এ কে এম মিরাজ উদ্দিন

বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা

এ কে এম মিরাজ উদ্দিন (জন্ম: ১১ মার্চ ১৯৪৮ - অন্তর্ধান: ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিবিদমুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৬৩ হতে ১৯৭০ পর্যন্ত স্কুল, কলেজ ও জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া আসরসমূহে মল্লক্রীড়ার হার্ডলস, পোল ভল্টদীর্ঘ লম্ফ খেলায় উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জন করেন এবং এসব খেলায় জাতীয় রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব সময়ের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ গণ্য করা হয়।[১] তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধরত অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পরেছিলেন এবং পরবর্তীতে নিখোঁজ হয়েছিলেন। মানিকগঞ্জ জেলার স্টেডিয়ামটি তার ও অপর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তপন চৌধুরীর সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে।

এ কে এম মিরাজ উদ্দিন
জন্ম
এ কে এম মিরাজ উদ্দিন

(১৯৪৮-০৩-১১)১১ মার্চ ১৯৪৮
অন্তর্ধান৮ ডিসেম্বর ১৯৭১(1971-12-08) (বয়স ২৩)
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
জাতীয়তাপাকিস্তানি (১৯৪৮-২৫ মার্চ, ১৯৭১)
বাংলাদেশী (২৬ মার্চ - ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১)
অন্যান্য নামআলোক
শিক্ষাসমাজ বিজ্ঞান
মাতৃশিক্ষায়তননবকুমার ইন্সটিটিউট
জগন্নাথ কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাক্রীড়াবিদ
কর্মজীবন১৯৬৩- ১৯৭০
পরিচিতির কারণ
পিতা-মাতা
  • শরীফ উদ্দিন আহমেদ (পিতা)
  • মোসাম্মত হাজেরা খাতুন (মাতা)
ক্রীড়া জীবন
ক্রীড়াহার্ডলস, পোল ভল্টদীর্ঘ লম্ফ
পদকের তথ্য
জাতীয় আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
নবকুমার ইন্সটিটিউট-এর প্রতিনিধিত্বকারী
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ১৯৬৩ হার্ডলস
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ১৯৬৩ পোল ভোল্ট
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ১৯৬৩ দীর্ঘ লম্ফ
প্রাদেশিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
পূর্ব পাকিস্তান-এর প্রতিনিধিত্বকারী
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৬৪ লাহোরহার্ডলস
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৬৪ লাহোরপোল ভোল্ট
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৬৪ লাহোরদীর্ঘ লম্ফ
আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
জগন্নাথ কলেজ-এর প্রতিনিধিত্বকারী
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৬৫ হার্ডলস
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৬৫ পোল ভোল্ট
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৬৫ দীর্ঘ লম্ফ
১০ম পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়ানুষ্ঠান
পূর্ব পাকিস্তান-এর প্রতিনিধিত্বকারী
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৬৬ লাহোরপোল ভোল্ট
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রতিনিধিত্বকারী
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৭০ হার্ডলস
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৭০ পোল ভোল্ট
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান১৯৭০ দীর্ঘ লম্ফ
২০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে হালনাগাদকৃত

প্রারম্ভিক ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

মিরাজ উদ্দিন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভাটিকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাবা শরীফ উদ্দিন আহমেদ ও মা মোসাম্মত হাজেরা খাতুনের জ্যেষ্ঠ পুত্র। হরিরামপুরে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেন। হরিরামপুরের লেছরাগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক ও পাটগ্রাম অনাথবন্ধু বিদ্যালয় হতে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকার নবকুমার ইন্সটিটিউট হতে মাধ্যমিক, জগন্নাথ কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। স্নাতক পর্যায়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন।[১][২]

ক্রীড়াজীবন (১৯৬৩-১৯৭০) সম্পাদনা

"এই ছেলেটি একটি ফাইবার পোল পেলে এশিয়ান গেমসের রেকর্ডও ভাঙতে পারবে।"

-১৯৬৬ সালে পোলভোল্টে বাঁশের পোল দিয়ে রেকর্ড স্থাপনের পর পাকিস্তান দলের অ্যাথলেটিক্স কোচ জার্মানির হফম্যানের মন্তব্য[১]

