আহমদ রেজা খান বেরলভী

ইসলামী পণ্ডিত, আইনবিদ, সুফি, সংস্কারক

আহমদ রেজা খান বেরলভী (উর্দু: ﺍﺣﻤﺪ ﺭﺿﺎ ﺧﺎﻥ ﺑﺮﯾﻠﻮﯼ‎‎; হিন্দি: अहमद रज़ा खान; ১৪ জুন ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দ বা ১০ সাওয়াল ১২৭২ হিজরি — ২৮ অক্টোবর ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ বা ২৫ সফর ১৩৪০ হিজরি), যিনি ইমাম আহমদ রেজা খান, ইমাম আহমদ রেজা খান কাদেরি, বা আ'লা হযরত নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম মনীষী, সুফি এবং ব্রিটিশ ভারতের সমাজ সংস্কারক। সুন্নি ইসলামের মধ্যে বেরলভী আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।[৩][৪][৫] উনাকে চতুর্দশ হিজরীর (ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর) মুজাদ্দিদ মনে করা হয়। তার লেখার বিষয়বস্তুতে আইন, ধর্ম, দর্শন এবং বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি ইসলামী আইন-কানুনের উপর প্রায় সহস্রাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।[৪]

আলা হযরত
ইমামে আহলে সুন্নাত

আহমদ রেজা খান বেরলভী
ﺍﺣﻤﺪ ﺭﺿﺎ ﺧﺎﻥ ﺑﺮﯾﻠﻮﯼ
উপাধি
  • আলা হজরত
  • ইমামে আহলে সুন্নত
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৮৫৬-০৬-১৪)১৪ জুন ১৮৫৬[১]
বেরেলি, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৮ অক্টোবর ১৯২১(1921-10-28) (বয়স ৬৫)
সমাধিস্থলদরগাহ-এ-আলা হযরত, বেরেলি, উত্তর প্রদেশ, ভারত
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাভারতীয়
পিতামাতানকি আলী খান (পিতা)
হোসাইনি খানুম (মাতা)
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারতীয়
যুগআধুনিক যুগ
অঞ্চলদক্ষিণ এশিয়া
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি[২]
ধর্মীয় মতবিশ্বাসমাতুরিদি
আন্দোলনবেরলভী
প্রধান আগ্রহইসলামি ধর্মতত্ত্ব, তাফসীর, হাদিসশাস্ত্র, কালামশাস্ত্র, ফিকহশাস্ত্র, উসুল আল-ফিকহ, আকীদা, হানাফি মাজহাব, উর্দু কাব্য, তাসাউফ
তরিকাকাদেরিয়া
চিশতি
সোহরাওয়ার্দিয়া
নকশবন্দিয়া
আত্মীয়হাসান রেজা খান (ছোট ভাই)
মুসলিম নেতা
উত্তরসূরীহামিদ রেজা খান
ওয়েবসাইটhttp://imamahmadraza.net
http://www.raza.org.za
http://www.alahazrat.net
http://www.irshad-ul-islam.com

জীবনকাল

জন্ম ও বংশপরিচয়

আহমদ রেজা খাঁন ১৪ জুন ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেরেলী শহরের জাসলী মহল্লাতে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের সময় তার নাম রাখা হয় মোহাম্মাদ।[৬]আহমদ রেজা খাঁন বেরলভীর পিতা নকী আলী খান।[৭][৮]পিতামহ ছিলেন রেজা আলী খান; তার পিতা শাহ রেজা আলী খাঁন, তার পিতা শাহ্ কাজিম আলী খাঁন, তার পিতা শাহ্ মুহাম্মদ আজম খাঁন, তার পিতা শাহ্ সা’আদাত ইয়ার খাঁন, তার পিতা শাহ্ সাঈদ উল্লাহ্ খাঁন। আ’লা হযরতের পূর্ব পুরুষ অর্থাৎ শাহ্ সাঈদ উল্লাহ খাঁন রাজ পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি মুঘল শাসনামলে লাহোর পদার্পণ করেন এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন সম্মানিত পদে অলংকৃত হন।

শিক্ষকবৃন্দ

মাসুদ আহমেদের মতে, খানের শিক্ষকরা হলেন:[৯]

