এমিল টেওডোর কখার

সুইজারল্যান্ডীয় শল্যচিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (১৯০৯)

এমিল টেওডোর কখার[টীকা ১] (২৫ আগস্ট ১৮৪১- ২৭ জুলাই ১৯১৭)[১][২] ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং চিকিৎসা গবেষক। তিনি ১৯০৯ সালে থাইরয়েড গবেষণা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চিকিৎসা এবং মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার কীর্তির মধ্যে অন্যতম ছিল জীবাণুমুক্ত ভাবে শল্যচিকিৎসা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শল্যচিকিৎসা। তার অবদানের মধ্যে বিশেষভাবে উল্ল্যেখযোগ্য হলো থাইরয়েড গ্রন্থির শল্যচিকিৎসায় মৃত্যুর হার এক শতাংশের নিচে নিয়ে আসা। তিনি ছিলেন সুইস বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রথম নোবেলজয়ী। তার অনন্য অবদানের জন্যে তাকে তার সময়ের চিকিৎসাশাস্ত্রের একজন প্রবাদ পুরুষ হিসেবে মানা হয়[৩]

এমিল টেওডোর কখার
এমিল টেওডোর কখার
জন্ম(১৮৪১-০৮-২৫)২৫ আগস্ট ১৮৪১
মৃত্যু২৭ জুলাই ১৯১৭(1917-07-27) (বয়স ৭৫)
পরিচিতির কারণথাইরয়েড গ্রন্থির শল্যচিকিৎসার উন্নয়ন সাধন
আত্মীয়বিবাহিত ম্যারি উইটশি ক্যুড়েঁ
মেডিকেল কর্মজীবন
পেশাশল্য-চিকিৎসক, চিকিৎসা গবেষক
প্রতিষ্ঠানবের্ন বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারশারীরবিদ্যা ও চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পদক (1909)

ব্যক্তিগত এবং প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ছেলেবেলা সম্পাদনা

কখার এর বাবা জ্যাকব আলেকজান্ডার কখার (১৮১৪-১৮৯৩), ছিলেন সাত ভাই-বোনের মধ্যে ষষ্ঠ। তার বাবা স্যামুয়েল কখার পেশায় ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। তার মায়ের নাম ছিল বারবারা সাটার (১৭৭২-১৮৪৯)।[৪]

জ্যাকব আলেকজান্ডার ছিলেন একজন রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার তিনি ১৮৪৫ সালে সুইজারল্যান্ডের বার্ডফে চলে আসেন তার ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির সুবাদে। সেখানে তাকে সড়ক এবং জলসম্পদের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পদায়ন করা হয় । ৩৪ বছর বয়সে তিনি তার পরিবারকে নিয়ে রাজধানী বার্নে চলে আসেন ১৮৫৮ সালে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন যার পূর্বেই তিনি বার্নে বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট সম্পাদন করেন।

টেওডোর কখার এর মায়ের নাম ছিল মারিয়া কখার ( ১৮২০-১৯০০)। তিনি ছিলেন খুবই ধর্মপরায়ণ একজন মহিলা। তিনি মোরাভিয়ান চার্চ এর সাথে জড়িত ছিলেন। জ্যাকব আলেকজান্ডারের সাথে তার সংসারে তিনি ছিলেন পাঁচ পুত্র এবং এক কন্যার জননী।

টেওডোর কখার জন্ম নেন ২৫ আগস্ট ১৮৪১ সালে বার্নে। তার পরিবারের ধর্মীয় চিন্তার দরুন ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৪১ এ তাকে ব্যপ্টাইজ করা হয়। ১৮৪৫ তিনি পরিবারের সাথে বার্ডফে চলে আসেন দেখতে চলে আসেন সেখানে তিনি শিক্ষা জীবন শুরু করেন । কিছুকাল পরে তার পরিবার বার্ন শহরে চলে আসে যেখানে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ( জার্মান> রিয়ালস্খুল এবং লিতারাতুরজিমনেশিয়াম) গমন করেন।যেখানে তিনি তার শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থাকাকালীন টেওডোর নানা বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল কলা এবং ভাষাতত্ত্ব, কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক হওয়াকেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেন।[৫][৬]

লেখাপড়া সম্পাদনা

তিনি ১৮৫৮ তে সুইজারল্যান্ডের মাতুরা সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন শুরু করেন, যেখানে অ্যান্টন বিয়েরমার এবং হারম্যান এসকান দেম অধ্যাপনা করতেন এবং সেখানে এই দুজন অধ্যাপকই তার মনোযোগ সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন। তিনি একজন অধ্যাবসায়ী এবং মনোযোগী ছাত্র ছিলেন তার পরেও তিনি "শ্যুইজেরিশ্যার যোফিনজারভেরেইন" নামের সুইজারল্যান্ডের একটি ফ্যাটার্নিটি দলের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তিনি মার্চ ১৮৬৫ (মতান্তরে ১৮৬৬) সালে তার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ভেরাট্রাম গাছের নির্যাস দ্বারা সংক্রামক নিউমোনিয়ার চিকিৎসা। তিনি প্রফেসর বিয়েরমারের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি সম্পন্ন করেন এবং তার গবেষণাটির বিধায়ক মন্তব্য ছিল " সুমা কাম ল্যদ উনামিমিতার" যার মানে দাঁড়ায় " অত্যন্ত সন্মানজনক ফলাফলের সহীত"।

