ব্রহ্মগুপ্ত
ব্রহ্মগুপ্ত (আনু. ৫৯৮ - আনু. ৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ) একজন ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তিনি গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর প্রথম দিককার তিনটি রচনার লেখক: ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত ("ব্রহ্মার মতবাদ সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন", ৬২৮ সালে), একটি তাত্ত্বিক গ্রন্থ, এবং খণ্ডখাদ্যক (ভোজ্য গ্রাস, ৬৬৫ সালে), বেশি ব্যবহারিক পাঠ্য।
ব্রহ্মগুপ্ত | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | আনু. ৫৯৮ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যু | আনু. ৬৬৮ খ্রিস্টাব্দ |
পরিচিতির কারণ | |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | মধ্যপ্রদেশ, জ্যোতির্বিজ্ঞান |
ব্রহ্মগুপ্তই প্রথম শূন্য র সাথে গণনা করার নিয়ম দিয়েছেন। ব্রহ্মগুপ্ত রচিত গ্রন্থগুলি, সংস্কৃত ভাষায় উপবৃত্তাকার শ্লোকে লেখা ছিল[২], তখনকার ভারতীয় গণিতে এই ধারা ই প্রচলিত ছিল। যেহেতু কোন প্রমাণ দেওয়া হয়নি, ব্রহ্মগুপ্ত কীভাবে ফলাফল পেয়েছিলেন তা জানা যায়নি।[৩]
জীবন এবং কর্মকাণ্ড
সম্পাদনাব্রহ্মগুপ্তের নিজের বক্তব্য অনুসারে, তিনি খ্রিস্টীয় ৫৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। চাভদা সাম্রাজ্যের শাসক, ব্যগ্রহমুখের রাজত্বকালে তিনি ভিল্লামালা (আধুনিক ভিনমাল) -এ থাকতেন। তিনি জিষ্ণুগুপ্তের পুত্র এবং শৈব ধর্মের অনুগামী ছিলেন।[৪] যদিও বেশিরভাগ পণ্ডিত ধারণা করেন যে ব্রহ্মগুপ্ত ভিল্লামালায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এটির জন্য কোন চূড়ান্ত প্রমাণ নেই। যাইহোক, তিনি তাঁর জীবনের বেশ কিছু সময় সেখানে বসবাস ও কাজ করেছিলেন। পৃথুদক স্বামিন, পরবর্তী সময়ের এক মন্তব্যকারী, তাঁকে ভিল্লামালাচার্য বলে সম্বোধন করেছেন, যার অর্থ ভিল্লামালার শিক্ষক।[৫] সমাজবিজ্ঞানী জি. এস. ঘুর্যের বিশ্বাস ছিল, যে, তিনি সম্ভবত মুলতান বা আবু অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।[৬]
হিউয়েন সাঙ যাকে 'পি-লো-মো-লো' বলতেন, সেই ভিল্লামালা, পশ্চিম ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজত্ব, গুর্জরদেশের আপাত রাজধানী ছিল, যে অঞ্চলটি আধুনিক ভারতে দক্ষিণ রাজস্থান এবং উত্তর গুজরাত নিয়ে গঠিত। এটি গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যার শেখার একটি কেন্দ্রও ছিল।ব্রহ্মগুপ্ত সেই সময়ের মধ্যে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের চারটি প্রধান বিদ্যালয়ের একটি ব্রহ্মপক্ষ বিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ হয়েছিলেন। তিনি ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যায় পাঁচটি ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধন্ত নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, এর পাশাপাশি তিনি আর্যভট্ট, লতাদেব, প্রদ্যুম্ন, বরাহমিহির, সিংহ, শ্রীসেনা, বিজয়ানন্দিন এবং বিষ্ণুচন্দ্র সহ অন্যান্য জ্যোতির্বিদদের কাজ নিয়েও পড়েছেন।[৫]
৬২৮ সালে, ৩০ বছর বয়সে, তিনি ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত (ব্রহ্মার মতবাদ) রচনা করেছিলেন, যা ব্রহ্মপক্ষ বিদ্যালয়ের প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত র সংশোধিত সংস্করণ বলে মনে করা হয়। বিদ্বানরা বলেছেন যে তিনি তার রচনায় প্রচুর মৌলিকত্ব সংহত করেছিলেন, যথেষ্ট পরিমাণে নতুন উপাদান যুক্ত করেছিলেন। বইটি আর্য মিত্রের ২৪ টি অধ্যায়ের ১০০৮ শ্লোক নিয়ে গঠিত। এটির অনেকটি অংশ জুড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান রয়েছে, তবে এতে বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি এবং অ্যালগোরিদমিক্স সহ গণিতের মূল অধ্যায়গুলি রয়েছে, যা ব্রহ্মগুপ্তের কারণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।[৫][৭][৮]
পরে, ব্রহ্মগুপ্ত, জ্যোতির্বিদ্যার আর একটি প্রধান কেন্দ্র, উজ্জয়িনীতে চলে যান। ৬৭ বছর বয়সে, তিনি তাঁর পরবর্তী বিখ্যাত রচনা খন্ডখাদ্যক রচনা করেছিলেন, যেটি ছিল করণ বিভাগে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পুস্তক।[৯]
