নাস্তিক্যবাদ (অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) (ইংরেজি: Atheism) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। মূলত আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়।[৫]

এথিয়েস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক অনুমোদিত নাস্তিক্যবাদের প্রতীক। [১][২]
পারমাণবিক ঘূর্ণি , আমেরিকান এথিয়েস্টস কর্তৃক অনুমোদিত নাস্তিক্যবাদের প্রতীক।[৩][৪]

নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য।[৬]শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি বিশ্বাস কে ভ্রান্ত বলে তারা স্বীকার করে। দিনদিন মুক্তচিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং ধর্মসমূহের সমালোচনা বৃদ্ধির সাথে সাথে নাস্তিক্যবাদেরও প্রসার ঘটছে।অষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম কিছু মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয়। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার ২.৩% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯% মানুষ কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করে না।[৭] জাপানের ৩১% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয়।[৮][৯] রাশিয়াতে এই সংখ্যা প্রায় ১৩% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর দেশগুলোতে ১২% নাস্তিক, (৬% শুধুমাত্র ইতালিতেই) থেকে শুরু করে ৪৬% থেকে ৮৫% (সুইডেন) মত।[৮]

পশ্চিমের দেশগুলোতে নাস্তিকদের সাধারণ ভাবে ধর্মহীন বা পারলৌকিক বিষয় সমূহে অবিশ্বাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু ধর্মের দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং প্রকৃতিবাদ, বস্তুবাদ ইত্যাদি দর্শনে বিশ্বাস করে। নাস্তিকরা মূলত কোনো বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ, যেকোনো মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে, নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা।

প্রকারভেদ এবং সংজ্ঞা

লেখকরা নাস্তিকতা শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা কী হবে তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌছাতে পারেন নি।[১০] অতিপ্রাকৃত সত্তাকে কি ঈশ্বর হিসেবে ধরা হবে, তাকে অবিশ্বাস করলেই কি তা নাস্তিকতা হবে, সুস্থ মানসিকতা থেকে, সজ্ঞানে ঐশ্বরিক ধারণা প্রত্যাখান করলেই কি ব্যক্তি নাস্তিক হবে, এইবিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছে। নাস্তিকতা সংশয়বাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ,[১১][১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭] এবং কেউ কেউ এর মধ্যে পার্থক্যও করেছে।[১৮][১৯][২০] নাস্তিকতার বিভিন্ন রূপভেদের মধ্যে পার্থক্যকরণের জন্য বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ তৈরী করা হয়েছে।

দেবতা এবং ঈশ্বর এই শব্দদ্বয়ের সংজ্ঞায় ঐকমত্যে না আসতে পারার জন্য নাস্তিকতাকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে কিছু অস্পষ্টতা এবং বিতর্ক তৈরি হয়। প্রাচীন রোমের অধিবাসীরা খ্রিষ্ঠানদের প্যাগান দেবতার পুজো না করায় নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেছিল। ধীরে ধীরে নাস্তিকতা নিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন আসে, যেহেতু বিশ্বাসবাদ এখন সুনির্দিষ্ট বিশ্বাসে আটকে নেই, বরং যেকোনো ঐশ্বরিক শক্তিতে বিশ্বাসই এখন বিশ্বাস বলে গণ্য হয়।[২১]

অর্থাৎ নাস্তিকতা মানে এখন কোনো সুনির্দিষ্ট বিশ্বাসের সমালোচনা নয়, বরং সমস্ত ধর্ম যা আধ্যাত্মিকতা বা অলৌকিকতা নিয়ে কাজ করে বা বিশ্বাস করে, তার বিরোধিতা করা।[২২]

প্রত্যক্ষ বনাম পরোক্ষ

ব্যক্তিভেদে নাস্তিকতার সংজ্ঞা ভিন্নরূপ হতে পারে। নাস্তিকতাকে কখনো সংজ্ঞায়িত করা হয় এমনভাবে যে, যে ব্যক্তি যেকোনো প্রকার দৈব শক্তিতে অবিশ্বাস করছে, এমনটা হলেই তিনি নাস্তিক। এই বিস্তৃত সংজ্ঞা নবজাত শিশু বা সেসব লোকের জন্যও প্রযোজ্য যারা কোনোরুপ ধর্মবিশ্বাসের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায় নি। ১৭৭২ সালে ব্যারন ডি হলব্যাচ বলেন, "সব শিশুই নাস্তিক হয়ে জন্মগ্রহণ করে।"[২৩]

