অরসন ওয়েলস

জর্জ অরসন ওয়েলস (ইংরেজি: George Orson Welles) (৬ই মে, ১৯১৫ - ১০ই অক্টোবর, ১৯৮৫) ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, লেখক এবং প্রযোজক। তিনি মঞ্চ নাটক, রেডিও এবং চলচ্চিত্রে প্রায় সমান তালে কাজ করেছেন। তিনটি মিডিয়াতেই অনন্য এবং উদ্ভাবনী কাজের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তার ব্রডওয়েতে মঞ্চায়িত নাটক সিজার (১৯৩৭) বিপুল প্রশংসা অর্জন করেছিল এবং এখনও এটি শেকসপিয়রের জুলিয়াস সিজার নাটকের অন্যতম উৎকৃষ্ট মঞ্চায়ন হিসেবে স্বীকৃত। এই নাটকের মাধ্যমেই মার্কারি থিয়েটার যাত্রা শুরু করেছিল। তার বেতার অনুষ্ঠান দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস যুক্তরাষ্ট্রের বেতার সম্প্রচারের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর তার সিটিজেন কেইন (১৯৪১) সিনেমাকে অনেক সমালোচক ও পণ্ডিত সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

অরসন ওয়েলস
১৯৩৭ সালে ওয়েলস (বয়স ২১)
চিত্রটি ধারণ করেছেন কার্ল ভ্যান ভেকটেন
জন্ম
জর্জ অরসন ওয়েলস

(১৯১৫-০৫-০৬)৬ মে ১৯১৫
কেনুসা, ওয়েসকনসিন, যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যু১০ অক্টোবর ১৯৮৫(1985-10-10) (বয়স ৭০)
লস এন্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুর কারণহৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে
সমাধিরোন্ডা, স্পেন
জাতীয়তামার্কিন
নাগরিকত্বযুক্তরাষ্ট্র
মাতৃশিক্ষায়তনটড স্কুল ফর বয়েজ
পেশাঅভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, মঞ্চনাট্য পরিচালক, কাহিনীকার, প্রযোজক, রেডিও ব্যক্তিত্ত
কর্মজীবন১৯৩১-৮৫
উচ্চতা৬'-১"
দাম্পত্য সঙ্গীভিরজিনিয়া নিকলসন (১৯৩৪-৪০)
রিতা হেওর্থ (১৯৪৩-৪৮)
পাওলা মুরি (১৯৫৫-৮৫)
সঙ্গীডোলরেস ডেল রিও (১৯৩৮-৪১)
ওজা কোদার (১৯৬৬-৮৫)
পিতা-মাতারিচার্ড হসডন হেড ওয়েলস, ব্যাট্রিক আইভিস
পুরস্কার১৪তম অ্যাকাডিমি পুরস্কার (১৯৪১) শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের জন্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার (সিটিজেন কেনি)
৪৩তম অ্যাকাডেমি পুরস্কার অ্যাকাডেমি অনারারি পুরস্কার
স্বাক্ষর

সিজার ছাড়াও যুবক বয়সে অনেকগুলো অতি উঁচু মানের সফল মঞ্চ নাটক পরিচালনা করেছিলেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ-এর একটি অভিনব মঞ্চায়ন এবং দ্য ক্র্যাডল উইল রক। ১৯৩৮ সালে এইচ জি ওয়েলস-এর দ্য ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস উপন্যাস অবলম্বনে করা বেতার অনুষ্ঠান দিয়েই নিজের দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশে পরিচিত হয়ে উঠেন। আসলে তার প্রতিষ্ঠিত মার্কারি থিয়েটারের বিভিন্ন নাটক সরাসরি রেডিওতে সম্প্রচার করা হতো মার্কারি থিয়েটার অন দি এয়ার নামে। এই ধারাবাহিকেরই একটি পর্ব ছিল ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস। সম্প্রচারের পর কেউ কেউ রিপোর্ট করেছিলেন এই অনুষ্ঠান নাকি অনেক স্থানে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে কারণ শ্রোতারা ভেবে বসেছিলেন আসলেই ভিনগ্রহের অধিবাসীরা পৃথিবী আক্রমণ করেছে। প্রচারণাটি অতিরঞ্জিত হলেও এর কারণে অরসন ওয়েলসের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।[২]

