পশ্চিমবঙ্গের জেলা

উইকিমিডিয়ার তালিকা নিবন্ধ
(পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির তালিকা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসমসিকিম রাজ্য অবস্থিত। রাজ্যের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে গঙ্গা পূর্বমুখে এবং তার শাখানদী হুগলি দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ অঞ্চলে অবস্থিত শিলিগুড়ি করিডোর উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষা করছে। পশ্চিমবঙ্গ একাধিক ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। যেমন, দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, রাঢ় অঞ্চল, পশ্চিমের উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চল, উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল, সুন্দরবন এবং গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল।[১]

পশ্চিমবঙ্গের জেলাসমূহ
শহিদ মিনারের কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী এবং একটা স্বতন্ত্র জেলা

১৯৪৭ সালে, যখন ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, তখন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশ বিভাজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী উক্ত প্রদেশের ১৪টি জেলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গঠিত হয়।[২][৩] ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি পূর্বতন দেশীয় রাজ্য কোচবিহার একটি জেলা রূপে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।[৪] ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর রাজ্যের হুগলি জেলার একটি অংশরূপে যুক্ত হয়।[৫] ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী, পুরুলিয়া জেলার বঙ্গভুক্তি ঘটে এবং বিহারের অপর একটি অংশ পশ্চিম দিনাজপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়।[৬] পরবর্তীকালে পশ্চিম দিনাজপুর, মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগনা, ও জলপাইগুড়ি জেলার মতো বৃহদাকার জেলাগুলিকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ৫টি বিভাগ ও ২৩টি জেলা থেকে বেড়ে ৩০টি জেলায় হয়েছে। ১লা আগস্ট ২০২২ মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে ৭টি জেলার কথা ঘোষণা করেন ( নতুন ৭টি জেলা হল - সুন্দরবন, ইচ্ছেমতী, বসিরহাট,রানাঘাট,বিষ্ণুপুর, বহরমপুর ও কান্দি )


বিভাগগুলি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলাগুলি জেলাশাসকের[৭] দ্বারা শাসিত হয়। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা কলকাতা জেলায় অবস্থিত। অন্যান্য জেলাগুলি মহকুমাব্লকে বিভক্ত। এগুলি যথাক্রমে মহকুমা শাসক ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দ্বারা শাসিত হয়। এই রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ত্রিস্তরীয়। গ্রামস্তরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা "গ্রাম পঞ্চায়েত",[৮] ব্লকস্তরে "পঞ্চায়েত সমিতি"[৯] ও জেলাস্তরে "জেলা পরিষদ"[১০] নামে পরিচিত। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমান জেলা বিভক্ত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলাপশ্চিম বর্ধমান জেলায় পরিণত হয়েছে। এই সালেই ঘোষিত আরো দুটি জেলা হল ঝাড়গ্রাম জেলাকালিম্পং জেলা[১১]

ভূগোল সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে তিনটি রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এবং পাঁচটি ভারতীয় রাজ্য সিকিম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অসম অবস্থিত। সিকিম ও ভুটান রাজ্যের উত্তরে, নেপাল উত্তর-পশ্চিমে, বিহার ও ঝাড়খণ্ড পশ্চিমে, ওড়িশা দক্ষিণ-পশ্চিমে, বঙ্গোপসাগর দক্ষিণে, এবং বাংলাদেশ ও অসম পূর্বে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গই ভারতের একমাত্র রাজ্য যার উত্তরে হিমালয় ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই দুইয়ের মধ্যে পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে গঙ্গা রাজ্যে প্রবেশ করে পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে এর প্রধান শাখানদী হুগলি বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর , মালদহকালিম্পং জেলা— গঙ্গার উত্তরে অবস্থিত এই জেলাগুলি একসঙ্গে উত্তরবঙ্গ নামে পরিচিত।[১] উত্তরবঙ্গ তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। যথা, দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গ সমভূমি।[১] শিলিগুড়ি করিডর (যা ‘চিকেনস নেক’ নামেও পরিচিত) উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষা করছে।[১২]