১৮৬৫ সালের বসন্তে কখার তার শিক্ষক বিয়েরমারের সাথে জুরিখে চলে যান যেখানে টেওডোর বিলরথ ছিলেন একটি বড় হসপিটালের পরিচালক এবং তিনি কখারের কাজের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন।[৭][৮] এরপর কখার সমগ্র ইউরোপে ভ্রমণ শুরু করেন এবং ভ্রমনচলাকালীন তার সাথে সেই সময়ের কিছু বিখ্যাত শল্যচিকিৎসক বা সার্জনদের পরিচয় ঘটে। কোথায় আর কীভাবে কখার তার এই যাত্রার অর্থ জোগাড় করেছিলেন তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও বনজোর (১৯৮১) এর মতে সুসে রোমান্দে নামক একজন অজানা জনহিতৈষী নারীর তাকে টাকা দিয়েছিলেন যিনি কখারের বন্ধু মার্ক দুফুরকেও সাহায্য করেছিলেন এবং খুবসম্ভবত মোরাভিয়ান চার্চের একজন সদস্য ছিলেন বলে মনে করা হয়। অক্টোবর ১৮৬৫ সালে তিনি বার্লিনে যাত্রা করেন পথিমধ্য লেইপজিগের মধ্য দিয়ে যাত্রা করার সময় তিনি হ্যান্স ব্লাম নামক একজন পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা করেন যিনি তার সাথে মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করতেন। বার্লিনে তিনি বার্নহার্ড ভন ল্যাংগেনবেকের তত্বাবধানে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তিতে তিনি ল্যাংগ্যানব্যাক এবং রুডলফ ভিরক্রোর একজন সহকারী হওয়ার আর্জি জানান। যেহেতু সেখানে কোন পদ খালি ছিল না তিনি ১৮৬৭ এর এপ্রিল মাসে লন্ডন চলে যান যেখানে তিনি প্রথমে সাক্ষাৎ পান জোনাথন হাচিনসন এর এবং পরে সেখানে তিনি হেনরি থম্পসন এবং জন এরিকসনের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে কখার আগ্রহী হন আইজাক বেকার ব্রাউন এবং থমাস স্পেন্সার ওয়েলের কাজের প্রতি - যিনি কখারকে তার পরিবারের সাথে অপেরায় যাওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। ১৮৬৭ সালের জুলাইতে তিনি প্যারিস গমন করেন এবং সেখানে তিনি বিখ্যাত বিজ্ঞানী অগাস্ট নিলাটন, অগাস্ট ভারন্যুইল এবং লুই পাস্তুরের সাক্ষাৎ পান। তার ভ্রমনের সময় তিনি শুধুমাত্র বিশেষ এবং উচ্চদক্ষতাই অর্জন করেননি তিনি বিখ্যাত এবং অগ্রগামী শল্যচিকিৎসক বা সার্জনদের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং সাবলীল ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেছিলেন, যা তাকে ইংরেজি ভাষাভাষী দুনিয়ার বৈজ্ঞানিক সাফল্য এবং গবেষণাগুলোকে পর্যবেক্ষণে পারঙ্গম করে তুলেছিলো।

বার্নে ফিরে আসার পর কখার স্থায়ী অধ্যাপনা করার জন্য তৈরি হন এবং ১২ অক্টোবর ১৮৬৭ তে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদন পত্র জমা দেন যেখানে তিনি তাকে "ভেনিয়া দোকেন্দি" পদে প্রদান করার জন্য আবেদন করেন এবং আবেদনটি গৃহীত হয়। অতঃপর তিনি সেখানে তিনি জর্জ লুকের সহকারী পদে কাজ শুরু করেন। জর্জ লুক ১৮৭২এ বার্ন ইউনিভার্সিটি ছেড়ে চলে যান স্ত্রসবোর্গ ইউনিভার্সিটি তে প্রফেসর হিসেবে যোগদানের জন্যে। তার গতায়নের পর কখার প্রফেসর পদে কাজ করার জন্য খুবই আশাবাদী ছিলেন, কিন্তু সেই সময় শুধুমাত্র জার্মান অধ্যাপকদেরকেই অধ্যাপক পদে সুইজারল্যান্ড ইউনিভার্সিটি তে নিয়োগ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। সেই নিয়মানুযায়ী শিক্ষা কমিটি থেকে ফ্রান্জ কনিগকে লুকের পদে পদায়ন করার জন্য সুপারিশ করেন। যদিও সেখানকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অনেক চিকিৎসকগণও কখার কেই যোগ্য অধ্যাপক হিসাবে মনে করেছিলেন এবং তারা বার্ন সরকার বরাবর একটি আবেদন করেন এই আর্জিতে যাতেকরে কখার কে অধ্যাপক পদায়ন করা হয়। জেনেরাখা ভালো সে সময়ের প্রেস, পত্র-পত্রিকা এবং বেশ কয়েকজন বিখ্যাত বিদেশি সার্জন ছিলেন টেওডোর কখারের যথেষ্ট পক্ষে যারা কখারের সমর্থনে চিঠি পাঠান, তমধ্যে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাংগ্যানবেক এবং ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলরথ ছিলেন অন্যতম । জনগণের চাপের মুখে বার্নের সরকার কখারকেই লুক এর উত্তরসূরী হিসেবে শল্যচিকিৎসার অধ্যাপক এবং বার্ন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল শল্যচিকিৎসাকেন্দ্র ইন্সেলস্পিতালের পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়।[৯]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

১৮৬৯ সনে তিনি ম্যারি উইটশি ক্যুড়েঁর (১৮৪১-১৯২১) মতান্তরে (১৮৫০-১৯২৫) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ্য হন। তিনি ছিলেন জোহানেস উইটশির কণ্যা যিনি ছিলেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। কখারের সাথে সংসারে তিনি তিন পুত্র সন্তানের জননী ছিলেন। কখার দম্পতি সর্বপ্রথম বার্নের মার্কটগাসে বসবাস শুরু করেন এবং পরে তারা ১৮৭৫ এ ভিলেটে চলে আরো বড়ো বাড়িতে তাদের আবাস স্থানান্তর করেন। ভিলেতের সেই বাড়িটিই হয়ে ওঠে বন্ধু,সহকর্মী, অতিথিদের একটি মিলনকেন্দ্র এবং কখারের চিকিৎসাকেন্দ্রের অনেক রোগীও ভিলেতে রাতের খাবারের জন্যে আমন্ত্রিত হতেন।

মায়ের মতো কখারও ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিত্ব এবং তিনি মোরাভিয়ান চার্চের একজন সদস্যও ছিলেন। কখার তার সমস্ত অর্জন এবং ব্যর্থতাকে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ হিসেবে স্বীকার করতেন, বেশিরভাগ সহকর্মিদের থেকে আলাদা তার এই সতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তিনি আমৃত্য ধরে রেখেছিলেন। তিনি বস্তুবাদের উত্থানকে ( বিশেষ করে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে) একটি ভয়ংকর শয়তানি কর্ম হিসেবে দেখতেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ্যের লক্ষন বলে মনে করতেন।

