সামবেদ

বেদের তৃতীয় ভাগ

সামবেদ (সংস্কৃত: सामवेद) (সামন্‌ বা গান ও বেদ বা জ্ঞান থেকে) হল সংগীতমন্ত্রের বেদ[৪] সামবেদ সনাতনধর্মের সর্বপ্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদের তৃতীয় অংশ। এটি বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত। সামবেদের কৌথুম শাখায় ১,৮৭৫টি মন্ত্র রয়েছে।[৫] এই মন্ত্রগুলির অধিকাংশ মূলত বেদের প্রথম ভাগ ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত।[৬] এটি একটি প্রার্থনামূলক ধর্মগ্রন্থ। বর্তমানে সামবেদের তিনটি শাখার অস্তিত্ব রয়েছে। এই বেদের একাধিক পাণ্ডুলিপি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে।[৭][৮]

সামবেদ
চতুর্বেদ
চতুর্বেদের মাঝে তৃতীয় স্থানে সামবেদ
তথ্য
ধর্মহিন্দুধর্ম
ভাষাবৈদিক সংস্কৃত
যুগআনু. ৫৪০০–৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তি (যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ)[১][২]
মন্ত্র১,৮৭৫টি মন্ত্র[৩]

গবেষকেরা সামবেদের আদি অংশটিকে ঋগ্বৈদিক যুগের সমসাময়িক বলে মনে করেন। তবে এই বেদের যে অংশটির অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত রয়েছে, সেটি বৈদিক সংস্কৃত ভাষার পরবর্তী-ঋগ্বৈদিক মন্ত্র পর্যায়ে রচিত। এই অংশের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০০ – ৩২০০ অব্দের মাঝামাঝি কোনো এক সময়। তবে সামবেদ যজুর্বেদঅথর্ববেদের সমসাময়িক কালে রচিত।[৯]

বহুপঠিত ছান্দোগ্যকেন উপনিষদ্‌ সামবেদের অন্তর্গত। এই দুই উপনিষদ্‌ প্রধান (মুখ্য) উপনিষদ্‌গুলির অন্যতম এবং ভারতীয়দর্শনের (প্রধানত বেদান্ত দর্শন) ছয়টি শাখার উপর এই দুই উপনিষদের প্রভাব অপরিসীম।[১০] সামবেদকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতনৃত্যকলার মূল বলে মনে করা হয়।[১১]

চার বেদের মাঝে সামবেদের গুরুত্ব বুঝাতে ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে সামবেদ বলে বর্ণনা করেছেন।[১২]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

বৈদিক সাহিত্যের ভৌগোলিক অবস্থান। সামবেদের কৌঠুম (উত্তর ভারত) ও জৈমিনীয় (মধ্যভারত) শাখাদুটির অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই শাখাদুটির একাধিক পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে।

সামবেদ হল ‘মন্ত্রবেদ’ বা ‘মন্ত্র-সংক্রান্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার’।[১৩] ফ্রিটস স্টাল সামবেদকে ‘সুরারোপিত ঋগ্বেদ’ বলে উল্লেখ করেছেন।[১৪] এই বেদ প্রাচীনতম সংগীত (‘সামন্‌’) ও ঋগ্বৈদিক মন্ত্রগুলির সংমিশ্রণ।[১৪] ঋগ্বেদের তুলনায় সামবেদে মন্ত্রের সংখ্যা অনেক কম।[৮] কিন্তু পাঠ-সংক্রান্ত দিক থেকে এই বেদ বৃহত্তর। কারণ, এই বেদে সকল মন্ত্র ও অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত মন্ত্রগুলির সুরান্তর তালিকাভুক্ত হয়েছে।[১৪]

সামবেদে স্বরলিপিভুক্ত সুর পাওয়া যায়। এগুলিই সম্ভবত বিশ্বের প্রাচীনতম স্বরলিপিভুক্ত সুর, যা আজও পাওয়া যায়।[১৫] স্বরলিপিগুলি সাধারণত মূল পাঠের ঠিক উপরে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঠের অভ্যন্তরে নিহিত রয়েছে। এই স্বরলিপি সামবেদের শাখা অনুসারে অক্ষর বা সংখ্যার আকারে নিবদ্ধ।[১৬]

শাখা সম্পাদনা

মহর্ষি পতঞ্জলি সামবেদের ১০০০টি শাখার কথা বলেছিলেন।[১৭] শাখা হচ্ছে বেদের পাঠ ও বিন্যাস পদ্ধতি। বর্তমানে সামবেদের মাত্র তিনটি শাখা উপলব্ধ হয়েছে:[৭]