একইভাবে, জর্জ এইচ স্মিথ (১৭৭৯) বলেন: "যে ব্যক্তি বিশ্বাস করতে হয়, এমন ধর্মের সাথে পরিচিত নয়, সে নাস্তিক। কারণ সে তো ঈশ্বরে বিশ্বাস করছে না। অর্থাৎ এই শ্রেণিতে একজন শিশুও অন্তর্ভুক্ত কারণ সেও ঈশ্বর সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নয় এবং যেহেতু একজন শিশু ঈশ্বরে বিশ্বাস করছে না, তাই সে নাস্তিক হিসেবেই বিবেচ্য।"[২৪] "স্বজ্ঞানহীন নাস্তিকতা" মানে হল কোন ধর্ম বিশ্বাসকে অসচেতন ভাবে প্রত্যাখ্যান করা এবং" স্বজ্ঞান নাস্তিকতা" মানে হল কোন ধর্ম বিশ্বাসকে সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করা। আর্নেস্ট নাগেল তার "ফিলোসফিক্যাল এথিজম" নামক নিবন্ধে ঈশ্বরবাদী বিশ্বাসের কিছুমাত্র অনুপস্থিতিকেই নাস্তিকতার একটি প্রকরণ বলে উল্লেখ করেন।[২৫] তবে গ্রাহাম অপ্পি যেসব মানুষ ঈশ্বর সম্বন্ধে অজ্ঞাত, তাদের নাস্তিক বলতে নারাজ ছিলেন। তার মতে একমাসের বাচ্চা, মস্তিষ্কে তীব্র আঘাত, ডেমেনটিয়ায় আক্রান্ত অসুস্থ মানুষের ঈশ্বর কী এই বিষয়ে বুঝার সক্ষমতা নেই। তাই তিনি তাদের নাস্তিক শব্দের পরিবর্তে নিরীহ বলে উল্লেখ করেন।[২৬]

ইতিবাচক বনাম নেতিবাচক

মাইকেল মার্টিন [২১] এবং এন্থনি ফ্লিউয়ের মতো দার্শনিক[২৭] ইতিবাচক (শক্তিশালী/দৃঢ়) এবং নেতিবাচক নাস্তিকতার (দুর্বল/নরম) মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেন। ইতিবাচক নাস্তিক্যবাদ হলো ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই একথাটি সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করে নেওয়া এবং সকল প্রকার বিশ্বাস হীনতাই হলো নেতিবাচক নাস্তিক্যবাদ। এই শ্রেণিবিভাগ মতে যে ব্যক্তি বিশ্বাসী নয় সে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক উভয়ের মধ্যে যেকোনো রূপ নাস্তিক হতে পারে। নাস্তিকতার পদবাচ্যে "দুর্বল" এবং দৃঢ় নাস্তিকতা যদিও আধুনিক একটি শব্দ কিন্তু নেতিবাচক অথবা ইতিবাচক নাস্তিক্যবাদ শব্দদ্বয়ের উত্থান ঘটেছে বহু পূর্বে যা ব্যবহৃত হয়েছে একটু ভিন্নভাবে হলেও দার্শনিক দর্শনভিত্তিক সাহিত্যে[২৭] এবং ক্যাথলিক এপলোজেটিক্সে ব্যবহৃত হয়েছে।[২৮] নাস্তিকতার এই সীমানা নির্ধারণের কারণে বেশিরভাগ সংশয়বাদী নিজেদের নেতিবাচক নাস্তিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরুপ, মাইকেল মার্টিন সংশয়বাদকে নেতিবাচক নাস্তিকতার ফলাফল ধরলেও,[১৪] many agnostics see their view as distinct from atheism,[২৯][৩০]which they may consider no more justified than theism or requiring an equal conviction.[২৯]The assertion of unattainability of knowledge for or against the existence of gods is sometimes seen as an indication that atheism requires a leap of faith.[৩১][৩২]Common atheist responses to this argument include that unproven religious propositions deserve as much disbelief as all other unproven propositions,[৩৩]and that the unprovability of a god's existence does not imply equal probability of either possibility.[৩৪]Australian philosopher J.J.C. Smart even argues that "sometimes a person who is really an atheist may describe herself, even passionately, as an agnostic because of unreasonable generalized philosophical skepticism which would preclude us from saying that we know anything whatever, except perhaps the truths of mathematics and formal logic."[৩৫]Consequently, some atheist authors such as Richard Dawkins prefer distinguishing theist, agnostic and atheist positions along a spectrum of theistic probability—the likelihood that each assigns to the statement "God exists".[৩৬]

