমানী ও অপমানিতা সীতা তার মা ভূদেবী(পৃথিবী) ধরিত্রীকে আবাহন করেন। দেবী ভূদেবী(পৃথিবী) সিংহাসনে উপস্থিত হন ও সীতাকে নিয়ে পাতালপ্রবেশ করেন।

সীতা ও কৃষি বিপ্লব সম্পাদনা

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যছক সম্পাদনা

আরো পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধান২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামশেখ মুজিবুর রহমানছয় দফা আন্দোলনঘূর্ণিঝড় রেমালবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধবাংলাদেশক্লিওপেট্রালোকনাথ ব্রহ্মচারীবাংলা ভাষা আন্দোলনলোকসভাপহেলা বৈশাখলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপমৌলিক পদার্থের তালিকাআবহাওয়াভারতভূমি পরিমাপউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনসুন্দরবনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাসাইবার অপরাধফিলিস্তিনমিয়া খলিফাশাকিব খানমহাত্মা গান্ধীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরবেনজীর আহমেদপশ্চিমবঙ্গমাইকেল মধুসূদন দত্তরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহপদ্মা সেতু