  1. কৌথুম শাখা: এই শাখার পূবার্চিকে প্রপাঠক, অর্ধপ্রপাঠক, দশতি ও মন্ত্র ক্রমে এবং উত্তরার্চিকে প্রপাঠক, অর্ধপ্রপাঠক, সুক্ত ও মন্ত্র ক্রমে বিভক্ত। এই শাখাটি গুজরাত, উত্তরপ্রদেশওড়িশায় প্রচলিত। কয়েক দশক ধরে এটি বিহারের দারভাঙ্গা অঞ্চলেও প্রচলিত রয়েছে।
  2. রাণায়নীয় শাখা: এই শাখার পূর্বার্চিকে অধ্যায়, খণ্ড ও মন্ত্র ক্রমে এবং উত্তরার্চিকে অধ্যায়, খণ্ড, সুক্ত ও মন্ত্র ক্রমে বিভক্ত। কৌথুম ও রাণায়নীয় শাখাতে মন্ত্রের সংখ্যা ১৮৭৫টি। এই শাখাটি মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গোকর্ণ ও ওড়িশার কিছু কিছু অঞ্চলে প্রচলিত।
  3. জৈমিনীয় শাখা: এই শাখাতে মন্ত্রের সংখ্যা ১৬৮৭টি; কৌথুম ও রাণায়নীয় শাখা হতে ১৮৮টি মন্ত্র কম। কৌথুম ও রাণায়নীয় শাখাতে নেই এমন ঋচাও এই শাখাতে পাওয়া যায় যা ঋগ্বেদে আছে। এই শাখাটি কর্ণাট, তামিলনাড়ুকেরল অঞ্চলে প্রচলিত।

বিন্যাস সম্পাদনা

সামবেদের আদি সংকলনটি বৈদিক দেবতা অগ্নিইন্দ্রের স্তোত্র দিয়ে শুরু হয়েছে।

সামবেদের কৌথুম ও রাণায়নীয় শাখা তিনটি আর্চিক--পূর্বার্চিক(ছন্দ আর্চিক), মহানাম্নী আর্চিক এবং উত্তরার্চিকে বিভক্ত। পূর্বার্চিকে চারটি কাণ্ড- আগ্নেয়, ঐন্দ্র, পাবমান ও আরণ্য। চার কাণ্ডে মোট ৬৪০টি মন্ত্র আছে। আরণ্যকাণ্ডকে অনেকসময় পূর্বার্চিক হতে পৃথক রাখা হয়, যার কারণে পূর্বার্চিকে ৫৮৫টি মন্ত্র হয়ে থাকে। মহানাম্নী আর্চিকে ১০টি মন্ত্র আছে। এবং উত্তর আর্চিকে মোট ৯টি প্রপাঠক, ২২টি অর্ধপ্রপাঠক, ১২০টি খণ্ড, ৪০০টি সুক্ত ও ১২২৫টি মন্ত্র আছে।

সামবেদ পূর্বার্চিকের উপর দুই প্রকার গান হয়ে থাকে--গ্রামেগেয়গান(বেয়গান) ও অরণ্যেগেয়গান(আরণ্যগান)। আগ্নেয়, ঐন্দ্র এবং পাবমান কাণ্ডে বেয়গান হয়ে থাকে এবং আরণ্য কাণ্ড ও মহানাম্নী আর্চিকে আরণ্যগান হয়ে থাকে। গ্রামেগেয়গান গ্রামে এবং অরণ্যেগেয়গান অরণ্যে গাওয়া হতো।উত্তরার্চিকে উহ গান এবং উহ্য গান গাওয়া হয়। উহগানের প্রকৃতি গ্রামেগেয়গান এবং উহ্যগনে অরণ্যেগেয়গানের মতোই হয়ে থাকে।

ঋগ্বেদের মতো সামবেদেও আদি সংকলনটি অগ্নিইন্দ্রের স্তোত্র দিয়ে শুরু হয়েছে। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে তাত্ত্বিক আলোচনা ও দর্শনতত্ত্বে উপনীত হয়েছে এবং মন্ত্রের ছন্দ ধীরে ধীরে নিম্নগামী হয়েছে।[৬] সামবেদের উত্তর আর্চিক সংকলনটি বিষয়বস্তু মূল ঋগ্বেদের থেকে খুব কম ক্ষেত্রেই দূরে সরে গিয়েছে। এগুলি ঋগ্বেদের স্তোত্রগুলিরই গীতিরূপ।[৬] সামবেদের উদ্দেশ্যটি আনুষ্ঠানিক। এই বেদের স্তোত্রগুলি ‘উদ্‌গাতৃ’ বা গায়ক পুরোহিতদের দ্বারা গাওয়া হয়।[৬]