ওয়েলসের প্রথম সিনেমাই ছিল সিটিজেন কেইন যার সহলেখক, প্রযোজক, পরিচালক এবং প্রধান অভিনেতা সবই তিনি নিজে। সিনেমায় তার চরিত্রের নাম ছিল চার্লস ফস্টার কেইন। প্রথম সিনেমাই সর্বকালের সেরা সিনেমা হিসেবে স্বীকৃত হলেও ওয়েলস জীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই চলচ্চিত্র স্টুডিওতে একজন বহিরাগত ছিলেন। জীবনে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করেছেন মাত্র ১৩ টি। স্টুডিওর বিরুদ্ধে শৈল্পিক স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে খুব বেশি সফলতা পাননি কারণ তার অধিকাংশ সিনেমাই স্টুডিওতে অনেক সম্পাদনার শিকার হয়েছে এবং কিছু আবার কখনোই প্রেক্ষাগৃহের মুখ দেখতে পায়নি। তার অনন্য পরিচালনার পদ্ধতির মধ্যে ছিল লেয়ারভিত্তিক ও অরৈখিক গড়ন, আলোকসজ্জার খুব উদ্ভাবনী ব্যবহার, ক্যামেরার প্রথাবিরুদ্ধ অ্যাংগেল, বেতার থেকে ধার করা শব্দ সংযোগ, ডিপ ফোকাস শট এবং লং টেক। তাকে সৃজনশীলতার প্রবাদপুরুষ এবং সিনেমার ইতিহাসে সেরা ওটার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৩] সিটিজেন কেইনের পর করা তার অন্যান্য বহুল প্রশংসিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে দ্য ম্যাগণিফিসেন্ট অ্যাম্বারসনস (১৯৪২), টাচ অফ ইভিল (১৯৫৮) ইত্যাদি।

২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট চলচ্চিত্র সমালোচক ও পরিচালকদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রকারদের তালিকা তৈরি করে যেখানে অরসন ওয়েলসকে দেয়া হয় প্রথম স্থান।[৪][৫] এছাড়া আরও অনেক সমালোচকদের জরিপ ও তালিকায় তাকে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রকার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[৬] সিনেমায় অভিনেতা হিসেবেও তিনি বিশেষ নাম কুড়িয়েছিলেন। অনেক সিনেমার মুখ্য চরিত্রে নিজেই অভিনয় করতেন। তার গলার মন্দ্রস্বরটি সবার বেশ পরিচিত ছিল। অ্যামেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট সর্বকালের সেরা মার্কিন অভিনেতাদের তালিকায় তাকে ১৬তম অবস্থানে রেখেছে। এছাড়া মঞ্চে শেক্সপিয়ারীয় অভিনেতা হিসেবে তার খ্যাতি ছিল, পাশাপাশি আবার জাদুকর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলোতে ভ্যারাইটি শো দলের সাথে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে জাদু দেখিয়ে বেড়াতেন।

চলচ্চিত্রসমূহ সম্পাদনা

এখানে কেবল তার পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহের তালিকা দেয়া হল। এছাড়া যেসব সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যেগুলো শেষ পর্যন্ত শেষ করতে পারেননি, যেগুলো মুক্তি পায়নি বা অন্য যেসব সিনেমায় তার কোন না কোন ভূমিকা ছিল তা জানতে ইংরেজি উইকিপিডিয়ার এই নিবন্ধ বা আইএমডিবি দেখা যেতে পারে।