  • শাহ আলে রাসুল মারহারাভী (মৃত্যু ১২৯৭/১৮৭৯)
  • নকি আলী খান (মৃত্যু ১২৯৭/১৮৮০)
  • আহমদ জাইনি দাহলান মক্কী (মৃত্যু ১২৯৯/১৮৮১)
  • আব্দ আল-রহমান সিরাজ মক্কী (মৃত্যু ১৩০১/১৮৮৩)
  • হোসাইন বিন সালেহ (মৃত্যু ১৩০২/১৮৮৪)
  • আবুল-হোসাইন আহমদ আল-নুরী (মৃত্যু ১৩২৪/১৯০৬)
  • 'আব্দ আল-আলি রামপুরী (মৃত্যু ১৩০৩/১৮৮৫)

বায়'আত ও খেলাফত

১২৯৪ হিজরী (১৮৭৭ সালে), ২২ বছর বয়সে ইমাম আহমদ রেজা ইমাম-উল-আসফিয়া, শাহ আলে রাসুল মারহারাভী'র মুরিদ (শিষ্য) হন। তার মুর্শিদ তাকে বেশ কয়েকটি সুফি সিলসিলার খেলাফত দান করেছিলেন। কিছু ইসলামী পণ্ডিত তার নির্দেশনায় কাজ করার অনুমতি পেয়েছিলেন।[১০][১১]

বেরলভি আন্দোলন

আহমদ রেজা তার মতামতের সমর্থনে ব্যাপকভাবে লিখেছিলেন, ওয়াহাবিদেওবন্দি আন্দোলনকে প্রতিহত করেছিলেন এবং তার লেখা ও কার্যকলাপের মাধ্যমে বেরলভি আন্দোলনের নেতা হয়ে উঠেন।[১২] পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা[১৩]বাংলাদেশের অনুসারীদের নিয়ে এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।[১৪] এই আন্দোলনের এখন বিশ্বব্যাপী ২০০ মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী রয়েছে।[১৩] আন্দোলনটি শুরু হওয়ার সময় মূলত একটি গ্রামীণ ঘটনা ছিল তবে বর্তমানে শহুরে, শিক্ষিত পাকিস্তানি এবং ভারতীয়দের পাশাপাশি সারা বিশ্বে দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়।[১৫] দেওবন্দী ও আহলে হাদীস আন্দোলনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য খান এবং তার সহযোগী আলেমদের প্রচেষ্টার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সুফি আন্দোলন এবং তাদের সহযোগীদের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটে।[১৬]

মৃত্যু

তিনি শুক্রবার, ১৯২১ সালের ২৮ অক্টোবর (২৫ সফর ১৩৪০ হিজরি) ৬৫ বছর বয়সে বেরেলী শহরের নিজগৃহে মৃত্যুবরণ করেন।

বিশ্বাস (আকীদা)

খান ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের ধীশক্তি ও নৈতিক পতন দেখেছিলেন।[১৭] তার আন্দোলনটি ছিল একটি গণআন্দোলন, জনপ্রিয় সুফিবাদকে রক্ষা করে যা দক্ষিণ এশিয়ার দেওবন্দী আন্দোলন এবং ওহাবী আন্দোলনের প্রভাবের প্রতিক্রিয়ায় বৃদ্ধি পেয়েছিল।[১৮]

খান ওসীলা, মাওলিদ, নবী মুহাম্মাদের অদৃশ্যের সম্পূর্ণ জ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা এবং সালাফি ও দেওবন্দীদের দ্বারা বিরোধিতা করা অন্যান্য রীতিগুলি সমর্থন করেছিলেন।[১৯][২০]

এই প্রসঙ্গে তিনি নিম্নলিখিত বিশ্বাসকে (আকীদা) সমর্থন করেছিলেন:

  • নবী মুহাম্মদ যদিও ইনসান-এ-কামিল (নির্ভুল মানুষ), একটি নূরের (আলোক) অধিকারী যা সৃষ্টির পূর্বে থেকেই রয়েছিল। এটি দেওবন্দী মতবাদের সাথে বিপরীত যে নবী মুহাম্মদ কেবল একজন ইনসান-ই-কামিল ছিলেন, অন্যান্য মানুষের মতোই একজন শ্রদ্ধেয় কিন্তু শারীরিকভাবে সাধারণ মানুষও ছিলেন।[২১][২২][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  • নবী মুহাম্মদ হাজির নাজির (তাঁর উম্মতের আমলসমূহের উপর হাজির-ও-নাজির) যার অর্থ হল নবী তাঁর অনুসারীদের কর্মের বিষয়ে দৃষ্টি দেন এবং সাক্ষী।[২৩]