নাস্তিকতা বনাম ধর্ম

আঠারো শতকের পূর্বে ঈশ্বরের অস্তিত্ব পশ্চিমা সমাজে এতটাই স্বীকৃত ছিল যে, এমন কি প্রকৃত নাস্তিকতাই সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এ বিষয়টিকে বলা হত জন্মগত বিশ্বাসী। এর মানে হলো মানুষ জন্মগত ভাবেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং নাস্তিকতা সেখানে সহজাতভাবেই প্রত্যাখাত একটি বিষয় ছিল।[৩৭]

সাধারণ মানুষের একপক্ষ আবার নাস্তিকদের নিয়ে একটি বিশেষ ধারণা পোষণ করতো। তাদের দাবী অনুসারে একজন নাস্তিক তীব্র বিপদের সময় হঠাৎই ঈশ্বরে বিশ্বাস নিয়ে আসে, তারা মৃত্যু কালীন সময়ে ধর্মান্তরিত হয় এবং চরম বিপদ যেমনঃ দুর্যোগ বা "যুদ্ধকালীন সময়ে কোনো নাস্তিকই নাস্তিক থাকে না"।[৩৮] পক্ষান্তরে তীব্র দুর্যোগের মুহুর্তেও যে মানুষ নাস্তিক থাকতে পারে, এরূপ উদাহরণও আছে।[৩৯]

কিছু নাস্তিক নাস্তিকতাবাদের খুব বেশি প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। স্যাম হ্যারিস তার বই লেটার টু অ্যা ক্রিশ্চিয়ান নেশনে লিখেন:

প্রকৃতপক্ষে, "নাস্তিকতাবাদ" হচ্ছে এমন একটি পদবাচ্য, যার অস্তিত্বই থাকা উচিত না। কেওই নিজেকে "আমি জ্যোতিষ নই" বা "আমি আলকেমিস্ট নই" এই মর্মে অভিহিত করেন না। যেসব ব্যক্তি সন্দেহ করে এলভিস [একজন আমেরিকান সংগীত শিল্পী] এখনো জীবিত থাকতে পারে অথবা এলিয়েনরা হাতের ছোয়ায় এই মহাবিশ্বকে তাদের গোয়ালের প্রাণী বানিয়ে রাখবে, তাদের জন্য শব্দ খরচ করার মত শব্দ আমাদের নেই। যে ধর্মের সত্যতা নির্ধারণ করা যায় না, এজাতীয় ধর্মের বিপরীতে যুক্তিবাদী ব্যক্তির যে কোনো শব্দই নাস্তিক্যবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বতন্ত্রভাবে নাস্তিক্যবাদ শব্দটির আমদানী অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার মাত্র।"[৪০]

ব্যুৎপত্তি

গ্রীক শব্দ αθεοι (atheoi) তৃতীয় শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইফিষীয়দের ২:১২ প্যাপিরাস ৪৬-এ দেখা যায়। এর ইংরেজি অনুবাদ হলো "(যারা) ঈশ্বর বিহীন।"[৪১]

প্রারম্ভিক প্রাচীন গ্রিক ভাষায়, বিশেষণ átheos ( ἄθεος, ব্যক্তিগত ἀ- + θεός থেকে "ঈশ্বর") অর্থ "ঈশ্বরহীন"। এটি প্রথমে কুৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো, মোটামুটিভাবে যার অর্থ ছিলো "অধার্মিক" বা "অপরাধী"। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে, শব্দটি "ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা" বা "ঈশ্বরকে অস্বীকার করা" অর্থে অধিক ইচ্ছাকৃত এবং সক্রিয় ঈশ্বরহীনতা নির্দেশ করতে শুরু করে। এরপর ἀσεβής ( asebēs ) শব্দটি যারা স্থানীয় দেবতাদের অসম্মান করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছিলো। এমনকি তারা অন্য দেবদেবীতে বিশ্বাস করলেও এই শব্দটি প্রয়োগ করা হতো। ধ্রুপদী পাঠ্যের আধুনিক অনুবাদগুলো কখনও কখনও átheos কে "atheistic" বা নিরীশ্বরবাদী হিসেবে অভিহিত করে। একটি বিমূর্ত বিশেষ্য হিসাবে, ἀθεότης ( atheotēs) ব্যবহৃত হতো যার অর্থ , "নাস্তিকতা"। সিসেরো গ্রীক শব্দটিকে ল্যাটিন átheos-এ লিপিবদ্ধ করেন। প্রারম্ভিক খ্রিস্টান এবং হেলেনিস্টদের মধ্যে বিতর্কে শব্দটি নিয়মিত ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায় , যেখানে প্রতিটি পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করতো। [৪২]

