ওয়াটসন'স হোটেল

ওয়াটসন'স হোটেল হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে পুরাতন টিকে থাকা ঢালাই লোহার দালান, যা বর্তমানে এসপ্ল্যানেড ম্যানসন নামে পরিচিত।[১] এটি মুম্বাইয়ের (বোম্বে) কালা ঘদা এলাকায় অবস্থিত। প্রকৃত মালিক জন ওয়াটসন এর নামে দালানটি ইংল্যান্ডে গড়া করা হয়েছিল এবং এটি ১৮৬০ থেকে ১৮৬৩ সাল এর মধ্যে কালা ঘদায় নির্মিত হয়েছিল।

ওয়াটসন'স হোটেল
ওয়াটসন'স হোটেল, বর্তমানে এসপ্ল্যানেড ম্যানশন নামে পরিচিত এবং কালা ঘদায় অবস্থিত
none মুম্বাই-এ অবস্থিত
none
মুম্বাইে হোটেলটির অবস্থান
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
শহরমুম্বাই
দেশভারত
নির্মাণকাজের আরম্ভ১৮৬৭
নির্মাণকাজের সমাপ্তি১৮৬৯
গ্রাহকজনসন ওয়াটসন
কারিগরী বিবরণ
কাঠামোগত পদ্ধতিঢালাই লোহা
নকশা এবং নির্মাণ
স্থপতিরোল্যান্ড মেসন অরডিশ
প্রকৌশলীরোল্যান্ড মেসন অরডিশ

হোটেলটি ১৮৬৭ সালের ২৬ আগস্টে, ৯৯৯ বছরের জন্য আব্দুল হক এর কাছে বছর প্রতি ৯২ রুপি ১২ আনা শর্তে ইজারা দেওয়া হয়। ১৯৬০ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায় এবং যা পরে ছোট ছোট কক্ষে বিভক্ত করে বাসা ও অফিস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। অবহেলার ফলে ক্ষয়ে যাওয়ায় এবং ঐতিহাসিক গঠনশৈলীর গ্রেড-২এ হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও দালানটির এখন জীর্ণ অবস্থা।

নকশা সম্পাদনা

ওয়াটসন'স হোটেলটির নকশা করেছিলেন নির্মাণ প্রকৌশলী রোল্যান্ড মেসন অরডিশ যিনি লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। স্থাপত্যটি ঢালাই লোহার উপাদান থেকে ইংল্যান্ডে গড়া হয়েছিল এবং কালা ঘদায় সমবেত করে নির্মাণ করা হয়েছিল। বাহিরের লৌহ কাঠামো ১৯ শতকের অন্যান্য উঁচুমানের স্থাপত্যের অনুরুপ, যেমন লন্ডনের ক্রিস্টাল প্যালেস। হোটেলের প্রধান সম্মুখ ফটকটি পৃথক করা হয়েছে প্রতি তলায় অতিথি কক্ষের সাথে যুক্ত প্রশস্ত উম্মুক্ত ব্যালকনি নির্মাণের মাধ্যমে, যেগুলো আঙ্গিনার মত অলিন্দকে ঘিরে নির্মিত।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

ওয়াটসন'স হোটেল (ঊনবিংশ শতাব্দী)

জন ওয়াটসন হোটেলটি খুলেছিলেন শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গদের বিশেষ হোটেল হিসেবে, এবং ঐ সময় এটিই ছিল শহরের সবচাইতে সম্ভ্রান্ত হোটেল। তারপর এটি হ্যানাহ মারিয়া ওয়াটসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তিনি পরে ১৮৬৭ সালের ২৬ আগস্টে ভারতের রাজ্যসচিবের মাধ্যমে সরদার আব্দুল হক, দিলার-উল-মুলক্‌, দিলার-উল-দৌলা এর সাথে নয়শ নিরানব্বই বছরের জন্য একটি ইজারা দলিলে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে, ২২-১২-১৮৮৫ তারিখে বোম্বাই পোর্ট ট্রাস্টের ন্যাসরক্ষক এবং দিলার-উল-মুলক্‌ এর মধ্যে অন্য আরেকটি চুক্তি হয়, যেখানে ০১-০১-১৮৮০ থেকে ৫০ বছর মেয়াদে ৮১২৯ বর্গ গজ পরিমাপের বোম্বের ওয়েলিংটন রিক্লেমেসন এস্টেটের জমি সরদার আব্দুল হকের নিকট ইজারা দেওয়া হয়। পাঁচতলা কাঠামোর ভবনটিতে ১৩০ টি অতিথিকক্ষ, সেই সাথে একটি লবি, রেস্টুরেন্ট এবং নিচতলায় একটি পানশালা ছিল। এছাড়াও হোটেলটিতে একটি ৩০ মিটার × ৯ মিটার (৯৮ ফুট × ৩০ ফুট) আকৃতির কাচের স্কাইলাইট বিশিষ্ট অলিন্দ ছিল, যা মুলত বলরুম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ওয়াটসন’স হোটেল, তার রেস্টুরেন্ট ও বলরুমে ইংরেজ খাদ্য পরিবেশিকাদের নিযুক্ত করতো, যা মনে করিয়ে দিত সেই সময়ের একটি পরিচিত কৌতুককে: “ওয়াটসন শুধু যদি ইংরেজ আবহাওয়াও নিয়ে আসতো”।[২][৩]