শাহ আবদুল আজিজ তাফসির আজিজিতে এ ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছিলেন: নবী প্রত্যেককে পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের ভাল-মন্দ সব কাজ জানেন এবং প্রতিটি মুসলমানের বিশ্বাসের শক্তি (ঈমান) এবং তার আধ্যাত্মিক অগ্রগতিতে কি বাধাগ্রস্ত করছে সে বিষয়টিও জানেন।[২৪]

বই

আহমদ রেজা খান আরবী, উর্দু এবং ফারসি ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে সহস্রাধিক বই লিখেছেন। তার বিভিন্ন বই ইউরোপীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষাতে অনূদিত হয়েছে।[২৫][২৬]

কানজুল ঈমান (কুরআনের অনুবাদ)

কানজুল ঈমান (উর্দু এবং আরবি: ﮐﻨﺰﺍﻻﯾﻤﺎﻥ ) হল সুন্নি মুসলিম আহমদ রেজা খাঁন কর্তৃক ১৯১০ সালে কোরআন শরিফের উর্দু ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ। এটি হানাফী মাযহাবের আইনসমুহকে সমর্থন করে[২৭]। এই গ্রন্থটি ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, ডাচ, তুর্কী, সিন্ধি, গুজরাটী এবং পশতু। বাংলা ভাষায় কানযুল ঈমান গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন আল্লামা এম. এ. মান্নান ও মাওলানা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন নোমানী (মুহাদ্দিস, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসা)।

ফতোয়া-ই-রেজভিয়া

এই ফতোয়া গ্রন্থটির ব্যাপারে প্রথম অরুন শৌরি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, এটি একটি ফতোয়া বা ইসলামি নিয়মকানুন সমৃদ্ধ গ্রন্থ।[২৮] ১২ খণ্ডের এই ফতোয়া গ্রন্থটি লেখকের জীবদ্দশায় তার ভাই সর্ব প্রথম হাসানি প্রেস থেকে প্রকাশ করেন, এছাড়া ও বিভিন্ন ফতোয়ার মাত্র দুই খন্ড তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়।[২৯]বিভিন্ন সুন্নি প্রকাশনী থেকে এই গ্রন্থটি ৩০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে ধর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসা, যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিবাহ, দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান রয়েছে।[৩০][৩১][৩২] রেযা একাডেমি ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম গ্রন্থটির বিভিন্ন খন্ড প্রকাশ করেছিল।[৩৩]

হাদায়েকে বখশিশ

এ গ্রন্থটি আলা হযরতের নাত সমগ্র। নবী মুহাম্মদকে নিয়ে লেখা অসংখ্য নাত এ গ্রন্থটিতে লিপিবদ্ধ আছে। আহমদ রেজা খাঁনের লেখা বিখ্যাত নাত মুস্তফা জানে রহমত পেঁ লাখো সালাম এ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোতে রয়েছে নবী হজরত মুহাম্মদ (দ.)'র প্রশংসা, তাঁর শারীরিক গঠন (খণ্ড ৩৩ থেকে ৮০), তার জীবন ও সময়, তার পরিবার ও সাহাবিদের প্রশংসা, আউলিয়া ও সালেহীনদের (দরবেশ ও ধার্মিকদের) প্রশংসা।[৩৪][৩৫]

হুসসামুল হারামাঈন

গ্রন্থটি আলা হযরত আল মো’তামাদ ওয়াল মোস্তানা নামে আরবিতে রচনা করেন। এতে হিন্দুস্থানের ৫ জন আকাবিরীনে দেওবন্দ ওলামার কিতাব সমূহের বিভিন্ন উর্দু উদ্ধৃতি উল্লেখ করে নিজে এগুলোর আরবী অনুবাদ করে ১৩২৪ হিজরীতে মক্কামদিনার ৩৩ জন মুফতির নিকট কাছে পাঠিয়ে তাদের মতামত চান। হারামাঈন শরীফাইনের ৩৩ জন মুফতি গ্রন্থটি পর্যালোচনা করে উক্ত ৫ জন দেওবন্দ ওলামাকে কাফের ঘোষণা করেন। মুফতিগণের উক্ত ফতোয়ার নাম হয় হুসসামুল হারামাঈন বা মক্কা-মদিনার তীক্ষ্ণ তরবারী। অন্যদিকে দেওবন্দ আলেমগণ দাবি করেছেন যে, আহমদ রেজা খান তাদের নামে মিথ্যা কথা লিখে মক্কা ও মদিনার মুফতিদের নিকট পাঠিয়েছিল।[৩৬]