কখার তার তিন ছেলের পড়াশোনার ব্যাপারে তদারকি করতেন এবং তাদের সাথে টেনিস খেলতেন এবং ঘোড়সওয়ারীতে যেতেন। তার বড় ছেলে আলবের্ট ( ১৮৭২-১৯৪১) তার সাথে তার শল্যচিকিৎসা কেন্দ্রে যাতায়াত করতো এবং সার্জারির একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন।

২৩ জুলাই ১৯১৭ এর সন্ধ্যায় কখারকে জুরুরী ভিত্তিতে খবর পাঠানো হয় একটি জুরুরী চিকিৎসার জন্যে। কখার সেখানে পৌছিয়ে চিকিৎসা সম্পন্ন করেন কিন্তু এর পর তিনি বৈজ্ঞানিক লিপি নিয়ে কাজ করতে করতে হঠাৎ শারীরিক ভাবে খারাপ বোধ করতে থাকেন এবং বিছানায় যান, এরপরেই তিনি চেতনা হারান এবং ২৭ জুলাই ১৯১৭ তে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন

পেশাজীবন সম্পাদনা

মাত্র ৩০ বছর বয়সে বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সাধারণ অধ্যাপক হিসেবে ডাক পাওয়াটাই ছিলো পেশাজীবনে টেওডোর কখারের প্রথম বড় পদক্ষেপ। তিনি ৪৫ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। এর মধ্যে তিনি সুপ্রসিদ্ধ বার্নের ইন্সেলস্পিতালের পুনঃনির্মাণ তত্ত্বাবধান করেন, ২৪৯ টি জ্ঞানগর্ভ এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, বহু চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং হাজারো রোগীকে চিকিৎসা দান করেন। তিনি ফলিত শল্যচিকিৎসা, স্নায়ুতন্ত্রের শল্যচিকিৎসা বিশেষ করে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও থাইরয়েড গ্রন্থির শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে বহু অবদান রেখেছেন। তার এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আরো অনেক সম্মান ও স্বীকৃতির পাশাপাশি তাকে ১৯০৯ সালে দেহতত্ত্ব এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পদকে ভূষিত করা হয়। অ্যাশারের মতে, টেওডোর কখারের সময় শল্যচিকিৎসাক্ষেত্রের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় এবং পরবর্তীতে শল্যচিকিৎসার একটি নতুন যুগের সৃষ্টি হয় যার ভিত রচনা করেছিলেন স্যার টেওডোর কখার- যদি একজন ইতিহাসবেত্তা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে শল্যচিকিৎসার স্বরূপ কেমন ছিলো তা বর্ণনা করতে চান তার জন্যে শুধুমাত্র কখারের "টেক্সট-বুক অফ অপারেটিভ সার্জারি" বইটির উদ্ধৃতি দেয়াই যথেষ্ট।

বোনজোর (১৯৮১) এর মতে, শল্যচিকিৎসক হিসেবে তিনটি বিষয় কখার এর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। প্রথম বিষয়টি ছিলো সম্পূর্ণ জীবাণুরোধী পদ্ধতিতে ক্ষত পরিচর্যার পুন:পুন: উন্নয়ন সাধন যেটা সংক্রমণকে প্রতিরোধ করেছিলো এবং রোগীর মৃত্যুরোধ করেছিলো। এরিক হিন্জশের মতে দ্বিতীয় বিষয়টি ছিলো, তার রোগীদের অবেদন অবস্থার গভীর তদারকি করা যেখানে তিনি বিশেষ মুখোশ ব্যবহার করেন এবং পরবর্তীতে তিনি থাইরয়েড গ্রন্থির শল্যচিকিৎসায় স্থানিক অবেদনের (লোকাল এনেস্থিসিয়া) ব্যবহার করেন যা কিনা রোগীদের পুরো শরীর অবেদন ( জেনারেল এনেস্থিসিয়া ) করার বিপদ কমিয়ে দিয়েছিলো বা পুরোপুরি দূর করেছিলো। তৃতীয় বিষয় হিসেবে হিন্জশে উদ্ধৃত করেন, শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই কম রক্তপাত যা কখার অর্জন করেছিলেন। এমনকি খুবই অল্প পরিমাণ রক্তপাতের উৎসকেও কখার ভীষণ দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ এবং বন্ধ করতেন, কেননা শুরুর দিকে তার ধারণা ছিলো পচনশীল রক্ত রোগীর শরীরে সংক্রমণ তৈরির ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

প্রারম্ভিক পেশাজীবন সম্পাদনা

কখার প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান যখন স্থানচ্যুত কাঁধের অস্থিসন্ধি ঠিক করার জন্যে তার নিজস্ব পদ্ধতিটি ১৮৭০ সালে প্রকাশিত হয়। নতুন পদ্ধতিটি ছিলো আগের গতানুগতিক পদ্ধতির চাইতে অনেক কম কষ্টদায়ক এবং নিরাপদ এবং যা সম্পন্ন করতে কিনা মাত্র একজন চিকিৎসকই যথেষ্ট। কখার তার এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন তার দেহব্যবচ্ছ্যেদবিদ্যার জ্ঞান দ্বারা। একই সময়ে কখার বন্দুকের গুলির দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত বা আঘাত সৃষ্টির ঘটনা এবং এটা কীভাবে অস্থিভঙ্গ বা হাড়ে চিড় সৃষ্টি করে তা নিয়েও গবেষণা করছিলেন। এই গবেষণালব্ধ জ্ঞান হতে একটি বক্তৃতা পেশ করা হয় ১৮৭৪ সনে যার শিরোনাম ছিলো : " দি ভারবেসঁরোঁ (অথবা : ফারভেসঁরোঁ ) দের গেশ্চোস্যে ভম স্ট্যান্ডপাক্ত দের হিউম্যানিতেত ( বাংলা : মানবতার দৃষ্টিকোণ হতে বন্দুকের গুলির উন্নতি ) এবং ১৮৭৫ সনে তৈরি হয় একটি পাণ্ডুলিপি- উয়েবার দি স্প্রিংভুইয়েরকুং দের মদার্নেন ক্রিয়েগস গেভিয়ার গেসচোসে ( বাংলা : আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের গুলির বিস্ফোরক প্রভাব সম্পর্কে ) তিনি এর মাধ্যমে দেখান ছোট ব্যাসের গুলিগুলো কম ক্ষতি সাধন করে এবং তিনি কম গতিসম্পন্ন গুলি ব্যবহারের সুপারিশ করেন।