বিশ্লেষণ সম্পাদনা

সামবেদে ১,৫৪৯টি একক মন্ত্র রয়েছে। এগুলির মধ্যে ৭৫টি বাদে বাকি সবকটিই ঋগ্বেদ থেকে গৃহীত।[৬][১৮] ঋগ্বেদের ৯ম ও ৮ম মণ্ডল থেকেই প্রধানত এই মন্ত্রগুলি গ্রহণ করা হয়েছে।[১৯] কয়েকটি ঋগ্বৈদিক মন্ত্র সামবেদে একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। গ্রিফিথের অনুবাদে পুনরাবৃত্তি সহ সামবেদ শাখার মোট মন্ত্রসংখ্যা ১,৮৭৫।[২০]

=বিষয়বস্তু সম্পাদনা

সামবেদীয় সাহিত্য সম্পাদনা

সামবেদীয় ব্রাহ্মণ সম্পাদনা

সামবেদের মোট ১১টি ব্রাহ্মণগ্রন্থ উপলব্ধ

কৌথুম ও রাণায়নীয় শাখা সম্পাদনা

  1. তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ
  2. ষড্বিংশ ব্রহ্মণ
  3. সামবিধান ব্রাহ্মণ
  4. দেবতাধ্যায় ব্রাহ্মণ
  5. আর্ষেয় ব্রাহ্মণ
  6. মন্ত্র ব্রাহ্মণ
  7. সংহিতোপনিষদ্ ব্রাহ্মণ
  8. বংশ ব্রাহ্মণ

জৈমিনীয় শাখা সম্পাদনা

  1. জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ
  2. জৈমিনীয় আর্ষেয় ব্রাহ্মণ
  3. জৈমিনীয় উপনিষদ্ ব্রাহ্মণ

সামবেদীয় আরণ্যক সম্পাদনা

  1. তলবকার আরণ্যক

উপনিষদ্‌ সম্পাদনা

সনাতনধর্মের দুটি প্রধান উপনিষদ্‌ সামবেদের অন্তর্গত। এদুটি হল ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌কেনোপনিষদ্‌। দুটি উপনিষদ্‌ই উচ্চমানের ছন্দোময় সাংগীতিক গড়নের জন্য বিখ্যাত। তবে ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখার বিবর্তনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এই উপনিষদের মধ্যে অন্তর্হিত দার্শনিক গড়নটি সনাতনধর্মের বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেছে।[১০] সনাতনধর্মের বিভিন্ন শাখার গবেষকদের ‘ভাষ্যে’ এই উপনিষদ্‌ থেকেই সর্বাধিক প্রমাণ দর্শিত হয়েছে। যেমন, আদি শঙ্কর তার বেদান্ত সূত্র ভাষ্য গ্রন্থে ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ থেকে ৮১০টি প্রমাণ উল্লেখ করেছেন। এই সংখ্যাটি অন্যান্য প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত প্রমাণ অপেক্ষা অনেক বেশি।[২১]

ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ সম্পাদনা

ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ সামবেদের তাণ্ড্য শাখার অন্তর্গত।[২২] বৃহদারণ্যক উপনিষদের মতো ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ও এমন একটি গ্রন্থ-সংকলন যার অস্তিত পূর্বে পৃথক গ্রন্থাকারে ছিল। পরবর্তীকালে এক বা একাধিক প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিত কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে এটি বৃহত্তর গ্রন্থের আকার গ্রহণ করে।[২২] ছান্দোগ্য উপনিষদের যথাযথ কালপঞ্জি অজ্ঞাত। তবে এটি সামবেদের নবীনতম স্তরের ধর্মগ্রন্থ। বিভিন্ন মত অনুসারে, ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ৮ম থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এটি রচিত হয়।[২৩][২৪]

ছান্দোগ্য উপনিষদের গড়নটি ছন্দোময় ও সাংগীতিক। এই উপনিষদে বিভিন্ন ধারার আনুমানিক ও দার্শনিক বিষয় আলোচিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১ম অধ্যায়ের ৮ম ও ৯ম খণ্ডে তিন ‘উদ্‌গীথজ্ঞ’ ব্যক্তির মধ্যে বিতর্কের বিবরণ রয়েছে। এই বিতর্কের বিষয়বস্তু ‘উদ্‌গীথ’ ও সকল লোকের উৎপত্তি ও আশ্রয়।[২৫]