অন্যান্য বই

  • আল মো’তামাদ ওয়াল মোস্তানা
  • আল আমান ও ওয়া উলা
  • আলকাউকাবাতুস সাহাবিয়া
  • আল ইস্তিমাদ
  • আল ফুয়োজুল মাক্কীয়া
  • আল মিলাদুন নবিয়াহ
  • ফাউজে মুবিন দার হারকাতে যামীন
  • সুবহানুস সুবহ
  • সাল্লুস সায় য়াফুল হিন্দীয়া
  • আয যুবদাতুয যাক্কিয়া
  • আবনা উল মুস্তাফা
  • আনগুত্তে চুম্মে কা মাসলা

বাংলায় অনূদিত কিতাব

  • তফসীরে খাজাইনুল ইরফান ও তরজুমায়ে কানজুল ইমান
  • তফসীরে নুরুল ইরফান ও তরজুমায়ে কানজুল ইমান
  • ইরফানে শরীয়ত
  • খতমে নবুওয়াত
  • আহকামে শরীয়ত
  • নিদানকালে আশীর্বাদ
  • গাউসুল আজম ও গাউছিয়াত
  • কুরআন–হাদিসের আলোকে শাফায়াত
  • দৃঢ় বিশ্বাসের চেতনায় নবীকূল সম্রাট (দ.)
  • নুরুল মোস্তফা (দ.)
  • মাতা-পিতার হক (হাক্কুল-ওয়ালেদাইন)
  • প্রিয়নবীর পূর্ব পুরূষগণের ইসলাম
  • আদ্দৌলাতুল মাক্কিয়াহ বিল মাদ্দাতিল গায়বিয়াহ
  • হুসামুল হারামাইন
  • শরীয়ত ও তরীক্বত
  • ওয়াহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদাহ ও তাদের বিধান
  • ইরশাদে আ'লা হযরত
  • আল অজীফাতুল কারীমা (বঙ্গানুবাদ)
  • সত্যের সন্ধান ও কবরে আজান
  • তাজিমী সিজদা - অনুবাদকঃ এস.এম. আশরাফ আলী আল কাদিরী (প্রথম অনুবাদক, পরবর্তীকালে অন্য অনুবাদকের অনুবাদও প্রকাশ হয়েছে।)
  • আল ওয়াজিফাতুল কারিমা - অনুবাদকঃ এস.এম. আশরাফ আলী আল কাদিরী।
  • বায়'আত ও খিলাফতের বিধান
  • ফেরেশতাহ সৃষ্টির ইতিবৃত্ত
  • ফতোয়ায়ে আফ্রিকা
  • ইমানের সঠিক বিশ্লেষণ
  • তাহমিদে ইমান বিদআতিল কুরআন
  • রাসুলুল্লাহর (দ.) অবমাননা কারীর শরয়ী সাজা
  • কালামে রেযা
  • (হাদায়েকে বখশিশ থেকে নির্বাচিত নাত ও কাব্যানুবাদ)
  • কালামুল ইমামে ইমামুল কালাম (মোস্তফা জানে রহমাত পে লাখো সালাম এর কাব্যানুবাদ)
  • মহিলাদের জন্য মাজার জিয়ারতের বিধান (মাওলানা মুহাম্মদ জমির হোসাইন ক্বাদেরি)

ফতোয়া

আহমদিয়া

কাদিয়ানের মির্জা গোলাম আহমদ দাবি করেছিলেন যে মশীহ এবং মাহদী কিছু মুসলমান দ্বারা অপেক্ষা করেছিলেন এবং পাশাপাশি একজন উম্মত নবী, মুহাম্মদ (দ.)'র অধীনস্থ নবী যিনি মুহাম্মদ ও আদি সাহাবার অনুশীলন অনুসারে ইসলামকে মূল রূপে ফিরিয়ে আনতে এসেছিলেন।[৩৭][৩৮] খান মির্জা গোলাম আহমদকে একজন ধর্মদ্রোহী ও মুরতাদ ঘোষণা করেছিলেন এবং তাকে এবং তার অনুসারীদেরকে কাফের (কুফার) বলে অভিহিত করেছিলেন।[৩৯]