ইন্সেলিপিতালের স্থানান্তর এবং প্রাগের আমন্ত্রণ সম্পাদনা

যখন কখার একজন অধ্যাপক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন , তিনি বার্ন ইন্সেলিস্পিতালের আধুনিকায়ন করতে চাইলেন । তিনি খেয়াল করলেন যে পুরোনো দালানটি আধুনিক মানের সাথে তাল মেলাতে পারছেনা এবং দালানটি এতই ছোট যে- অর্ধেক চিকিৎসাপ্রার্থীইকেই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছিল। ১৮৭৮ এর বসন্তে তিনি সমগ্র ইউরোপজুড়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন হাসপাতালের জন্যে নতুনত্ব এবং অভিনবত্ব নিরীক্ষণের জন্যে এবং তা বার্নে প্রয়োগ করা যায় কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে। তিনি তার পর্যবেক্ষণ একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন আকারে লিখে বার্ন সরকারে নিকট পাঠান নির্দেশনার সাথে এমনকি নির্মাণশৈলীর বিবরণ সহ। ১৫ নভেম্বর ১৮৭৮ এ এক জনবক্তৃতায় তিনি জনসাধারণকে একটি নতুন দালানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। এরপরই তিনি প্রাগে টেলিফোন করেন সরকারের উপর চাপ প্রদানের জন্যে । কখার জানিয়ে দিলেন যদি এবং কেবল যদি নতুন দালানে ৭৫ শয্যার অনুমোদন দেয়া হয় অথবা পুরাতন ভবনে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তবেই তিনি বার্নে থাকবেন, নচেৎ নয়। অবশেষে ১৮৮৪/১৮৮৫ এর শীতে নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন হয় এবং ইন্সেলিস্পিতালের স্থানান্তর সম্ভব হয়।

তৎকালীন সময়ে জার্মান ভাষাভাষী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল অবস্থিত ছিলো প্রাগে এবং এটা কখারের এর জন্য খুবই গর্বের ব্যাপার ছিল যখন তিনি প্রাগ থেকে সেখানে অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য টেলিফোন পেলেন, সালটা ছিলো ১৮৮০-এর বসন্ত। অনেক সহকর্মী, বিশেষত বিদেশী সহকর্মীরা কখার কে প্রাগে অধ্যাপক হওয়ার এই নিমন্ত্রণ টি গ্রহণের জন্য তাড়া দিলেন, কিন্তু বার্নের সহকর্মী এবং ডাক্তাররা তাকে থেকে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন এবং কখারও তার এই প্রাগে নিমন্ত্রণ কে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কিছু নির্দিষ্ট উন্নয়ন দাবি করলেন বার্ন সরকারের কাছ থেকে এবং বার্ন সরকার তার সমস্ত দাবিই পূরণ করল এবং পরের বছর থেকেই ইন্সেলিস্পিতালের নতুন ভবনের কাজ শুরু করার ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করলো এবং প্রয়োজনীয় শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং বই কেনার জন্য তার আর্থিক ব্যায়ের খাত ১০০০ ফ্রাঙ্ক পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো, অধিকন্তু কখার এর জন্য শয্যা সংখ্যাও বাড়ানো হলো নব্য ইন্সেলিস্পিতালে । এ কারণেই কখার সিদ্ধান্ত নিলেন বার্নে থেকে যাওয়ার এবং বহু বার্নিজ এবং সুইজারল্যান্ডের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দ এই কারণে তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানালেন। তিনি উল্লেখ করেন তার বার্নে থেকে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তার সন্মানে ৮ জুন ১৮৮০ সনে শিখা প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

জীবাণুমুক্ত শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি সম্পাদনা

এটা কিছুটা ধোঁয়াশাপূর্ণ যে কখার সরাসরি জোসেফ লিস্টারকে চিনতেন কিনা, যিনি কিনা জীবাণুনাশক বা নির্বীজকরণ পদ্ধতির ( রাসায়নিক পদ্ধতিতে জীবাণুনাশ করা) সূচনা করেছিলেন, কিন্তু কখারের তার সাথে যোগাযোগ ছিলো। কখার একদম শুরুতেই সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে শল্যচিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং তিনি এই পদ্ধতিগুলোর সাথে তার সহকর্মীদের একে একে পরিচয় ঘটান সেসময় এবং একে বৈপ্লবিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছিলো। ১৮৬৮ এর একটি হাসপাতাল চিকিৎসা প্রতিবেদনে তিনি স্বল্প মৃত্যুহারের জন্যে সরাসরি "লিস্টারের জীবাণুমুক্ত ক্ষত ব্যান্ডেজ পদ্ধতি" কে কৃতিত্ব দেন এবং পরিচালক হিসেবে তিনি জীবাণুমুক্ত পদ্ধতির ব্যবহারের আবশ্যকতার উপর কড়া নির্দেশ প্রদান করতে সক্ষম হন। বনজোর ( ১৯৮১) হতে তার সহকর্মীরা রোগীর ক্ষতে সংক্রমণ ঘটে যাওয়া এবং তার প্রেক্ষিতে কখারকে ব্যাখ্যা করার শংকায় কতটা শংকিত থাকতো তার একটি বিবরণ পাওয়া যায়। কখার প্রতিটি ক্ষতের সংক্রমণ হওয়ার উৎস খুঁজে বের করা এবং সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাব্য প্রতিটি উৎস সমূলে উৎপাটন করাকে একটি নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন, এই কারণেই তিনি তার শল্যচিকিৎসার সময় দর্শনার্থীদের আগমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।[১০]