ইংরেজি "এথিস্ট" শব্দটি এসেছে (ফরাসী athée) থেকে, যার অর্থ "সে সব মানুষ, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রত্যাখান করে",[৪৩] ইংরেজিতে এই শব্দের ব্যবহার খুঁজে পাওয়া যায় ১৫৬৬ সালের পূর্বভাগে,[৪৪] এবং ১৫৭১ সালে।[৪৫] এথিস্ট শব্দটি ব্যবহারিক ভাবে ঈশ্বরবিহীন আখ্যা হিসেবে ১৫৭৭ সালে।[৪৬] ইংরেজি এথিজম পদবাচ্য এসেছে ফরাসি athéisme,[৪৭] থেকে এবং ইংরেজিতে ১৫৮৭ সালে তা প্রতীয়মান হয়।[৪৮] ১৫৩৪ সালে একটি এথিওনিজম হিসেবে একটি বিষয়ে নাস্তিক্যবাদকে প্রকাশ করা হয়েছিল।[৪৯][৫০] সমসাময়িক শব্দ হিসেবে: ১৬২১ সালে শ্বরবাদী,[৫১] ১৬৬২ সালেআস্তিক্যবাদ,[৫২] ১৬৭৫ সালেশ্বরবাদ,[৫৩] এবং ১৬৭৮ সালে আস্তিক্যবাদ পদবাচ্যের উদ্ভব হয়।[৫৪] সেইসময় "শ্বরবাদ" এবং "শ্বরবাদী" পদব্যাচ্যের আধুনিক অর্থ উদ্ভূত হয়। আস্তিক্যবাদের সাথে শ্বরবাদের পার্থক্য এভাবেই উৎসররিত হয়।

ক্যারেন আর্মস্ট্রং লিখেছেন যে, "১৬ এবং সতেরো শতকে নাস্তিক্যবাদ শব্দটি শুধুমাত্র সম্পূর্ণভাবে বিতর্কিত তর্কশাস্ত্রীয় ছিল… সেসময় নাস্তিক্যবাদ পদবাচ্য টি একপ্রকার অপমানজনক শব্দ ছিল এবং কেউই নিজেকে নাস্তিক হিসেবে অভিহিত করার কথা স্বপ্নেও ভাবত না।"[৫৫]

নিজেকে নাস্তিক হিসেবে অভিহিত করার প্রথম ধাপ শুরু হয় ইউরোপে ১৮ শতকের শেষভাগে। সেসময় বিশেষত একেশ্বরবাদী আব্রাহামিক ঈশ্বরের প্রতি যে অবিশ্বাস তা প্রকাশ করাই ছিল নাস্তিকতা।[৫৬] বিশ শতকে বিশ্বায়নের মাধ্যমের এই শব্দের ব্যাপক বিস্তৃতির জন্য এর অর্থ দাঁড়ায় সর্বপ্রকার দৈবশক্তিতে অবিশ্বাস। যদিও বর্তমানে পশ্চিমা সমাজে শুধুমাত্র "ঈশ্বরে অবিশ্বাস"কেই সাধারণত নাস্তিক্যবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[২১]

ধর্ম ও নৈতিকতা

ধর্মের সমালোচনা

কিছু প্রখ্যাত নাস্তিক সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিস্টোফার হিচেন্স, ড্যানিয়েল ডেনেট, স্যাম হ্যারিস, এবং রিচার্ড ডকিন্স, তাদের পূর্বসুরী বার্ট্রান্ড রাসেল, রবার্ট জি ইনগ্রেসোল, ভলতেয়ার ও ঔপন্যাসিক জসে সারামাগো—ধর্মের সমালোচনা করেছেন। ধর্মীয় মতবাদ এবং ধর্মের চর্চাকে ক্ষতিকারক ও হীনকর বলে উদ্ধৃত করেন।[৫৭]

কার্ল মার্ক্স

১৯ শতকে জার্মান রাজনৈতিক তাত্ত্বিক এবং সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্ক্স ধর্মকে "নির্যাতিতের দীর্ঘশ্বাস হিসেবে, হৃদয়হীনের হৃদয় হিসেবে, এবং আত্মাহীন অবস্থার আত্মা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ধর্মকে জনগণের আফিম" হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "The abolition of religion as the illusory happiness of the people is the demand for their real happiness. To call on them to give up their illusions about their condition is to call on them to give up a condition that requires illusions. The criticism of religion is, therefore, in embryo, the criticism of that vale of tears of which religion is the halo."[৫৮] Lenin said that "every religious idea and every idea of God is unutterable vileness ... of the most dangerous kind, 'contagion' of the most abominable kind. Millions of sins, filthy deeds, acts of violence and physical contagions ... are far less dangerous than the subtle, spiritual idea of God decked out in the smartest ideological costumes ..."[৫৯]