দেওবন্দি

দেওবন্দী মতের সাথে ধর্মতাত্ত্বিক পার্থক্য শুরু হয়েছিল যখন ইমাম আহমদ রেজা খান কাদেরি দেওবন্দী আলেমদের নিম্নলিখিত কিছু আকীদার (বিশ্বাস) লিখিতভাবে আপত্তি জানালেন।

  • দেওবন্দী আন্দোলনের একজন প্রতিষ্ঠাতা, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি বলেছিলেন যে, আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন।[৪০] এই মতবাদকে ইমকান-ই কিজব বলা হয়।[৪০][৪১][৪১] এই মতবাদ অনুসারে, যেহেতু আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ মিথ্যা বলতে সক্ষম।[৪১] গাঙ্গুহি এই মতবাদকে সমর্থন করেছিলেন যে, মুহাম্মদ (দ.)'র পর আরও নবী পাঠানোর ক্ষমতা আল্লাহর রয়েছে (ইমকান-ই নাজির) এবং অন্যান্য নবীগণ মুহাম্মদ (দ.)'র সমতুল্য।[৪০][৪১]
  • তিনি (গঙ্গোহি) এই মতবাদের বিরোধিতা করেছিলেন যে মুহাম্মদ (দ.) এর অদৃশ্যের জ্ঞান (ইলম এ গাইব) রয়েছে।[৪০][৪১]

১৯০৫ সালে, ইমাম আহমদ রেজা খান হজ্বের জন্য মক্কা ও মদীনায় সফর করলে তিনি আল মোতামাদ আল মুস্তানাদ ("নির্ভরযোগ্য প্রমাণ") নামে একটি খসড়া দলিল প্রস্তুত করেন। এই কাজে, আহমদ রেজা দেওবন্দী নেতাদের যেমন আশরাফ আলী থানভী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি এবং মুহাম্মদ কাসিম নানুতুবি এবং যারা তাদের অনুসরণকারী তাদের কুফার হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। খান হেজাজে আলেমদের মতামত সংগ্রহ করেছিলেন এবং তাদেরকে আরবী ভাষায় হুসামুল হারামাইন ("দুটি পবিত্র স্থানের তরবারি") শিরোনামে একটি সংকলন করেছিলেন, এটি ৩৩ জন উলামা (২০ জন মক্কী এবং ১৩ জন মাদানি) এর ৩৪টি রায় সংবলিত একটি কাজ।[৪২]

আহমদ রেজা খান কেবল উপমহাদেশের অন্যান্য আলেমদের কাছ থেকে নিশ্চিত স্বাক্ষরই পাননি, বরং তিনি মক্কার একাধিক বিশিষ্ট উলামা'র কাছ থেকে সম্মতি নিতে পেরেছিলেন। এটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম বছরগুলিতে ঘটেছিল - আল সৌদ এবং তাদের ওহাবী মিত্ররা হারামাইনের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার অনেক আগে।[৪৩] কীর্তিটি তবুও অত্যাশ্চর্য ছিল। সংবেদনশীল স্তরে আহলে সুন্নাহর প্রতি দেওবন্দীদের বিদ্বেষ আরও বোধগম্য হয়ে ওঠে যখন আহমদ রেজার ফতোয়া পুরো ব্যাখ্যা পেয়েছে।[৪৪]

এই কাজটি আহলে সুন্নাত (বেরলভী) এবং দেওবন্দিদের মধ্যে বর্তমান স্থায়ীভাবে ফতোয়াগুলির একটি পারস্পরিক ধারাবাহিক সূচনা করেছিল।[৪২]

শিয়া

ইমাম আহমদ রেজা খান শিয়া মুসলমানদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বই লিখেছেন এবং শিয়ার বিভিন্ন চর্চাকে কুফর হিসেবে ঘোষণা করেছেন।[৪৫] তার দিনের অধিকাংশ শিয়া ধর্মত্যাগী ছিল কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন, তারা ধর্মের প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।[৪৬][৪৭]