তিনি জীবাণূমুক্ত পদ্ধতিতে চিকিৎসা এবং শল্যাচিকিৎসার উপর বেশ কিছু প্রকাশনাকর্ম প্রকাশ করেন।

স্নায়ুতন্ত্রের শল্যচিকিৎসায় অবদান সম্পাদনা

কখার স্নায়ুবিদ্যা এবং স্নায়ুতন্ত্রের শল্যচিকিৎসা বা সার্জারির ক্ষেত্রেও উল্ল্যেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এই ক্ষেত্রে তার গবেষণাগুলো ছিলো অগ্রণী ও পথপ্রদর্শক এবং যা কিনা মস্তিষ্কে আঘাত, স্নায়ুতন্ত্রের শল্যচিকিৎসা এবং আন্তঃমস্তিষ্ক চাপের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।অধিকন্তু তিনি খিঁচুনির শল্যচিকিৎসা এবং স্নায়ুরজ্জু ও মস্তিষ্কে আঘাতের শল্যচিকিৎসার ব্যাপারে তদন্ত চালান। তিনি প্রত্যক্ষ করলেন যে কিছু ক্ষেত্রে খিঁচুনি রোগীর মস্তিষ্কে টিউমার ছিলো এবং যা কিনা শল্যচিকিৎসার মাধমে দূর করা যেতো। তিনি এই অনুসিদ্ধান্তে উপনীত হন যে খিঁচুনির উদ্ভব আন্তঃমস্তিষ্ক চাপের বৃদ্ধি এবং ধারণা করতেন সুষুম্নারস নিষ্কাশন দ্বারা খিঁচুনিরোগ দূর করা সম্ভব।

জাপানি শল্যচিকিৎসক হায়াজো ইতো ১৮৯৬ সালে বার্নে আসেন খিঁচুনির উপর পরীক্ষামূলক গবেষণার জন্য।রোগীর দেহে পরীক্ষামূলক খিঁচুনি সৃষ্টির সময় কখার আন্তঃমস্তিষ্ক চাপের উপর বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন এবং ইতো জাপানে ফিরে যাওয়ার পর, তিনি ১০০ এর অধিক খিঁচুনি রোগীর শল্যচিকিৎসা সম্পন্ন করেন।

আমেরিকান শল্যচিকিৎসক হার্ভে কুশিং ১৯০০ সালের দিকে কখারের গবেষণাগারে বেশকিছু মাস সময় ব্যয় করেন মস্তিষ্কের শল্যচিকিৎসা সম্পাদন করে এবং প্রথমবারের মতো কুশিং রিফ্লেক্স বা কুশিং প্রবৃত্তি অবলোকন করেন যা কিনা রক্তচাপ এবং আন্তঃমস্তিষ্ক চাপের মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করে। পরবর্তীকালে কখার আবিষ্কার করলেন যে চাপহ্রাসকরণ খুলিচ্ছেদন শল্যচিকিৎসা ( ডিকম্প্রেসিভ ক্রেনিয়েকটমি) ছিলো আন্তঃমস্তিষ্ক চাপ হ্রাসের একটি কার্যকর পন্থা।

তার শল্যচিকিৎসার পাঠ্যবই শিরুরগেশে অপারেশনালেহরাহ তে কখার ১০৬০ পৃষ্ঠার মধ্যে ১৪১ পৃষ্ঠা উৎসর্গ করেন স্নায়ুতন্ত্রের শল্যচিকিৎসার জন্যে। যাতে মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ এবং মস্তিষ্কের চাপ হ্রাসের পদ্ধতিগুলো উল্লিখিত হয়েছে।[১১]

থাইরয়েড গ্রন্থির শল্যচিকিৎসায় অবদান সম্পাদনা

থাইরয়েড সার্জারি, যা প্রধানত গলগণ্ডের চিকিৎসা হিসেবে করা হতো সম্পূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে ফেলার মাধ্যমে, এটি একটি অতীব বিপদজনক কৌশল ছিলো যখন কখার তার কাজ শুরু করেছিলেন। কিছু গণনানুসারে ১৮৭২ সালের দিকে থাইরয়েড গ্রন্থিছেদন শল্যচিকিৎসায় মৃত্যুর হার ছিলো ৭৫ শতাংশের এর মতো উচ্চ।নিঃসন্দেহে, এই অপারেশন বা শল্যচিকিৎসাটিকে সবচেয়ে বিপদজনক অপারেশানগুলোর মধ্যে অন্যতম ধরা হতো এবং ফ্রান্সে মেডিসিন একাডেমি কর্তৃক এই অপারেশানটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো তদানীন্তন সময়ে। আধুনিক শল্যচিকিৎসা পদ্ধতি যেমন জীবাণুরোধী ক্ষত ব্যবস্থাপনা ও রক্তপাত হ্রাস এবং কখারের বিখ্যাত ধীরস্থির এবং সুনিপুণ কৌশলের দ্বারা তিনি এই অপারেশনের মৃত্যুহার ইতোমধ্যেই হ্রাস হওয়া ১৮ % হতে (সমসাময়িক মানদণ্ডের তুলনায়) o.৫ % শতাংশেরও কমে নিয়ে আসেন ১৯১২ সালের দিকেই। ততদিনের মধ্যে কখার ৫০০০ হাজারেরও বেশি থাইরয়েড গ্রন্থিচ্ছেদন সার্জারি সম্পন্ন করেন। কখারের কৌশলের সফলতা, বিশেষ করে টেওডোর বিলরথ যিনিও কিনা সেসময় থাইরয়েড গ্রন্থিচ্ছেদন অপারেশান করছিলেন তার সাথে তুলনা করতে যেয়ে উইলিয়াম স্টুয়ার্ট হলস্টেড এভাবে ব্যাখ্যা করেন।[১২]