Sam Harris criticizes Western religion's reliance on divine authority as lending itself to authoritarianism and dogmatism.[৬০]There is a correlation between religious fundamentalism and extrinsic religion (when religion is held because it serves ulterior interests)[৬১] and authoritarianism, dogmatism, and prejudice.[৬২]These arguments—combined with historical events that are argued to demonstrate the dangers of religion, such as the Crusades, inquisitions, witch trials, and terrorist attacks—have been used in response to claims of beneficial effects of belief in religion.[৬৩]Believers counter-argue that some regimes that espouse atheism, such as the Soviet Union, have also been guilty of mass murder.[৬৪][৬৫] এর প্রতিক্রিয়ায় স্যাম হ্যারিস এবং রিচার্ড ডকিন্স বলেন, স্ট্যালিন যে নৃশংসতা চালিয়েছে তা কখনোই নাস্তিক্যবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চালায় নি, সে মার্ক্সবাদী তত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত হওয়ায় এ নৃশংসতা সংগঠিত করেছে। স্ট্যালিন এবং মাও যদিও নাস্তিক, কিন্তু তারা তাদের কৃতকর্ম কখনোই নাস্তিক্যবাদের নাম ব্যবহার করে করে নি।[৬৬][৬৭] তাই তাদের কৃতকর্মের ভার কখনোই নাস্তিক্যবাদের উপর পড়বে না।

ইতিহাস

নব-নাস্তিক্যবাদ

একবিংশ শতাব্দীতে কয়েকজন নাস্তিক গবেষক ও সাংবাদিকের প্রচেষ্টায় নাস্তিক্যবাদের একটি নতুন ধারা বেড়ে উঠেছে যাকে "নব-নাস্তিক্যবাদ" বা "New Atheism" নামে ডাকা হয়। ২০০৪ সালে স্যাম হ্যারিসের দি ইন্ড অব ফেইথ: রিলিজান, টেরর, এন্ড দ্যা ফিউচার অব রিজন বইয়ের মাধ্যমে নব-নাস্তিক্যবাদের যাত্রা শুরু হয়েছে বলে মনে করেন আরেক প্রখ্যাত নব-নাস্তিক ভিক্টর স্টেংগার। প্রকৃতপক্ষে স্যাম হ্যারিসের বই প্রকাশের পর এই ধারায় আরও ছয়টি বই প্রকাশিত হয় যার প্রায় সবগুলোই নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলারে স্থান করে নিতে সমর্থ হয়। সব মিলিয়ে নিচের বইগুলোকেই নব-নাস্তিক্যবাদী সাহিত্যের প্রধান উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়:

  1. দি এন্ড অব ফেইথ: রিলিজান, টেরর, এন্ড দ্যা ফিউচার অব রিজন (২০০৪) – স্যাম হ্যারিস
  2. লেটার টু এ কৃশ্চিয়ান নেশন (২০০৬) – স্যাম হ্যারিস
  3. দ্যা গড ডিলিউশন (২০০৬)-রিচার্ড ডকিন্স
  4. ব্রেকিং দ্যা স্পেল: রিলিজান এ্যাজ এ ন্যাচারাল ফেনোমেনন (২০০৬) – ড্যানিয়েল ডেনেট
  5. গড: দ্যা ফেইলড হাইপোথিসিস- হাউ সাইন্স শোজ দ্যাট গড ডাজ নট এক্সিস্ট (২০০৭)- ভিক্টর স্টেংগার
  6. গড ইজ নট গ্রেট: হাউ রিলিজান পয়জনস এভরিথিং (২০০৭) – ক্রিস্টোফার হিচেন্স
  7. দ্যা নিউ এইথিজম (২০০৯) – ভিক্টর স্টেংগার

শেষোক্ত বইয়ে ভিক্টর স্টেংগার এই ব্যক্তিদেরকেই নব-নাস্তিক্যবাদের প্রধান লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উল্লেখ্য, নব-নাস্তিকেরা ধর্মের সরাসরি বিরোধিতা করেন। তারা ধর্মকে প্রমাণবিহীন বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করেন এবং এ ধরনের বিশ্বাসকে সমাজে যে ধরনের মর্যাদা দেয়া হয় সেটার কঠোর বিরোধিতা করেন।[৬৮]

পরিসংখ্যান

পুরো বিশ্বজুড়েই নাস্তিক এবং সংশয়বাদীদের অনুপাত(২০০৭)