ওহাবী আন্দোলন

ইমাম আহমেদ রেজা খান ওহাবীদেরকে কাফের (কুফর) ঘোষণা করেন এবং আরব উপদ্বীপে প্রভাবশালী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ওহাবী আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পণ্ডিতদের অনেক ফতোয়া সংগ্রহ করেন, যেমনটি তিনি আহমদী ও দেওবন্দীদের সাথে করেছিলেন। অদ্যাবধি, খানের অনুসারীরা ওহাবি এবং তাদের বিশ্বাসের বিরোধী।

মুদ্রা নোটের অনুমতিযোগ্যতা

১৯০৫ সালে, খান, হিজাজের সমসাময়িকদের অনুরোধে, মুদ্রার একটি রূপ হিসাবে কাগজ ব্যবহার করার অনুমতি সম্পর্কে একটি রায় লিখেছিলেন, যার নাম কিফল-উল-ফকীহিল ফেহিম ফে আহকাম-ই-কীর্তাস দ্রাহিম

সমাধিস্থল

আহমদ রেজা খান বেরলভীর মাজার

আ'লা হযরতের সমাধিস্থল ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলী জেলার কারোলানে অবস্থিত। এটি দরগাহ-এ-আলা হযরত নামে পরিচিত।

উত্তরাধিকার

অনেক ধর্মীয় বিদ্যালয়, সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান খানের ধারণাগুলি শেখায়, যা সূফি অনুশীলনের আনুগত্য এবং নবী মুহাম্মদ (দ.) এর প্রতি ব্যক্তিগত ভক্তি ও আনুগত্যর সাথেসাথে ইসলামী আইনের প্রতিও জোর দেয়।[৪৮]

স্বীকৃতি

  • ২১ জুন ২০১০ সালে, সিরিয়ার আলেম ও সুফি মুহাম্মদ আল-ইয়াকুবী তাকবীর টিভির অনুষ্ঠান সুন্নি টক-এ ঘোষণা করেছিলেন যে, ইমাম আহমদ রেজা খান বেরলভী ভারতীয় উপমহাদেশের মুজাদ্দিদ ছিলেন এবং বলেছিলেন যে, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী চিহ্নিত করা যেতে পারে খানের প্রতি তার ভালবাসার কারণে এবং আহলে সুন্নাহর বাইরে যারা আছে তারা তার উপর তাদের আক্রমণের দ্বারা চিহ্নিত হয়।[৪৯]
  • মক্কার মুফতি আলি বিন হাসান মালিকি, খানকে সকল ধর্মীয় বিজ্ঞানের জ্ঞানকোষ বলে অভিহিত করেছেন।
  • আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল (১৮৭৭-১৯৩৮), একজন কবি, সুফি ও দার্শনিক, বলেছেন: "আমি আহমদ রেজার আদেশ-নিষেধগুলি মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করেছি এবং এর ফলে এই মতামত তৈরি করেছি; এবং তার ফতোয়া তার বিচক্ষণতা, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, তার গুণের সাক্ষ্য দেয়। সৃজনশীল চিন্তাধারা, তার চমৎকার এখতিয়ার এবং সমুদ্রের মতো তার ইসলামী জ্ঞান।[৫০] ইমাম আহমদ রেজা একবার একটি মতামত তৈরি করলে তিনি তার উপর অটল থাকেন; তিনি একটি সুস্পষ্ট প্রতিফলনের পরে তার মতামত প্রকাশ করেন। অতএব, তার কোনো ধর্মীয় আদেশ প্রত্যাহার করার প্রয়োজন হয় না এবং অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন, "এমন প্রতিভাবান ও বুদ্ধিমান আইনজ্ঞের আবির্ভাব এমনি এমনি ঘটেনি।"[৫১]
  • প্রফেসর স্যার জিয়াউদ্দিন আহমদ, যিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান ছিলেন, তিনি একসময় বিদেশে গণিতবিদদের সাহায্য নেওয়ার পরেও কিছু গণিতের অ্যালগরিদমের সমাধান খুঁজে পাননি। তার বন্ধু যিনি আহমদ রেজার মুরিদ (শিষ্য) ছিলেন। জিয়াউদ্দিন তার অনুরোধে তার কঠিন প্রশ্নের উত্তর পেতে বিশেষ সফরে আহমদ রেজার কাছে যান এবং আহমদ রেজার নির্দেশনায় তিনি শেষ পর্যন্ত এর সমাধানে সফল হন।[৫২]