আমি বহু বছর ধরে প্রশ্নটির ব্যাপারে বিবেচনা করেছি, ভেবেছি এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে ব্যাখ্যাটি খুব সম্ভবত এই দুই বিখ্যাত সার্জনের চিকিৎসা কৌশলে নিহিত রয়েছে। কখার, দক্ষ এবং নিখুঁত, অপারেশন করছেন একরকম রক্তপাতহীনভাবে, সতর্কতার সাথে পুরো থাইরয়েড গ্রন্থিটি কেটে বাদ দিয়েছেন এর আবরণী ক্যাপসুলের বাইরের খুব কম ক্ষতি সাধনের দ্বারা।[১৩] বিলরথ, খুব দ্রুততার সাথে অপারেশন করছেন এবং আমি যতটুকু মনে করতে পারি কলাসমূহ(টিস্যু) এবং রক্তপাতের দিকে কমগুরুত্ব দিয়েই, ফলে হয়তোবা আচমকাই প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিগুলোও কর্তন করে ফেলতে পারতেন তা নাহলেও তাদের মধ্যে রক্ত চলাচলে সমস্যা তৈরি হতে পারতো এবং থাইরয়েডের কিছু অংশ হয়তো রয়েও যেতো অপারেশনের পরেও।

— উইলিয়াম স্টুয়ার্ট হলস্টেড , হলস্টেড, ডব্লিউএস। দি অপারেটিভ স্টোরি অফ গয়টার। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১৯;১৯;৭১-২৫৭ -- মরিস এবং প্রমুখ এ উক্তিকৃত

এবং অন্যান্যরা পরবর্তীতে আবিষ্কার করলেন যে পুরোপুরি ভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির কর্তন বামনত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে ( কখার একে ক্যাকেক্সিয়া স্ট্রামিপ্রাইভা হিসেবে আখ্যায়িত করেন) যা কিনা থাইওরয়েড হরমোনের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। এই ঘটনাটি কখারকে জানান সাধারণবৃত্তিক চিকিৎসক ( জেনারেল প্র্যাকটিশনার) অগাস্ট ফেচ্শেরিন এবং পরবর্তীতে ১৮৮২ সনে জ্যাক-লুই রেভারডিন ও তার সহযোগী অগাস্তে রেভারডিন (১৮৪৮-১৯০৮) কখারকে এই ব্যাপারে অবহিত করেন। রেভারডিন কখারের সাক্ষাত পান ৭ সেপ্টেম্বর জেনেভাতে আন্তর্জাতিক পরিচ্ছন্নতা মহাসভাতে ( ইন্টারন্যাশনাল হাইজিন কংগ্রেস) এবং সম্পূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থিচ্ছেদনের ব্যাপারে তার শঙ্কার কথা কখারকে জানালেন। কখার তখন তার পূর্বের ১০২ জন রোগীর মধ্যে ৭৭ জনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালান এবং তাদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক ক্ষয়ের প্রমাণ পান সেই রোগীদের মধ্যে যাদের থাইরয়েড গ্রন্থি পুরোপুরি ভাবে কর্তন করা হয়েছিলো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কখারের সূক্ষ্ম এবং সুনিপুণ সার্জারি যা কখারকে থাইরয়েড গ্রন্থি প্রায় পুরোপুরি কর্তনে সহায়তা করেছিলো এবং রোগীদের বামনত্বের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছিলো।[১৪]

কখার এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে পুরোপুরি ভাবে থাইরয়েড কেটে বাদ দেয়া ( যেহেতু সেসময় এটা সচরাচরই করা হতো কেননা তখনো থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ আসলে কি তা পরিষ্কার ছিলোনা) সমীচীন নয় এবং এর পরামর্শ দেয়াও সমীচীন নয়।, তার এই আবিষ্কার তিনি জনসম্মুখে উন্মুক্ত করেন ৪ এপ্রিল ১৮৮৩ সালে জার্মান শল্যচিকিৎসা সমাজে দেয়া এক ভাষণে এবং তা প্রকাশ করেন ১৮৮৩ সালে নিম্নোক্ত শিরোনামে " উয়েবার কফ এক্সটিয়ারপাতশিওন আন্দ ইরা ফল্গেন" ( বাংলা : থাইরয়েডগ্রন্থি কর্তন এবং এর পরিণতি প্রসঙ্গে) । রেভারডিন ইতিমধ্যেই তার আবিষ্কার জনসম্মুখে নিয়ে আসেন ১৩ সেপ্টেম্বর ১৮৮২ তে এবং পরবর্তীতে আরো প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এই বিষয়ে, তৎসত্ত্বেও কখার কখনোই এই আবিষ্কারে রেভারডিনের পূর্ববর্তিতা বা অগ্রাধিকারের স্বীকৃতি দেননি। সেসময়ে কখারের বক্তৃতার প্রতিক্রিয়া ছিলো মিশ্র, কতিপয় ব্যক্তিবর্গ বোঝাতে চাইলেন যে গলগণ্ড এবং বামনত্ব একই রোগের আলাদা দুটি ধাপ এবং যে রোগপ্রকৃতিসমূহের ব্যাপারে কখার বক্তব্য দিয়েছিলেন সেখানে থাইরয়েড গ্রন্থিচ্ছেদন করা হোক বা না হোক বামনত্ব অবধারিতভাবে হতোই। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এই পর্যবেক্ষণসমূহ থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক ক্রিয়া সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে এবং প্রারম্ভিক একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলো থাইরয়েড এবং জন্মগত বামনত্বের মধ্যকার সম্পর্কের। এই আবিষ্কারগুলোই পরিশেষে থাইরয়েড হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসাকে সক্রিয় করে বেশ কিছু থাইরয়েড সংক্রান্ত রোগ-ব্যাধির জন্যে।[১৫]