“এই লোকের আশ্রয় কি?”[২৬]
(প্রবাহণ জৈবলি) বললেন, “আকাশ। স্থাবরজঙ্গমাদি এই নিখিল ভূতবর্গ আকাশ হতেই উৎপন্ন হয় এবং প্রলয়ে আকাশেই লীন হয়; কারণ আকাশই এই সকল লোক হতে মহত্তর; সুতরাং আকাশই পরম প্রতিষ্ঠা।
পূর্বোক্ত এই উত্তরোত্তর উৎকৃষ্টতর উদ্‌গীথ (পরমাত্মারূপে প্রতিপাদিত হলেন); অতএব উক্ত এই উদ্‌গীথ অনন্ত। যিনি শ্রেষ্ঠাতিশ্রেষ্ঠ উদ্‌গীথকে (ওঁ) এইরূপ জানিয়া উপাসনা করেন, তাঁহার উত্তরোত্তর উৎকৃষ্টতর জীবনলাভ হয়, এবং তিনি শ্রেষ্ঠাতিশ্রেষ্ঠ লোকসমূহ জয় করেন।

— ছান্দোগ্য উপনিষদ ১। ৯। ১-১। ৯। ২[২৫]

ম্যাক্স মুলারের মতে, উল্লিখিত এই ‘আকাশ’ শব্দটি পরে বেদান্ত সূত্রের ১। ১। ২২-সংখ্যক সূত্রে ব্রহ্মের বৈদিক ধারণাটির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।[২৬] পল ডুসেনের ব্যাখ্যা অনুসারে, ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ “সমগ্র বিশ্বের চেতনায় উপস্থিত একটি সৃজনশীল তত্ত্ব”।[২৭] ছান্দোগ্য উপনিষদে ধর্ম ও অন্যান্য অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে:

ধর্মের বিভাগ তিনটি—যজ্ঞ, স্বাধ্যায়দান একটি ধর্মবিভাগ; তপস্যা দ্বিতীয় বিভাগ; এবং যাবজ্জীবন আচার্যগৃহে শরীরক্ষয়কারী গুরুগৃহবাসী ব্রহ্মচারীই তৃতীয় বিভাগ। এঁরা সকলেই পুণ্যলোকে গমন করেন। কিন্তু যিনি (প্রণবরূপ ব্রহ্মপ্রতীকে) ব্রহ্মোপাসনা করেন তিনি অমরত্ব প্রাপ্ত হন।

— ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ২। ২৩। ১[২৮][২৯][৩০]

কেন উপনিষদ্‌ সম্পাদনা

সামবেদের তলবকার ব্রাহ্মণ শাখার শেষ পর্যায়ে কেন উপনিষদ্‌ নিহিত রয়েছে।[৩১][৩২] এই উপনিষদ্‌ আকারে অনেকটাই ছোটো। তবে দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক প্রশ্নগুলির বিচারের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ছান্দোগ্য উপনিষদেরই মতো। উদাহরণস্বরূপ, কেন উপনিষদের চতুর্থ খণ্ডে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক জীবের অন্তরে আত্মজ্ঞানের জন্য আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পিপাসা থাকে।[৩৩] এই আত্ম-ব্রহ্মজ্ঞান হল ‘তদ্বনম্‌’ বা তুরীয় আনন্দ।[৩৪] কেন উপনিষদের শেষ পঙ্‌ক্তিগুলিতে বলা হয়েছে, নৈতিক জীবন আত্মজ্ঞান ও আত্মব্রহ্মজ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ।

তপস্যা,[৩৫] দম,[৩৬] কর্ম – উক্ত উপনিষদের পাদসমূহ, বেদসমূহ তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ, সত্য তাঁর নিবাসস্থল।

— কেন উপনিষদ্‌ ৪। ৮[৩৭]

রচনাকাল ও ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ সম্পাদনা

মাইকেল উইটজেল বলেছেন, সামবেদ ও অন্যান্য বৈদিক গ্রন্থের কোনো সঠিক রচনাকাল নির্ধারন করা সম্ভব নয়।[৩৮] তার মতে, সামবেদ সংহিতার রচিত হয়েছিল ঋগ্বেদের ঠিক পরেই। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০০ – ৩২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এই অংশ লিপিবদ্ধ হয়। সেই হিসেবে এই গ্রন্থ অথর্ববেদযজুর্বেদের সমসাময়িক।[৩৮]