ব্রহ্মগুপ্ত ৬৬৫ খ্রিস্টাব্দের পরেও বেঁচে ছিলেন। এই মহান গণিতবিদ ৬৬০ থেকে ৬৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন।[১০]।
বিতর্ক
সম্পাদনাব্রহ্মগুপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যোতির্বিদদের কাজের বিরাট সমালোচনা করেছিলেন, এবং তাঁর ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত ভারতীয় গণিতবিদদের মধ্যে প্রথম দিকের একটি মতবিরোধ প্রদর্শন করে। বিভাগটি মূলত বাস্তব বিশ্বে গণিতের প্রয়োগ সম্পর্কে ছিল, শুধু গণিত সম্বন্ধে ছিলনা ব্রহ্মগুপ্তের ক্ষেত্রে, মতবিরোধগুলি মূলত জ্যোতির্বিদ্যার পরামিতি এবং তত্ত্বগুলির পছন্দ থেকে শুরু হয়েছিল।[১১] প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্বগুলির সমালোচনাগুলি প্রথম দশটি জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত অধ্যায়গুলিতে উপস্থাপিত হয়েছে এবং একাদশতম অধ্যায় পুরোপুরি এই তত্ত্বগুলির সমালোচনাতে নিবেদিত, যদিও দ্বাদশ এবং আঠারো অধ্যায়ে কোনও সমালোচনা প্রকাশিত হয় নি।[১১]
আরো দেখুন
সম্পাদনাউদ্ধৃতি এবং পাদটীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Avari, Burjor (২০১৩), Islamic Civilization in South Asia: A history of Muslim power and presence in the Indian subcontinent, Routledge, আইএসবিএন 978-0-415-58061-8
- Bose, D. M.; Sen, S. N.; Subbarayappa, B. V. (১৯৭১), A Concise History of Science in India, New Delhi: Indian National Academy of Science, পৃষ্ঠা 95–97, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা
- Bhattacharyya, R. K. (২০১১), "Brahmagupta: The Ancient Indian Mathematician", B. S. Yadav; Man Mohan, Ancient Indian Leaps into Mathematics, Springer Science & Business Media, পৃষ্ঠা 185–192, আইএসবিএন 978-0-8176-4695-0
- Boyer, Carl B. (১৯৯১), A History of Mathematics, John Wiley & Sons, Inc, আইএসবিএন 0-471-54397-7
- Cooke, Roger (১৯৯৭), The History of Mathematics: A Brief Course, Wiley-Interscience, আইএসবিএন 0-471-18082-3
- Gupta, Radha Charan (২০০৮), "Brahmagupta", Selin, Helaine, Encyclopaedia of the History of Science, Technology, and Medicine in Non-Western Cultures, Springer, পৃষ্ঠা 162–163, আইএসবিএন 978-1-4020-4559-2
- Joseph, George G. (২০০০), The Crest of the Peacock, Princeton University Press, আইএসবিএন 0-691-00659-8
- O'Leary, De Lacy (২০০১) [first published 1948], How Greek Science Passed to the Arabs (2nd সংস্করণ), Goodword Books, আইএসবিএন 8187570245
- Plofker, Kim (২০০৭), "Mathematics in India", Victor Katz, The Mathematics of Egypt, Mesopotamia, China, India, and Islam: A Sourcebook, Princeton University Press, আইএসবিএন 978-0-691-11485-9
- Stillwell, John (২০০৪), Mathematics and its History (Second সংস্করণ), Springer Science + Business Media Inc., আইএসবিএন 0-387-95336-1
- Hockey, Thomas, সম্পাদক (২০০৭), "Brahmagupta", Biographical Encyclopedia of Astronomers, Springer Science & Business Media, পৃষ্ঠা 165, আইএসবিএন 978-0387304007
Further reading
সম্পাদনা- Seturo Ikeyama (২০০৩)। Brāhmasphuṭasiddhānta of Brahmagupta with Commentary of Pṛthūdhaka, critically edited with English translation and notes। INSA।
- David Pingree। Census of the Exact Sciences in Sanskrit (CESS)। American Philosophical Society। A4, p. 254।
- Shashi S. Sharma। Mathematics & Astronomers of Ancient India। Pitambar Publishing। আইএসবিএন 9788120914216।
- ও'কনর, জন জে.; রবার্টসন, এডমুন্ড এফ., "Brahmagupta", ম্যাকটিউটর গণিতের ইতিহাস আর্কাইভ, সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় ।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)
- Brahmagupta's Brahma-sphuta-siddhanta edited by Ram Swarup Sharma, Indian Institute of Astronomical and Sanskrit Research, 1966. English introduction, Sanskrit text, Sanskrit and Hindi commentaries (PDF)
- টেমপ্লেট:Internet archive, translated by Henry Thomas Colebrooke. [১]