বিজ্ঞানে আরো অবদান সম্পাদনা

কখার থাইরয়েডগ্রন্থি ছাড়াও বেশকিছু বিষয়ে কর্ম প্রকাশ করেন , যারমধ্যে রয়েছে রক্ততঞ্চন,জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে চিকিৎসা, শল্যচিকিৎসা সংক্রান্ত সংক্রামক রোগ, বন্দুকের গুলির দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতের উপর,তীব্র আকস্মিক হাড়ের প্রদাহ, প্যাঁচ লেগে রক্তসংবহনে বাধাসৃষ্টি হওয়া অন্ত্রবৃদ্ধি বা হার্নিয়া ( স্ট্র্যাংগুলেটেড হার্নিয়া) রোগের ব্যাপারে তত্ত্ব সৃষ্টি এবং উদরের শল্যচিকিৎসা। তিনি নোবেল পুরস্কার হতে যে অর্থ পেয়েছিলেন তা তাকে বার্নে কখার ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম ( যেমন কখারের খুলির পরিমাপক যন্ত্র বা কখার ক্রেনিওমিটার) শল্যচিকিতসার কৌশল (উদাহরণ সরূপ কখারের কৌশল এবং কখারের ছেদন কৌশল) তার নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছে কখার-ডেব্রে-সেমেলেইন সিনড্রোম বা লক্ষণের নামকরণের ক্ষেত্রেও। কখার ম্যান্যুভার বা কখারের কৌশল এখনো অস্থিচিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন কৌশল হিসেবে অনুসরণ করা হচ্ছে। কখারকে ১৮৮২ সনে কখারের ধারকবন্ধনী বা কখারস ক্ল্যাম্প আবিষ্কারের জন্যেও কৃতিত্ত দেয়া হয় যা তিনি অপারেশন চলাকালীন রক্তপাত প্রতিহত করার জন্যে ব্যবহার করতেন। তার প্রধানকর্মের মধ্যে অন্যতম শিরুগেশে অপারেশনাল ছয় সংস্করণে প্রকাশিত হয় এবং অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[১৬]

জীবদ্দশায় কখার ২৪৯ টি নিবন্ধ এবং বই প্রকাশ করেন এবং ১৩০ এরও অধিক ডক্টরেট প্রার্থীকে তত্ত্বাবধান করেন। তিনি ১৮৭৮ এবং ১৯০৩ সনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিশিক্ষক বা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বার্নিজ এবং সুইস চিকিতসক সংঘের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯১৩ সনে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুইস শল্যচিকিৎসা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন।[১৭]

১৯০৪ অথবা ১৯০৫ সনে তিনি একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন চিকিৎসালয় স্থাপন করেন যার নাম ছিলো 'উমেনহফ' যাতে ২৫ জন রোগীর জন্যে স্থান ছিলো। এখানে কখার বিত্তশালী রোগীদেরকে চিকিৎসা প্রদান করতেন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলো আন্তর্জাতিক। তিনি বিপ্লবী রুশ নেতা লেনিনের স্ত্রী নাদিয়েজদা কনস্তান্তিনোভা ক্রুপস্কায়ার চিকিৎসা করেছিলেন এবং ১৯১৩ সালে বার্নে তার অপারেশন করেন।[১৮]

উত্তরাধিকার/অবদান সম্পাদনা

টেওডোর কখারের আবক্ষ ভাস্কর্য (ভাস্কর কার্ল হ্যানি)

কখার একজন প্রসিদ্ধ এবং আদরণীয় শিক্ষকও ছিলেন। তার প্রায় ১০০ সেমিস্টার বা শিক্ষাপর্যায় কালে তিনি বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ ০০০ শিক্ষার্থীকে তার জ্ঞান শিক্ষা দেন। তিনি তার ছাত্র ছাত্রীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং তাদেরকে পরিষ্কারভাবে এবং যুক্তিসহকারে চিন্তা করতে শিখিয়েছিলেন। সুনির্দিষ্টভাবে, কখার একটি রাশিয়ান-ইহুদি প্রজন্মকে শিক্ষাদান করেছিলেন যারা রাশিয়াতে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেনি। রাশিয়ার সাথে তার এই সংযোগই রাশিয়ান ভৌগোলিক সমাজকে তার নামে একটি আগ্নেয়গিরির নাম করন করতে পরিচালিত করে। ( মাঞ্চুরিয়ার উজুন-চলডঙ্গি এলাকায়)।[১৯]

তার বহু স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন কার্ল এরেন্ড (বার্ন), অস্কার বার্নহার্ড ( সেন্ট মরিটজ), আন্দ্রে ক্রট্টি ( ওহাইও), গুস্তাভ দারদেল ( বার্ন), কার্ল গারি ( বন), গট্টিলেব এবং ম্যাক্স ফিউরার ( সেন্ট গ্যালেন), এন্টন ফনিও ( ল্যাংগনাউ), ওয়াল্টার গ্রবলি ( আর্বন), কার্ল কফম্যান ( জুরিখ), আলবার্ট কখার ( বার্ন), জোসেফ কপ ( ল্যুজার্ন), আর্নেস্ট কামার ( জেনেভা), জ্যাকব লপার ( ইন্টারলাকেন), আলবার্ট লুথি (থুন), হারম্যান ম্যাটি ( বার্ন), চার্লস পেটাভেল ( নিউয়েনবার্গ), পল ফেলার ( অল্টেন), ফ্রিটয ডি ক্যুইয়েরভাইন ( লা চক্স ডি ফন্ডস/ বেসেল/ বার্ন), অগাস্ট রিকলি ( ল্যাংগেনথাল)আর্নেস্ট রাইবেন ( ইন্টারলাকেন), অগাস্ট রোলিয়ের ( লেসিন), সিজার রু ( লসেন), কার্ল স্খুলার ( ররস্কাখ), ফ্রিটজ স্টেইনম্যান ( বার্ন), আলবার্ট ফগেল/ভগেল (ল্যুজার্ন), হ্যান্স ওয়াইল্ডবোলয ( বের্ন) এর সাথে আমেরিকান স্নায়ু-শল্যচিকিৎসক হার্ভে কুশিং। তার অন্যান্য উল্ল্যেখযোগ্য ছাত্রের মধ্যে আছেন হায়াজো ইতো ( ১৮৬৫-১৯২৯) এবং এস. বেরেজোউস্কি যা কিনা তার চিকিৎসা কৌশলকে তাদের নিজস্ব দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলো ( জাপান এবং রাশিয়া) ।[২০]