মুক্তির সনচলচ্চিত্রের নামলাতিন বর্ণমালায়জঁরামন্তব্য
১৯৩৪দ্য হার্টস অফ এইজThe Hearts of Ageস্বল্পদৈর্ঘ্যপরাবাস্তববাদ প্রভাবিত ৮ মিনিটের সিনেমা
১৯৪১সিটিজেন কেইনCitizen Kaneড্রামাঅরৈখিক কাহিনী, সর্বকালের সেরা সিনেমা হিসেবে স্বীকৃত
১৯৪২দ্য ম্যাগিনিফিসেন্ট অ্যাম্বারসনসThe Magnificent Ambersonsড্রামাবুথ টার্কিংটনের উপন্যাস থেকে। ওয়েলসের অসম্মতিতে স্টুডিও অনেক সম্পাদনা করেছে
১৯৪৬দ্য স্ট্রেঞ্জারThe Strangerনোয়া চলচ্চিত্রবিশ্বযুদ্ধের পর নির্মীত প্রথম সিনেমা যাতে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের ফুটেজ দেখানো হয়েছে
১৯৪৭দ্য লেডি ফ্রম শাংহাইThe Lady from Shanghaiনোয়াশেরউড কিং এর উপন্যাস থেকে। ডেভিড কারের মতে "the weirdest great movie ever made"[৭]
১৯৪৮ম্যাকবেথMacbethশেকস্‌পিয়রীয় ড্রামাওয়েলস এই সিনেমাকে নিজের উৎকৃষ্ট কাজ মনে করতেন না[৮]
১৯৫২ওথেলোOthelloশেকস্‌পিয়রীয় ড্রামামরক্কো ও ইতালিতে শুটিং। শেষ করার জন্য ওয়েলসকে নিজের অভিনয় থেকে পাওয়া অর্থ খরচ করতে হয়েছে[৯]
১৯৫৫মিস্টার আর্কাডিনMr. Arkadinমনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে স্পেনে শুটিং। ওয়েলস এটাকে জীবনের সেরা ডিজাস্টার বলেছেন কারণ ক্রিয়েটিভ কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলেন[১০]
১৯৫৮টাচ অফ ইভিলTouch of Evilক্রাইম থ্রিলার, নোয়ানোয়া সিনেমার ক্লাসিক যুগের শেষ সিনেমা[১১]
১৯৫৮দ্য ফাউন্টেইন অফ ইয়ুথThe Fountain of Youthস্বল্পদৈর্ঘ্যএকটি প্রস্তাবিত টিভি সিরিজের পাইলট যে সিরিজ শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়[১২]
১৯৬২দ্য ট্রায়ালThe Trialডিস্টোপিয়ানফ্রানৎস কাফকার উপন্যাস থেকে। কখনোই এর কোন কপিরাইট ছিল না, তাই পাবলিক ডোমেইনে আছে
১৯৬৫চাইমস অ্যাট মিডনাইটChimes at Midnightশেকস্‌পিয়রীয় ড্রামাশেকস্‌পিয়রের বিভিন্ন নাটকের চরিত্র স্যার জন ফলস্টাফ কে নিয়ে
১৯৬৮দি ইমমর্টাল স্টোরিThe Immortal Storyটেলিভিশনের জন্যডেনীয় সাহিত্যিক Karen Blixen এর গল্প থেকে ফরাসি চলচ্চিত্র যা ফরাসি টিভিতে প্রদর্শিত হয়েছিল
১৯৭৪এফ ফর ফেইকF for Fakeপ্রামাণ্য চিত্র বা ফিল্ম প্রবন্ধপেশাদার আর্ট নকলকারী Elmyr de Hory-এর জীবনী নিয়ে আধা প্রামাণ্য সিনেমা
১৯৭৮ফিল্মিং ওথেলোFilming Othelloটেলিভিশন প্রামাণ্য চিত্রপশ্চিম জার্মান টিভির জন্য, তার ওথেলো সিনেমার নির্মাণ নিয়ে

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Brady, Frank (১৯৮৯)। Citizen Welles: A Biography of Orson Welles। Scribner। পৃষ্ঠা 576আইএসবিএন 0-684-18982-8 
  2. Little green men, meowing nuns, and head-hunting panics। McFarland। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৩০, ২০১০ 
  3. Rosenbaum, Jonathan. Discovering Orson Welles. Berkeley and Los Angeles, California: University of California Press. 2007. Pp. 6.
  4. "Sight & Sound |Top Ten Poll 2002 – The Directors' Top Ten Directors"। BFI। সেপ্টেম্বর ৫, ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৩০, ২০০৯ 
  5. "Sight & Sound |Top Ten Poll 2002 – The Critics' Top Ten Directors"। BFI। সেপ্টেম্বর ৫, ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৩০, ২০০৯ 
  6. "TSPDT – The 1,000 Greatest Films: The Top 200 Directors" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে. They Shoot Pictures, Don't They? Theyshootpictures.com. January 2010. Retrieved January 27, 2011.
  7. শিকাগো রিডারে ডেভিড কারের রিভিউ
  8. Cowie, Peter. "The Cinema of Orson Welles."1978, A.S. Barnes & Co.
  9. Filming Othello, ওয়েলস নেট ডট কম
  10. Interview with Orson Welles, 1982, Arena, BBC Television
  11. Tim Dirks, Film Noir, AMC Filmsite
  12. Holden, Stephen। "New York Times: The Fountain of Youth"NY Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানছয় দফা আন্দোলন২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরশেখ মুজিবুর রহমানকাজী নজরুল ইসলামভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪বাংলাদেশবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধমহাত্মা গান্ধীক্লিওপেট্রা২০২৪ কোপা আমেরিকাবাংলা ভাষা আন্দোলনএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বিশ্ব দিবস তালিকাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাসুন্দরবননরেন্দ্র মোদীমৌলিক পদার্থের তালিকাআবহাওয়াসাইবার অপরাধইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনপহেলা বৈশাখঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরমিয়া খলিফাইন্দিরা গান্ধীভারতবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহপদ্মা সেতুকামরুল হাসানভূমি পরিমাপব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলবায়ুদূষণপশ্চিমবঙ্গবাংলা ভাষাভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