এককথায় নাস্তিকের সংখ্যা পরিমাপ করা দুরুহ। বিশ্বাস নিয়ে যে পোল করা হয়েছে সেখানকার উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে নাস্তিক ধর্মবিশ্বাসী আধ্যাত্মিক শক্তিতে বিশ্বাসী এসব কিছুকেই ভিন্ন ভিন্ন পদে অঙ্কিত করা হয়েছে।[৬৯] একজন হিন্দু নাস্তিক নিজেকে একইসাথে হিন্দু ও নাস্তিক বলে দাবী করতে পারেন।[৭০] এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ২০১০ সালের জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৯.৬ শতাংশ ধর্মবিশ্বাসহীন এবং ২ শতাংশ নাস্তিক হিসেবে বেড়ে উঠে; যার বিরাট অংশই এশিয়াতে বাস করে। এক্ষেত্রে নাস্তিক্যবাদী ধার্মিক যেমন বৌদ্ধদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।[৭১] ২০০০ থেকে ২০১০ সালে নাস্তিক্যবাদের বাৎসরিক পরিবর্তন হয়েছে ০.১৭%।[৭১] বৃহত্তর পরিসরে একটি পরিমাণ থেকে দেখা গিয়েছে, পৃথিবীজুড়ে ঈশ্বরে অবিশ্বাসীর সংখ্যা ৫০ কোটি থেকে ১১০ কোটির কাছাকাছি।[৭২][৭৩]

বৈশ্বিক উইন-গ্যালোপ ইন্টারন্যাশনাল জরিপ অনুযায়ী, ২০১২ সালে ১৩% উত্তরদাতা "আশ্বস্ত নাস্তিক"।[৭৪] ২০১৫ সালের হিসাবে ১১% আশ্বস্ত নাস্তিক (convinced atheists),[৭৫] and in 2017, 9% were "convinced atheists".[৭৬] ২০১২-এর হিসাব অনুযায়ী, নিজেদের আশ্বস্ত নাস্তিক হিসেবে দেখে এরূপ শীর্ষ ১০ টি দেশ হলোঃ চীন (৪৭%), জাপান (৩১%), চেক প্রজাতন্ত্র (৩০%), ফ্রান্স (২৯%), দক্ষিণ কোরিয়া (১৫%), জার্মানি (১৫%), নেদারল্যান্ডস (১৪%), অস্ট্রিয়া (১০%), আইসল্যান্ড (১০%), অস্ট্রেলিয়া (১০%), এবং আয়ারল্যান্ড (১০%).[৭৭]

ইউরোপ মহাদেশ

Percentage of people in various European countries who said: "I don't believe there is any sort of spirit, God or life force." (2010)[৭৮]

২০১০ সালে ইউরোব্যারোমিটারের পোলে একটি বিবৃতির উপর জরিপ নিয়ে কাজ করা হয়েছিল, বিবৃতিটি ছিল "তুমি ঈশ্বর বা অলৌকিক কোনো কিছুর অস্তিত্বে বিশ্বাস করো না।" এই বিবৃতিটি সমর্থনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল ফ্রান্সে (৪০%), এরপর যথাক্রমে ক্রেজ রিপাবলিক (৩৭%), সুইডেন (৩৪%), নেদারল্যান্ড (৩০%), এস্তোনিয়া (২৯%), জার্মানি (২৭%), বেলজিয়াম (২৭%), যুক্তরাজ্য (২৫%), পোল্যান্ডে (৫%), গ্রিস (৪%), সাইপ্রাস (৩%), মাল্টা (২%), এবং রোমানিয়া (১%), ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবমিলিয়ে ২০% এই বিবৃতি সমর্থন করে।[৭৯] ২০১২ সালে ইউরোব্যারোমিটার পোল থেকে দেখা গিয়েছে ১৬ শতাংশ মানুষ নিজেদের অবিশ্বাসী/সংশয়বাদী এবং ৭ শতাংশ নিজেদের নাস্তিক ভাবে।[৮০]

২০১২ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুযায়ী নাস্তিক এবং সংশয়বাদীদের মোট ১৮ শতাংশ ইউরোপীয় নিজেদের ধর্মহীন বলে দাবী করে।[৮১] একইজরিপ অনুযায়ী ইউরোপের শুধুমাত্র দুইটি দেশে নাস্তিকতার হার সর্বোচ্চ: চেক প্রজাতন্ত্র (৭৫%) এবং এস্তোনিয়া (৬০%).[৮১]

এশিয়া মহাদেশ

নাস্তিকের সংখ্যার ভিত্তিতে চারটি বৃহত্তম দেশ হলো যথাক্রমে: উত্তর কোরিয়া (৭১%), জাপান ৫৭%), হংকং (৫৬%), এবং চীন (৫২%).[৮১]

অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ

অস্ট্রেলীয়া ব্যুরো অব স্ট্যাটিটিক্সের জরিপ অনুযায়ী ৩০ শতাংশ অস্ট্রেলীয়দের কোনো ধর্ম নেই।[৮২]

২০১৩ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ৪২ শতাংশ নিউজিল্যান্ডবাসী নিজেদের ধর্ম নেই বলে দাবী করেছে, ১৯৯১ সালে এই পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশ।[৮৩] নারীর তুলনায় পুরুষ নিজেকে অধিক ধর্মহীন দাবী করেছে।

আমেরিকা মহাদেশ

২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড ভ্যালু সার্ভের জরিপ অনুযায়ী ৪.৪ শতাংশ মার্কিনী নিজেদের, স্বঘোষিত নাস্তিক ভাবেন।[৮৪] যাইহোক, একই জরিপ অনুযায়ী প্রত্যুত্তরে ১১.১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।[৮৪] ১৯৮৪ সালে, যা ছিল ১.১ শতাংশ নাসিক এবং ২.২ শতাংশ ঈশ্বরে অবিশ্বাসী। ২০১৪ সালের পিউ রিসার্চ জরিপ মতে ৩.১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে অভিহিত করেন।[৮৫] ২০১৫ সালে জেনারেল সোশিওলজিক্যাল জরিপ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে নাস্তিক এবং সংশয়বাদীর সংখ্যা ২৩ বছর ধরে প্রায় একই আছে। ১৯৯১ সালে ২ শতাংশ মানুষ নিজেকে নাস্তিক এবং ৪ শতাংশ মানুষ নিজেকে সংশয়বাদী বলে দাবী করে এবং ২০১৪ সালে ৩ শতাংশ মানুষ নিজেকে নাস্তিক ও ৫ শতাংশ মানুষ নিজেকে সংশয়বাদী বলে দাবী করে।[৮৬]

ধর্মহীন

মার্কিন ফ্যামিলী সার্ভের ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী ৩৪ শতাংশ নিজেদের ধর্মের সাথে সংযোগহীন বলে দাবী করেন (২৩ শতাংশ কোনো ধর্মের সাথে সংযোগহীন, ৬ শতাংশ সংশয়বাদী, ৫ শতাংশ নাস্তিক)।[৮৭][৮৮] ২০১৪ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার মতে মার্কিনীদের ২২.৮ শতাংশ নিজেদের কোনো ধর্মের নয় বলে দাবী করেন যার মধ্যে ৩.১ শতাংশ নিজেদের নাস্তিক এবং ৪ শতাংশ সংশয়বাদী বলে দাবী করেন।[৮৯] পিউরিসার্চ মতে ২৪ শতাংশ মানুষ নিজেদের ধর্মহীন ভাবেন।[৯০]

আরব বিশ্ব

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব বিশ্বে নাস্তিকতার হার বাড়ছে।[৯১] সরকারী কর্মকর্তাদের নিয়মিত অভিযান সত্ত্বেও বড় শহর যেমন কায়রোতে নাস্তিকরা ক্যাফে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে মিলিত হয়।[৯১] ২০১২ সালের গ্যালোপ ইন্টারন্যাশন্যাল জরিপ অনুযায়ী ৫ শতাংশ সৌদি নিজেদের "আশ্বস্ত নাস্তিক" বলে অভিহিত করেছে।[৯১] যাইহোক, আরব বিশ্বে খুব কম সংখ্যক তরুণদের নিজস্ব বন্ধুবৃত্তে বা পরিচিতের মধ্যে নাস্তিক আছে। একটি গবেষণা মতে ১% এর কম মরক্কোতে, মিশরে, সৌদি আরব বা জর্ডানে এবং আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত ও প্যালেস্টাইনে ৩ থেকে ৭ শতাংশ নাস্তিক আছে।[৯২] এই দেশগুলোর মানুষকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তারা তাদের স্থানীয় এলাকায় নাস্তিক শব্দটি শুনেছে কিনা, সেখানের শুধুমাত্র ৩ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ জানায় তারা শুনেছে। একমাত্র আরব আমিরাত ব্যতিক্রম সেখানের ৫১ শতাংশ মানুষ শুনেছে।[৯২]