কখারের নামখানি বেঁচে আছে টেওডোর কখার ইন্সটিটিউট, কখারগেস এবং বার্নের কখার পার্কের সাথে। ইন্সেলস্পিতালে, কখারের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য রয়েছে, যা ১৯২৭ সনে তৈরি করেছেন কার্ল হ্যানি। কখার পার্কে আরো একটি আবক্ষ মূর্তি রয়েছে, যা তৈরি করেছেন ম্যাক্স ফুটার। ১৯৫০ এ, সুইস ঐতিহাসিক এডগার বনজোর ( ১৮৯৮-১৯৯১) যিনি কিনা ডোরা কখারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন, একটি ১৩৬ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট প্রকরণ প্রবন্ধ লেখেন কখারের জীবন নিয়ে, যা কিনা ১৯৮১ সনে আবারো পরিবর্ধিত হয়।[২১]

তার সম্মানে নামকরণ সম্পাদনা

কখারের চন্দ্র আগ্নেরগিরিমুখ বা চাঁদের একটি আগ্নেয়গিরিমুখের নাম তার স্মরণে নামকরণ করা হয়েছে। কখারের নামে একটি গ্রহাণুর (২০৮৭) নামকরণ করা হয়েছে।[২২]

কিছু নামকরণ সম্পাদনা

  • কখারের ফরসেপস বা শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত চিমটা খাঁজকাটা ফলক এবং শীর্ষে পরষ্পরের সাথে আটকে থাকা দাঁতযুক্ত যা কিনা রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • কখারের পয়েন্ট বা স্থান - আন্তনিলয় নির্গমন নলের প্রচলিত প্রবেশ পথ যা কিনা মস্তিষ্ক এবং সুষুম্না তরল নির্গমনের জন্যে ব্যবহৃত হয় মস্তিষ্কের নিলয়প্রকোষ্ঠ সমূহ হতে।
  • কখারের ম্যান্যুভার বা কখারের কৌশল- একটি শল্যচিকিৎসা কৌশল যা কিনা পেটের পেরিটোনিয়াম পর্দার নিচে বা বিপরীতে অবস্থিত অঙ্গসমূহ শল্যচিকিৎসার সময় উন্মোচিত করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
  • কখার - ডেব্রে-সেমেলেইন সিনড্রোম বা লক্ষণ - নবজাতক বা শিশুদের স্বল্প থাইরয়েড হরমোন জনিত রোগ যা প্রকাশিত হয় পা অথবা পুরো শরীরের মাংসপেশির বৃদ্ধির দ্বারা, মিক্সিডিমা বা স্বল্প থাইরয়েড হরমোনের জন্যে সৃষ্ট ত্বকের রোগ বিশেষ, স্বল্প দৈর্ঘ্যের শরীর এবং বামনত্বের দ্বারা।
  • কখারের গলদেশ ছেদন কৌশল- যা কিনা ব্যবহৃত হয় থাইরয়েড গ্রন্থির শল্যচিকিৎসায়।
  • কখারের পাঁজর নিম্নস্থ ছেদন - যা কিনা পিত্তাশয় কর্তনপূর্বক বাদ দেওয়ার শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • কখারের লক্ষণ - চোখের পাতার একটি বিশেষ অবস্থা যা কিনা হয়ে থাকে অত্যধিক পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন এবং বেসডোস ডিজিজ বা বেসডোর রোগের জন্যে।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি সমূহ সম্পাদনা

  • শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পদক ( ১৯০৯)
  • সম্মানজনক এফ.আর. সি.এস ডিগ্রি ( ফেলো অফ দ্যা রয়াল কলেজ সার্জন্স, ২৫ জুলাই ১৯০০)
  • বার্নিজ এবং সুইস চিকিৎসা সমাজসমূহের প্রেসিডেন্ট।
  • সুইস শল্যচিকিৎসা সমাজের প্রেসিডেন্ট।
  • জার্মান শল্যচিকিৎসক সমাজের প্রেসিডেন্ট ( ১৯০২)
  • ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক শল্যচিকিৎসা সম্মেলনের (১৯০৫) সভাপতি।
  • বিভিন্ন সম্মানসূচক সদস্যপদ এবং সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।

কর্ম সম্পাদনা

জীবদ্দশায়, কখার ২৪৯ টি নিবন্ধ এবং বই প্রকাশ করেন এবং প্রায় ১৩০-এরও বেশি ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রার্থীর তত্ত্বাবধান করেন। নিম্নে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসমূহের একটি অসম্পূর্ণ তালিকা দেয়া হলো:

  • দি আন্তিসেপ্টিশে উন্দবেহেন্দলাং ( জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে ক্ষতস্থানের চিকিৎসা : ১৮৮১)
  • ফরেসুগেন ( বা ভরেসুগেন) উইবার শিরুগেশে ইনফেকশনস্ক্রানখেইতেন ( শল্যচিকিৎসায় উদ্ভূত সংক্রমণের উপর ভাষণ ;১৮৯৫)
  • শিরুরগেশে অপারেশনালেহরাহ ( ১৮৯৪ যার অর্থ দাঁড়ায় " শল্যচিকিৎসার একটি পাঠ্যবই, ২য় খণ্ডে, ১৯১১)

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. এই জার্মান ব্যক্তিনাম বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় জার্মান শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানছয় দফা আন্দোলনভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাবাংলাদেশশেখ মুজিবুর রহমানভারতের প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদীক্লিওপেট্রাভারতীয় জনতা পার্টিবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধলোকসভাএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাইন্দিরা গান্ধীআবুল হাসান মাহমুদ আলীমহাত্মা গান্ধীআবহাওয়ারাহুল গান্ধীভারতভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বিশ্ব পরিবেশ দিবসকুরবানীইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা ভাষা আন্দোলনভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসমিয়া খলিফাভূমি পরিমাপপশ্চিমবঙ্গবাংলা বাগধারার তালিকা২০২৪ কোপা আমেরিকাবেনজীর আহমেদরিশতা লাবণী সীমানামুহাম্মাদ