মিরাজ উদ্দিনের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এ বছর তিনি আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে পোলভল্ট, হার্ডলস এবং দীর্ঘ লম্ফ ইভেন্টে প্রথম হয়েছিলেন। এই সাফল্য তিনি ১৯৬৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রাদেশিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়ও ধরে রাখেন, তিনি এই প্রতিযোগিতায়ও ব্যক্তিগত শিরোপা জিতেছিলেন। ১৯৬৫ সালে আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জগন্নাথ কলেজের হয়ে ১১০ মিটার হার্ডলস, পোলভল্ট এবং দীর্ঘ লম্ফে তৎকালীন নতুন জাতীয় রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন।[২] ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত দশম 'পাকিস্তান অলিম্পিক' নামে পরিচিত পাকিস্তানের জাতীয় ক্রীড়ানুষ্ঠানে পোলভল্ট খেলায় বাঁশের পোল দিয়ে ১২ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা অতিক্রম করে পাকিস্তান অলিম্পিক রেকর্ড স্থাপন করেন। সেই প্রতিযগিতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি একমাত্র স্বর্ণপদক বিজয়ী ছিলেন।[১] তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও পোলভল্ট, হার্ডলস এবং দীর্ঘ লম্ফ ইভেন্টে এ সাফল্য ধরে রাখেন। ১৯৭০ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এই খেলাগুলিতে তিনি প্রথম হয়ে ব্যক্তিগত শিরোপার ঝুলি ভারি করেছিলেন। একই বছর করাচি হকি ক্লাব মাঠে দ্বাদশ পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়ানুষ্ঠানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়াদলের পতাকা হাতে কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[৩] মল্লক্রীড়ায় সাফল্য পাওয়ায় তিনি ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান দলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[১][২]

রাজনৈতিক জীবন (১৯৭০) সম্পাদনা

মিরাজ উদ্দিন ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। এ সময় তিনি ছাত্রলীগের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৪][৫]

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ (১৯৭১) সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ঢাকায় সংঘটিত গণহত্যার পর মিরাজ উদ্দিন নিজ গ্রাম ভাটিকান্দায় ফিরে আসেন। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে নিজ ছোটভাই এ কে এম সিরাজ উদ্দিন সহ মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক সাবেক ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং গেরিলা হিসেবে সম্মুখ সমরে অংশ নেন।[২][৪] তার অংশ নেয়া যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সিংগাইর উপজেলায় সংঘটিত গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ। ২৮ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত[৬] গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধে তিনি তবারক হোসেন লুডুর নেতৃত্বে লড়াই করেছিলেন। এই যুদ্ধে ৮১ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছিল।[১] ২ নভেম্বর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বানিয়াজুরি সেতুতে ডায়নামাইট বসাতে গিয়ে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।[৪]

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে মানিকগঞ্জের বন্দি শিবিরে না রেখে ঢাকার সেনানিবাসে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছিল।[৪]

অন্তর্ধান সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর সকালে আল বদর বাহিনীর পরিচালক মেজর মোস্তাক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মিরাজকে মুক্ত করে জিপে তুলে নিয়ে যান। সেই থেকে তিনি আজও নিখোঁজ রয়েছেন।[১][২]

সম্মাননা ও স্বীকৃতি সম্পাদনা

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর তার ও অপর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তপন চৌধুরীর নামে মানিকগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামের নাম 'শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়াম' রাখা হয়।[২][৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বিস্মৃতির অতলে মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ"বাংলানিউজ২৪.কম। ২০১১-১২-২৭। ২০২০-০৪-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  2. "পোলভল্টের লাঠি ছেড়ে অস্ত্র কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন যে মুক্তিযোদ্ধা"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০১৩-১২-১৬। ২০২০-০৪-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  3. "অলিম্পিকের মঞ্চ ছেড়ে মুক্তির লড়াই"আরটিভি। ২০২০-১২-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০২ 
  4. "বালিরটেক সেতুর নাম 'শহীদ মিরাজ সেতু' করা দাবি"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০১৭-০৭-০৪। ২০২০-০৪-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  5. "শহীদ মিরাজ : পোলভল্টের মাঠ থেকে অস্ত্র কাঁধে এক মুক্তিযোদ্ধা"Barcik News Portal। ২০১৭-০১-০৮। ২০২০-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  6. "মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা - মানিকগঞ্জ জেলার গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস"মানিকগঞ্জ জেলা আনুষ্ঠানিক তথ্য বাতায়ন। ২০২০-০৮-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  7. "মাঠ সংকটে মানিকগঞ্জ"দৈনিক কালের কন্ঠ। ২০১৫-০৯-০৪। ২০২০-০৭-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
🔥 Top keywords: কৃষ্ণকুমার কুন্নথপ্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধান২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপঘূর্ণিঝড় রেমালরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামশেখ মুজিবুর রহমানছয় দফা আন্দোলনবাংলাদেশবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়াক্লিওপেট্রাএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলা ভাষা আন্দোলনকুরবানীফিলিস্তিনমৌলিক পদার্থের তালিকাস্বামী বিবেকানন্দমিয়া খলিফাপহেলা বৈশাখইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনঘূর্ণিঝড়নাঈমুল ইসলাম খানবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহভূমি পরিমাপসুন্দরবনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামহাত্মা গান্ধীপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামুহাম্মাদঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরবিশ্ব দিবস তালিকাভারতসাইবার অপরাধইব্রাহিম (নবী)আসসালামু আলাইকুম