ওয়াটসনের মৃত্যুর পর, হোটেলটি প্রতিদ্বন্দ্বী তাজ হোটেলের কাছে এর জনপ্রিয়তা হারায়। ১৯৬০ সালের দিকে হোটেলটি বন্ধ করা দেয়া হয়। এর কিছু সময় পরে, এটা স্বতন্ত্র যাতায়াত সুবিধাসহ ছোট ছোট কক্ষে বিভক্ত ও আলাদা করা হয়েছিল, যা ভাড়া দেওয়া হতো। বছরের পর বছর ধরে, দালানটির প্রতি অধিবাসীদের অনীহার ফলে এটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং এখন এটি জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অলিন্দটি পরবর্তীতে আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং এতে নানান অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে, স্থাপনাটিতে ৫৩টি পরিবার ও ৯৭টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল। অধিকাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বোম্বে সিভিল ও সেশন কোর্ট এবং নিকটবর্তী বোম্বে হাইকোর্টের সাথে সম্পৃক্ত আইনজীবীদের চেম্বার।[২][৩]

উল্লেখযোগ্য অতিথিবৃন্দ সম্পাদনা

এসপ্ল্যানেড ম্যানসন, ২০১১; যার পিছনে রাজাবাই ক্লক টাওয়ার

হোটেলের উল্লেখযোগ্য অতিথিবৃন্দের মধ্যে ছিল মার্ক টোয়েন, যিনি তার ব্যালকনির বাহিরে দেখা শহরের কাক গুলোকে নিয়ে লিখেছিলেন ফলোয়িং দ্যা ইকুয়েটর-এ।[৪] এছাড়াও ১৮৯৬ সালে এটি ছিল লুমিয়ের ব্রাদার্সের উদ্ভাবিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের যন্ত্রের প্রদর্শনীর ভারতের প্রথম স্থান।

মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজের একটু বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য এই হোটেলে পুল খেলতেন।[৫]

হোটেলটিকে ঘিরে একটি জনপ্রিয় কথা প্রচলিত ছিল যে, ওয়াটসন’স হোটেলের কর্মীরা ভারতীয় শিল্পপতি জামসেঠজি টাটার হোটেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলো। প্রতিশোধ হিসেবে ১৯০৩ সালে তিনি তাজ হোটেল নির্মাণ করেন, যা গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত।[২][৩] যাইহোক, লেখক ও ইতিহাসবিদ সারদা দ্বিবেদী এই উপাখ্যানটি প্রকাশ করেন। টাটা প্রতিহিংসাপরায়ন একজন মানুষ ছিলেন, তিনি এমনটি প্রমাণে দলিলের অপ্রতুলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন।[৬]

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

স্থাপনাটির জীর্ণ অবস্থার জন্য দায়ী বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর বর্তমান মালিককে স্থাপনাটি পুনঃনির্মাণের জন্য বিনিয়োগের ব্যাপারে রাজি করাতে ঐতিহ্য সংরক্ষণবাদীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। স্থাপনাটি থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার পরিমাণ কম হওয়াকে, এরূপ উদাসীনতার একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়; কেননা সরকারি আইন দ্বারা বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে।[১] ইতালীয় স্থপতি রেনজো পিয়ানো স্থাপনাটির দুরবস্থা তুলে ধরেন এবং তার প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে ২০০৫ সালে নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি এনজিও, বিশ্ব স্মৃতিস্তম্ভ তহবিল কর্তৃক স্থাপনাটি “বিশ্বের ১০০ বিপন্ন স্মৃতিস্তম্ভ”-এ তালিকাভুক্ত করা হয়।[৭] এই তালিকাভুক্তির কয়েকদিন পরে স্থাপনাটির পশ্চিম ফটকের একটি অংশ ভেঙে পড়ে, যা প্রধানত বারান্দা হলেও ছোট অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এতে একজন মারা যায় এবং নিচে রাস্তায় পার্ক করা কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভেঙে চূর্ণ হয়ে যায়। স্থাপনাটিকে ঐতিহাসিক গঠনশৈলীর গ্রেড-২এ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়াছে।[২][৩] ১৩ জুন ২০১০ সালে, ১৩০ বছর পুরনো স্থাপনাটিকে পুনঃনির্মাণের জন্য মুম্বাই ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি (এমএইচসিসি) অনুমোদন দেয়। মহারাষ্ট্র হাউজিং এন্ড এরিয়া ডেভলপমেন্ট অথোরিটি (এমএইচডিএ) এই পুনঃনির্মাণের কাজ সম্পন্ন করবে।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধান২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামশেখ মুজিবুর রহমানছয় দফা আন্দোলনঘূর্ণিঝড় রেমালবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধবাংলাদেশক্লিওপেট্রালোকনাথ ব্রহ্মচারীবাংলা ভাষা আন্দোলনলোকসভাপহেলা বৈশাখলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপমৌলিক পদার্থের তালিকাআবহাওয়াভারতভূমি পরিমাপউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনসুন্দরবনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাসাইবার অপরাধফিলিস্তিনমিয়া খলিফাশাকিব খানমহাত্মা গান্ধীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরবেনজীর আহমেদপশ্চিমবঙ্গমাইকেল মধুসূদন দত্তরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহপদ্মা সেতু