গঙ্গার দক্ষিণে অবস্থিত জেলাগুলি হল: বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর,ঝাড়গ্রাম ,হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনাদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। এই অঞ্চলটি দক্ষিণবঙ্গ নামে পরিচিত। দক্ষিণবঙ্গ পাঁচটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভাজিত। যথা, রাঢ় অঞ্চল, পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চল, উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল, সুন্দরবন ও গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল।[১] রাজ্যের রাজধানী কলকাতা কলকাতা জেলা নিয়ে গঠিত।

১৯৭০-এর দশকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রই নিজের বলে দাবি করে থাকে।[১৩]

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৪৭ খ্রস্টাব্দে রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় পশ্চিমবঙ্গের মূল ১৪টি জেলা: ১. কলকাতা, ২. চব্বিশ পরগনা, ৩. হাওড়া, ৪. নদিয়া, ৫. হুগলি, ৬. মেদিনীপুর, ৭. বাঁকুড়া, ৮. বর্ধমান, ৯. বীরভূম, ১০. মুর্শিদাবাদ, ১১. মালদহ, ১২. পশ্চিম দিনাজপুর, ১৩. দার্জিলিং ও ১৪. জলপাইগুড়ি।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা অর্জনের সময় ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশটি ধর্মীয় ভিত্তিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়। উক্ত প্রদেশের হিন্দুপ্রধান পশ্চিমাঞ্চলটিকে নিয়ে গঠিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।[২] ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় পশ্চিমবঙ্গ ১৪টি জেলায় বিভক্ত ছিল— বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, কলকাতা, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, হুগলি, হাওড়া, মালদহ, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম দিনাজপুর ও চব্বিশ পরগনা।[৩] বর্তমান কোচবিহার জেলা অতীতে ছিল কোচবিহার নামে এক দেশীয় রাজ্য। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অগাস্ট এই রাজ্য সরকারিভাবে ভারতে যোগ দেয়। ওই বছর ১২ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক ক্ষমতার হস্তান্তর শুরু হয় এবং তা সমাপ্ত হয় ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি। এরপর কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়।[৪] ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর একটি গণভোটের মাধ্যমে ভারতে যোগদানের পক্ষে মতপ্রকাশ করে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে চন্দননগর ভারতভুক্ত হয় এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২ অক্টোবর এটি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার একটি অংশে পরিণত হয়।[৫] ১৯৫৬ খ্রিস্টব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী ভাষার ভিত্তিতে ভারতীয় রাজ্যগুলির সীমানা পুনর্নির্ধারিত হয়। এই আইন বলবৎ হলে বিহারের একটি অংশ পশ্চিম দিনাজপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর বিহারের মানভূম জেলার পুরুলিয়া মহকুমাটি একটি পূর্ণাঙ্গ জেলার আকারে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।[৬]

পরবর্তীকালে কয়েকটি বৃহদাকার জেলাকে ছোটো জেলায় দ্বিখণ্ডিত করা হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ পূর্বতন চব্বিশ পরগনা জেলাটিকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা গঠিত হয়।[১৪] ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল পূর্বতন পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত হয়।[১৫][১৬] ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি পূর্বতন মেদিনীপুর জেলা দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়।[১১]

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও তার সমর্থকেরা পুনরায় পৃথক 'গোর্খাল্যান্ড' রাজ্যের দাবি উত্থাপন করতে শুরু করেছেন।[১৭] অন্যদিকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কামতাপুর পিপলস পার্টি ও তার সমর্থকেরা সমগ্র উত্তরবঙ্গ নিয়ে পৃথক 'কামতাপুর' রাজ্যের দাবি জানায়।[১৮]