সামবেদ পাঠের প্রায় ১২টি ধরন রয়েছে। যে তিনটি সংস্করণের অস্তিত্ব এখনও রয়েছে, তার মধ্যে জৈমিনীয় ধারাটি সামবেদ পাঠের প্রাচীনতম অস্তিত্বমান ধারাটিকে রক্ষা করে চলেছে।[১৫]

পাণ্ডুলিপি ও অনুবাদ সম্পাদনা

সামবেদের কৌথুম শাখার সংহিতা, ব্রাহ্মণ, শ্রৌতসূত্র ও অতিরিক্ত সূত্রগুলি মূলত বি. আর. শর্মা কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। জৈমিনীয় শাখার কিছু অংশ এখনও অপ্রকাশিত।[৩৯] ডব্লিউ. ক্যালান্ড সামবেদ সংহিতার প্রথম অংশের একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন।[৪০] রঘু বীর ও লোকেশ চন্দ্র সামবেদ ব্রাহ্মণের কিছু অংশ প্রকাশ করেন।[৪১] তারা সামবেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বল্প-পরিচিত উপনিষদগুলি[৪২] প্রকাশ করলেও শ্রৌতসূত্রের সামান্য কিছু অংশ মাত্র প্রকাশ করেন। গীতিগ্রন্থগুলি এখনও অপ্রকাশিতই রয়ে গিয়েছে।[৪৩]

১৮৪৮ সালে থিওডোর বেনফি সামবেদের কৌথুম শাখার একটি জার্মান সংস্করণ প্রকাশ করেন।[৪৪] সত্যব্রত সামাশ্রমী ১৮৭৩ সালে একটি সম্পাদিত সংস্কৃত সংস্করণ প্রকাশ করেন।[৪৫] ১৮৯৩ সালে র্যা লফ গ্রিফিথ সামবেদের একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন।[৪৬]

সামবেদ ঋগ্বেদের মতো গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। কারণ, সাংগীতিক সৌন্দর্য ও সৃজনশীলতা এবং ৭৫টি শ্লোক ছাড়া এই গ্রন্থ মূলত ঋগ্বেদ থেকেই গৃহীত। সেই কারণে ঋগ্বেদ পাঠই যথেষ্ট মনে করা হয়।[৪৭]

সাংস্কৃতিক প্রভাব সম্পাদনা

উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত আমাদের সংগীত প্রথা [ভারতীয়] সামবেদে এর উৎসটিকে স্মরণ করে এবং মর্যাদা দেয়... [সামবেদ হল] ঋগ্বেদের সাংগীতিক সংস্করণ। - ভি. রাঘবন[ক]

সামবেদ পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন সংগীত গ্রন্থ। গাই বেকের মতে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্যের মূল সামবেদ, উপনিষদ্‌ ও আগম শাস্ত্রের ধ্বনি ও সংগীত-সংক্রান্ত দিক্‌নির্দেশিকার মতে নিহিত।[১১] গান ও মন্ত্রপাঠ ছাড়াও সামবেদে বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। বাদ্যযন্ত্রগুলি বাজানোর নিয়ম ও নির্দেশিকা গন্ধর্ববেদ নামে পৃথক একটি সংকলনে পাওয়া যায়। এটি সামবেদের সঙ্গে যুক্ত একটি উপবেদ।[১১][৪৮] সামবেদে বর্ণিত মন্ত্রপাঠের গড়ন ও তত্ত্ব ভারতীয় শাস্ত্রীয় শিল্পকলার গঠনগত আদর্শগুলিকে প্রভাবিত করেছে। ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে সামবেদের অবদান সংগীতজ্ঞরা বহুলভাবে স্বীকার করে থাকেন।[১১][৪৯]

আরও দেখুন সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Our music tradition [Indian] in the North as well as in the South, remembers and cherishes its origin in the Samaveda... the musical version of the Rigveda.[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামশেখ মুজিবুর রহমান২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধবাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)শেষের কবিতাভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪পহেলা বৈশাখআবহাওয়াক্লিওপেট্রাবাংলা ভাষা আন্দোলনঘূর্ণিঝড়মুহাম্মাদকিরগিজস্তানবাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনপদ্মা সেতুমৌলিক পদার্থের তালিকাভূমি পরিমাপবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাব্লু হোয়েল (খেলা)ভারতবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহমহাত্মা গান্ধীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাসাতই মার্চের ভাষণমিয়া খলিফাকামরুল হাসানসাইবার অপরাধআসসালামু আলাইকুমঢাকা মেট্রোরেলশেখ হাসিনাসুন্দরবন