সম্পদ এবং শিক্ষা

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে আমেরিকায় সেক্যুলারিজম এবং নাস্তিক্যবাদের স্তরের সাথে শিক্ষার একটি ইতিবাচক আন্তঃসম্পর্ক জড়িত আছে।[৯৩] বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী নিগেল বারবার মনে করেন, যেসব স্থানের মানুষ নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী মনে করছেন নাস্তিক্যবাদের স্ফুরণ সেখানেই ঘটেছে। যেসব স্থানে মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তিত নয়, স্বাস্থ্য সুবিধা পর্যাপ্তভাবে পায়, দীর্ঘায়ু হন সেখানেই নাস্তিকতার উর্ধ্বগতি হয়। বিপরীতক্রমে উন্নয়নশীল দেশে নাস্তিকতার হার ক্রমহ্রাসমান হয়।[৯৪]

২০০৮ সালের গবেষণামতে গবেষকরা দেখেছেন, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বুদ্ধিমত্তার সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসের নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। ১৩৭ দেশের স্যাম্পলে জাতীয় আইকিউ আর অবিশ্বাস এর আন্তঃসম্পর্ক ০.৬।[৯৫] বিবর্তনীয় মনস্তাত্ত্বিক নিগেল বারবার উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে বলেন, নাস্তিকদের বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য সামাজিক, পরিবেশগত শিক্ষা এবং সম্পদ সংক্রান্ত ফ্যাক্টর দিয়ে ভালভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং এসব কিছুই ধর্মীয় বিশ্বাস হ্রাসের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত। ধর্ম বেকুবি তৈরি করে; এবিষয়ে তিনি সন্দিহান। তার কারণ অনেক মানুষ আছেন যারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান হওয়া সত্বেও ধার্মিক। কিন্তু একইসাথে তিনি বলেছেন এটাও সম্ভব হতে পারে ধর্মবিশ্বাস প্রত্যাখানের সাথে উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমত্তা একটি সম্পর্ক আছে এবং বুদ্ধিমত্তা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস প্রত্যাখানের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক বেশ জটিল।[৯৬]

২০১৭ সালের গবেষণা মতে, ধার্মিক এবং নাস্তিক এর মধ্যকার তুলনা করলে দেখা যায় নাস্তিকদের বোঝার সক্ষমতাটা অনেক বেশি এর মধ্যকার পার্থক্য বয়স, শিক্ষা, এবং কোন দেশের সেই সামাজিকপরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করেনা অর্থাৎ সমস্ত দেশ বা স্থানে নাস্তিকদের বুঝার সক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে।[৯৭]

নাস্তিকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী

ধর্ম অবমাননা আইন বিশিষ্ট দেশসমূহ
  বাতিল করা হয়েছে
  স্থানীয় বিধিনিষেধ
  জরিমানা এবং বিধিনিষেধ
  কারাদন্ড
  মৃত্যুদন্ড
ধর্মত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রদানকারী দেশসমূহ[৯৮]

পারিসংখ্যানিক ভাবে বিশ্বাস করা হয়, নাস্তিকরা মানসিকভাবে হীন দরিদ্র হয়ে থাকে। বিশ্বাসীরা তো বটেই, এমনকি কিছু নাস্তিক মনে করে, নাস্তিকরা অসৎ চরিত্রের হয়ে থাকে। এই অসৎ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কিরূপ হতে পারে, তার বর্ণনার মধ্যে রয়েছে খুন করা থেকে শুরু করে রেস্তোরায় খাবারের বিল পরিশোধ না করা।[৯৯][১০০][১০১] ২০১৬ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি প্রকাশনা মধ্যে দেখা গিয়েছে যে ফরাসি মানুষদের ১৫%, ৪৫ শতাংশ আমেরিকান এবং ৯৯% ইন্দোনেশীয় বিশ্বাস করে সৎ চরিত্রের অধিকারী হতে হলে অবশ্যই ঈশ্বরে বিশ্বাস করা প্রয়োজনীয়। [১০২]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাআনন্দবাজার পত্রিকাবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগবাংলাদেশএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলা ভাষারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমিয়া খলিফাবিশ্ব বই দিবস২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগআবহাওয়াহনুমান জয়ন্তীরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনঅলিউল হক রুমিচেন্নাই সুপার কিংসশেখ মুজিবুর রহমানলখনউ সুপার জায়ান্টসকাজী নজরুল ইসলামইউটিউবতাপমাত্রাক্লিওপেট্রাভূমি পরিমাপবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতমুহাম্মাদসত্যজিৎ রায়বিকাশজনি সিন্সআসসালামু আলাইকুমছয় দফা আন্দোলনশ্রীকৃষ্ণকীর্তনআডলফ হিটলারচর্যাপদহনুমান চালিশাসহজ পাঠ (বই)হনুমান (রামায়ণ)বর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)