প্রশাসনিক গঠন সম্পাদনা

কলকাতা উচ্চ আদালত

প্রত্যেক জেলার শাসনভার একজন জেলাশাসকের হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনি জেলা সমাহর্তা বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট নামেও পরিচিত।[৭] জেলাশাসক সাধারণত ভারতীয় প্রশাসনিক সেবা (আইএএস) অথবা পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস (ডব্লিউবিসিএস) ক্যাডারের আধিকারিক হন এবং তাকে নিয়োগ করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।[৭] কলকাতা বাদে প্রত্যেকটি জেলা মহকুমায় বিভক্ত। মহকুমাগুলি মহকুমা শাসক বা সাব-ডিভিশনাল অফিসারের (এসডিও) দ্বারা শাসিত।[১৯] পুরসভা অঞ্চল বাদে মহকুমার অবশিষ্টাংশ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত থাকে। ব্লকগুলি হঠিত হয় সেন্সাস টাউন (নগরাঞ্চল) ও গ্রাম পঞ্চায়েত (গ্রামাঞ্চল) নিয়ে। ব্লকের শাসনভার ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের (বিডিও) হাতে ন্যস্ত থাকে।[৭]

কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়। এটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন স্তরের স্বায়ত্তশাসন সংস্থা। গ্রাম পঞ্চায়েতে নেতৃত্বভার পঞ্চায়েত প্রধানের হাতে ন্যস্ত থাকে।[৮] ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্লকে একটি করে পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। এই সমিতির সদস্যরা হলেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের সকল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং ব্লকের সকল বিধায়ক।[৯] পঞ্চায়েত সমিতির প্রধানকে সভাধিপতি বলা হয়।[২০] পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তৃতীয় স্তরটি হল জেলা পরিষদ। এটি জেলা স্তরের সংগঠন। জেলা পরিষদের সদস্যরা হলেন উক্ত জেলার সকল সভাধিপতি এবং জেলার সকল বিধায়ক।[১০] জেলা পরিষদের প্রধান হলেন জেলা সভাধিপতি।[২১] দার্জিলিং জেলায় কোনো জেলা পরিষদ নেই। এই জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার জন্য একটি অনুরূপ মহকুমা পরিষদ বিদ্যমান।[২২]

দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং সদর, কালিম্পংকার্শিয়ং মহকুমা তিনটির প্রশাসনিক দায়িত্ব ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের হাতে দেওয়া হয়েছিল।[২৩] হিল কাউন্সিল জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুর্ত, পরিবহন, পর্যটন, বাজার, ক্ষুদ্রশিল্প, কৃষি, কৃষি জলপথ, বন (সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যতীত), জলসরবরাহ, গবাদি পশু, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল।[২৪] সম্প্রতি এই অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়েছে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন বা জিটিএ।[২৫] জেলা প্রশাসনের হাতে রয়েছে নির্বাচন, পঞ্চায়েত, আইনশৃঙ্খলা ও রাজস্ব ইত্যাদি বিভাগ। জেলা প্রশাসন জিটিএ ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সংস্থার কাজও করে।[২৪]

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রতিটি জেলার দায়িত্বে থাকেন একজন করে জেলা পুলিশ সুপার। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের পুলিশ আইন অনুযায়ী, এই বিধি সমগ্র ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।[২৬] জেলা পুলিশ সুপার ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) ক্যাডারের আধিকারিক।[২৭] প্রতিটি মহকুমায় একটি করে মহকুমা পুলিশ বিভাগ করেছে। মহকুমা পুলিশের দায়িত্বে থাকেন সহ-পুলিশ সুপারের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো পুলিশ অফিসার।[২৮] মহকুমা পুলিশের অধীনে থাকে একাধিক পুলিশ কেন্দ্র। এর প্রত্যেকটির দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে একজন করে পুলিশ ইনস্পেক্টরের হাতে।[২৮] পুলিশ কেন্দ্রগুলি আবার একাধিক থানা নিয়ে গঠিত। প্রতিটি থানার দায়িত্বে থাকেন একজন করে পুলিশ ইনস্পেক্টর (শহরাঞ্চল) বা সাব-ইনস্পেক্টর (গ্রামাঞ্চল)।[২৮]

সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ কলকাতা উচ্চ আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা। অধিকাংশ জেলাতেই জেলা আদালত ছাড়াও অন্যান্য নিম্ন আদালতের অস্তিত্ব থাকলেও, রাজ্যের সকল মহকুমায় আদালত নেই।[২৯]

কয়েকটি জেলা নিয়ে একটি বিভাগ গঠিত। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব একজন করে বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ন্যস্ত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলা পাঁচটি বিভাগে বিন্যস্ত:

বর্ধমান বিভাগমালদা বিভাগজলপাইগুড়ি বিভাগপ্রেসিডেন্সি বিভাগমেদিনীপুর বিভাগ

জেলা পরিসংখ্যান সম্পাদনা

কোড[৩০]জেলাজেলাসদর[৩১]প্রতিষ্ঠা[৩২]মহকুমাআয়তন[৩৩]২০১১ অনুসারে জনসংখ্যা[৩৩]জনঘনত্বমানচিত্র
KOকলকাতা জেলাকলকাতা১৯৪৭--১৮৫ বর্গকিলোমিটার (৭১ বর্গমাইল)৪,৪৮৬,৬৭৯২৪,২৫২/কিমি (৬২,৮১০/বর্গমাইল)
PNউত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাবারাসত১৯৮৬[১৪]৪,০৯৪ বর্গকিলোমিটার (১,৫৮১ বর্গমাইল)১০,০৮২,৮৫২২,৪৬৩/কিমি (৬,৩৮০/বর্গমাইল)
PSদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাআলিপুর১৯৮৬[১৪]৯,৯৬০ বর্গকিলোমিটার (৩,৮৫০ বর্গমাইল)৮,১৫৩,১৭৬৮১৯/কিমি (২,১২০/বর্গমাইল)
HRহাওড়া জেলাহাওড়া১৯৪৭১,৪৬৭ বর্গকিলোমিটার (৫৬৬ বর্গমাইল)৪,৮৪১,৬৩৮৩,৩০০/কিমি (৮,৫০০/বর্গমাইল)
NAনদিয়া জেলাকৃষ্ণনগর১৯৪৭৩,৯২৭ বর্গকিলোমিটার (১,৫১৬ বর্গমাইল)৫,১৬৮,৪৮৮১,৩১৬/কিমি (৩,৪১০/বর্গমাইল)
MUমুর্শিদাবাদ জেলাবহরমপুর১৯৪৭৫,৩২৪ বর্গকিলোমিটার (২,০৫৬ বর্গমাইল)৭,১০২,৪৩০১,৩৩৪/কিমি (৩,৪৬০/বর্গমাইল)
PUপুরুলিয়া জেলাপুরুলিয়া১৯৫৬[৬]৬,২৫৯ বর্গকিলোমিটার (২,৪১৭ বর্গমাইল)২,৯২৭,৯৬৫৪৬৮/কিমি (১,২১০/বর্গমাইল)
BIবীরভূম জেলাসিউড়ি১৯৪৭৪,৫৪৫ বর্গকিলোমিটার (১,৭৫৫ বর্গমাইল)৩,৫০২,৩৮৭৭৭১/কিমি (২,০০০/বর্গমাইল)
BNবাঁকুড়া জেলাবাঁকুড়া১৯৪৭৬,৮৮২ বর্গকিলোমিটার (২,৬৫৭ বর্গমাইল)৩,৫৯৬,২৯২৫২৩/কিমি (১,৩৫০/বর্গমাইল)
BRপূর্ব বর্ধমান জেলাবর্ধমান১৯৪৭৭,০২৪ বর্গকিলোমিটার (২,৭১২ বর্গমাইল)৭,৭২৩,৬৬৩১,১০০/কিমি (২,৮০০/বর্গমাইল)
পশ্চিম বর্ধমান জেলাআসানসোল২০১৭
HGহুগলি জেলাচুঁচুড়া১৯৪৭৩,১৪৯ বর্গকিলোমিটার (১,২১৬ বর্গমাইল)৫,৫২০,৩৮৯১,৭৫৩/কিমি (৪,৫৪০/বর্গমাইল)
MEপূর্ব মেদিনীপুর জেলাতমলুক২০০২[১১]৪,৭৮৫ বর্গকিলোমিটার (১,৮৪৭ বর্গমাইল)৫,০৯৪,২৩৮১,০৭৬/কিমি (২,৭৯০/বর্গমাইল)
MEপশ্চিম মেদিনীপুর জেলামেদিনীপুর২০০২[১১]৯,২৯৬ বর্গকিলোমিটার (৩,৫৮৯ বর্গমাইল)৫,৯৪৩,৩০০৬৩৬/কিমি (১,৬৫০/বর্গমাইল)
KBকোচবিহার জেলাকোচবিহার১৯৫০[৪]৩,৩৮৭ বর্গকিলোমিটার (১,৩০৮ বর্গমাইল)২,৮২২,৭৮০৮৩৩/কিমি (২,১৬০/বর্গমাইল)
KAকালিম্পং জেলাকালিম্পং২০১৭[১১]১,০৪৪ কিমি (৪০৩ মা)২৫১,৬৪২
ADআলিপুরদুয়ার জেলাআলিপুরদুয়ার২০১৪৩,৩৮৩ বর্গকিলোমিটার (১,৩০৬ বর্গমাইল)প্রায় ১৫,৪০,০০০২২/কিমি (৫৭/বর্গমাইল)
DAদার্জিলিং জেলাদার্জিলিং১৯৪৭৩,১৪৯ বর্গকিলোমিটার (১,২১৬ বর্গমাইল)১,৮৪২,০৩৪৫৮৫/কিমি (১,৫২০/বর্গমাইল)
JAজলপাইগুড়ি জেলাজলপাইগুড়ি১৯৪৭৬,২২৭ বর্গকিলোমিটার (২,৪০৪ বর্গমাইল)৩,৮৬৯,৬৭৫৬২১/কিমি (১,৬১০/বর্গমাইল)
JHঝাড়গ্রাম জেলাঝাড়গ্রাম২০১৭[৪]৩,০৩৭.৬৪ কিমি (১,১৭২.৮৪ মা)১,১৩৬,৫৪৮৮৩৩/কিমি (২,১৬০/বর্গমাইল)
UDউত্তর দিনাজপুর জেলারায়গঞ্জ১৯৯২[১৫]৩,১৪০ বর্গকিলোমিটার (১,২১০ বর্গমাইল)৩,০০০,৮৪৯৯৫৬/কিমি (২,৪৮০/বর্গমাইল)
DDদক্ষিণ দিনাজপুর জেলাবালুরঘাট১৯৯২[১৬]২,২১৯ বর্গকিলোমিটার (৮৫৭ বর্গমাইল)১,৬৭০,৯৩১৭৫৩/কিমি (১,৯৫০/বর্গমাইল)
MAমালদহ জেলাইংলিশবাজার১৯৪৭৩,৭৩৩ বর্গকিলোমিটার (১,৪৪১ বর্গমাইল)৩,৯৯৭,৯৭০১,০৭১/কিমি (২,৭৭০/বর্গমাইল)
মোট২৩৯৬,২৪৮ বর্গকিলোমিটার (৩৭,১৬২ বর্গমাইল)৯১,৩৪৭,৭৩৬১,০২৯/কিমি (২,৬৭০/বর্গমাইল)

প্রস্তাবিত জেলা সম্পাদনা

  • উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে বসিরহাট জেলা৷ [৩৪][৩৫]
  • দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে সুন্দরবন জেলা৷ [৩৬][৩৭][৩৮]
  • মুর্শিদাবাদ জেলাকে উত্তর দক্ষিণে বিভক্ত করে উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলা ও দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা৷ [৩৯]
  • মালদহ জেলাকে উত্তর দক্ষিণে বিভক্ত করে উত্তর মালদহ জেলা ও দক্ষিণ মালদহ জেলা৷ [৪০]
  • বাঁকুড়া জেলাকে ভেঙে বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া জেলা

জনপরিসংখ্যান সম্পাদনা

নিচে ভারতের জেলাগুলির জনসংখ্যার পরিসংখ্যানগত (২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনার ভিত্তিতে) অবস্থানের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির জনসংখ্যার পরিসংখ্যান দেওয়া হল।[৪১]

ভারতে অবস্থানজেলাজনসংখ্যাবৃদ্ধির হারলিঙ্গানুপাতসাক্ষরতার হারজনঘনত্ব/কিলোমিটার
উত্তর চব্বিশ পরগনা১০,০৮২,৮৫২১২.৮৬৯৪৯৮৪.৯৫২৪৬৩
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা৮,১৫৩,১৭৬১৮.০৫৯৪৯৭৮.৫৭৮১৯
বর্ধমান৭,৭২৩,৬৬৩১২.০১৯৪৩৭৭.১৫১১০০
মুর্শিদাবাদ জেলা৭,১০২,৪৩০২১.০৭৯৫৭৬৭.৫৩১৩৩৪
১৪পশ্চিম মেদিনীপুর৫,৯৪৩,৩০০১৪.৪৪৯৬০৭৯.০৪৬৩৬
১৬হুগলি৫,৫২০,৩৮৯৯.৪৯৯৫৮৮২.৫৫১৭৫8
১৮নদিয়া৫,১৬৮,৪৮৮১২.২৪৯৪৭৭৫.৫৮১৩১৬
২০পূর্ব মেদিনীপুর৫,০৯৪,২৩৮১৫.৩২৯৩৬৮৭.৬৬১০৭৬
২৩হাওড়া৪,৮৪১,৬৩৮১৩.৩১৯৩৫৮৩.৮৫৩৩০০
৩৫কলকাতা৪,৪৮৬,৬৭৯-১.৮৮৮৯৯৮৭.১৪২৪২৫২
৫৮মালদহ৩,৯৯৭,৯৭০২১.৫০৯৩৯৬২.৭১১০৭১
৬৬জলপাইগুড়ি৩,৮৬৯,৬৭৫১৩.৭৭৯৫৪৭৩.৭৯৬২১
৮০বাঁকুড়া৩,৫৯৬,২৯২১২.৬৪৯৫৪৭০.৯৫৫২৩
৮৪বীরভূম৩,৫০২,৩৮৭১৬.১৫৯৫৬৭০.৯০৭৭১
১২৪উত্তর দিনাজপুর৩,০০০,৮৪৯২২.৯০৯৩৬৬০.১৩৯৫৬
১২৯পুরুলিয়া২,৯২৭,৯৬৫১৫.৪৩৯৫৫৬৫.৩৮৪৬৮
১৩৬কোচবিহার২,৮২২,৭৮০১৩.৮৬৯৪২৭৫.৪৯৮৩৩
২৫৭দার্জিলিং১,৮৪২,০৩৪১৪.৪৭৯৭১৭৯.৯২৫৮৫
২৯৫দক্ষিণ দিনাজপুর১,৬৭০,৯৩১১১.১৬৯৫৪৭৩.৮৬৭৫৩

২০১১-পরবর্তী সময়ে দার্জিলিং জেলা থেকে নতুন কালিম্পং জেলা, জলপাইগুড়ি জেলা থেকে নতুন আলিপুরদুয়ার জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা এবং বর্ধমান জেলা থেকে পূর্বপশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠন করা হয়৷

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

৪২. West Bengal New 7 Districts Name ( পশ্চিমবঙ্গের নতুন 7 জেলার নাম )https://www.sarkarisuvidha.in/2022/08/mamata-banerjee-announces-7-new-district-names-in-west-bengal.html (তারিখ 3 অগাস্ট 2022)

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানছয় দফা আন্দোলনভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাবাংলাদেশশেখ মুজিবুর রহমানভারতের প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদীক্লিওপেট্রাভারতীয় জনতা পার্টিবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধলোকসভাএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাইন্দিরা গান্ধীআবুল হাসান মাহমুদ আলীমহাত্মা গান্ধীআবহাওয়ারাহুল গান্ধীভারতভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বিশ্ব পরিবেশ দিবসকুরবানীইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা ভাষা আন্দোলনভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসমিয়া খলিফাভূমি পরিমাপপশ্চিমবঙ্গবাংলা বাগধারার তালিকা২০২৪ কোপা আমেরিকাবেনজীর আহমেদরিশতা লাবণী সীমানামুহাম্মাদ