সামাজিক প্রভাব

আধ্যাত্মিক উত্তরসূরী

ইমাম আহমদ রেজা খানের দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে ছিল। তার পুত্র হামিদ রেজা খান এবং মোস্তফা রেজা খান কাদেরী ইসলামের বিখ্যাত পণ্ডিত। হামিদ রাজা খান ছিলেন তার নিযুক্ত উত্তরসূরি। তার পরে মোস্তফা রেজা খান তার পিতার উত্তরসূরী হন, যিনি পরে আখতার রেজা খানকে তার উত্তরসূরী নিযুক্ত করেন। তার পুত্র, মুফতি আসজাদ রেজা খান এখন আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে তার স্থলাভিষিক্ত হন।[৫৬]ভারতীয় উপমহাদেশে ৩০ জন এবং অন্যত্র ৩৫ জন সহ তার অনেক শিষ্য ও উত্তরসূরী ছিল।[৫৭]নিম্নলিখিত পণ্ডিতগণ তার উল্লেখযোগ্য উত্তরসূরী:[৫৮]

শিক্ষাগত প্রভাব

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

সেই সময়ে এই অঞ্চলের অন্যান্য মুসলিম নেতাদের বিপরীতে, খান এবং তার আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল কারণ এর নেতৃত্বে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, যিনি মুসলিম ছিলেন না।

ইমাম আহমদ রেজা খান ঘোষণা করেছিলেন যে, ভারত দারুল ইসলাম এবং মুসলমানরা সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে। তার মতে, যারা এর বিপরীতে তর্ক করছে তারা কেবল অমুসলিম শাসনের অধীনে বসবাসকারী মুসলমানদের বাণিজ্যিক লেনদেন থেকে সুদ সংগ্রহের অনুমতি দেওয়ার বিধানের সুবিধা নিতে চেয়েছিল এবং জিহাদ বা হিজরত করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তাই, তিনি ব্রিটিশ ভারতকে দারুল হারব ("যুদ্ধের আবাস") হিসাবে চিহ্নিত করার বিরোধিতা করেছিলেন, যার অর্থ ছিল যে ভারত থেকে পবিত্র যুদ্ধ চালানো এবং দেশান্তর করা অগ্রহণযোগ্য কারণ তারা সম্প্রদায়ের বিপর্যয় ঘটাবে। খানের এই দৃষ্টিভঙ্গি অন্যান্য সংস্কারক সৈয়দ আহমদ খান এবং উবায়দুল্লাহ আল উবাইদী সোহরাওয়ার্দীর মতই ছিল।

মুসলিম লীগ পাকিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে মুসলিম জনসাধারণকে সংগঠিত করেছিল, এবং খানের অনেক অনুসারী শিক্ষা ও রাজনৈতিক ফ্রন্টে পাকিস্তান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। [১০]

ব্রিটিশদের অবজ্ঞা

আহমদ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সাথে ঐক্য করতে অস্বীকার করেন। যদিও তিনি ভারতে তাদের দখলদারিত্বের সময় ব্রিটিশ আদালতকে স্বীকার করতে অস্বীকার করেছিলেন, তার নিজের এক ছাত্রের জন্য প্রার্থনা করতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন কারণ এটি পরোক্ষভাবে ব্রিটিশদের উপকার করতে পারে এবং এমনকি তিনি অসম্মানের চিহ্ন হিসাবে চিঠিগুলিতে ডাকটিকিট উল্টে দিতেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরপ্রধান পাতাবাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকাআনন্দবাজার পত্রিকাবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগবাংলাদেশএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)রবীন্দ্রজয়ন্তীশেখ মুজিবুর রহমানআবহাওয়াভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৪৫বাংলা ভাষাকাজী নজরুল ইসলামরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধছয় দফা আন্দোলনমিয়া খলিফাপহেলা বৈশাখমুহাম্মাদ২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপক্লিওপেট্রাবাংলা ভাষা আন্দোলনমৌলিক পদার্থের তালিকাইউটিউব২০২১ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনপশ্চিমবঙ্গবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহভারতদৈনিক প্রথম আলোভূমি পরিমাপসাইবার অপরাধশিল্প বিপ্লবআসসালামু আলাইকুমবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী